স্বতন্ত্র হয়ে আসছেন মনজুর, ভাতিজা দিদারুলের ‘না’
২৭ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৫১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম। আওয়ামী লীগের সমর্থনে তিনবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়া মনজুর ছিলেন সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবশিষ্য। মহিউদ্দিনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলে তিনি বিএনপিতে ভিড়েছিলেন। কিন্তু পাঁচ বছর পর আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাঁটতে শুরু করেন, যদিও আগের মতো অবস্থান আর তৈরি করতে পারেননি।
কয়েকবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও ব্যর্থ হয়ে এবার এম মনজুর আলম চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, হালিশহর ও পাহাড়তলী) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) নির্বাচন কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
এম মনজুর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন করব— এটা আমি আপনাদের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছি। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকব। আমার মা-ও নেই, বাবাও নেই। আমি এতিম। জনগণই আমার মা-বাপ। জনগণের সঙ্গেই থাকব। ইনশাল্লাহ, মানুষের জন্য কাজ করব, নির্বাচনে জিতে সংসদে যাব। আমার জোর দাবি, নির্বাচনটা যেন সুষ্ঠু হয়।’
আরও পড়ুন- ‘বিরোধ-বিতর্কে’ ছিটকে পড়লেন সামশুল-দিদারুল
শিল্পগোষ্ঠী মোস্তফা হাকিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে আছেন এম মনজুর আলম। চট্টগ্রামে সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য মোস্তফা হাকিম গ্রুপ ও তাদের পরিবারের আলাদা পরিচিতি আছে। তার বাবা আব্দুল হাকিম কন্ট্রাক্টর নগরীর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং নগর কমিটির সদস্য ছিলেন। সে হিসাবে আওয়ামী ঘরানার মনজুর আওয়ামী লীগের সমর্থনে তিনবার নগরীর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
বহুল আলোচিত ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী জরুরি অবস্থার সময় এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রেফতার হলে মনজুর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে মনজুরের নানা কর্মকাণ্ডে মহিউদ্দিনের সঙ্গে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ তৈরি হয়। এরপর গুরু-শিষ্যের পথ আলাদা হয়ে যায়। দূরত্ব ঘোচানোর চেষ্টা করেও সফল না হয়ে মনজুর একসময় আওয়ামী লীগে কোণঠাসা হয়ে পড়েন।
২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে মনজুর চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। কিন্তু নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. আফসারুল আমিনের কাছে হারেন।
আরও পড়ুন- যারা পেলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন [পূর্ণাঙ্গ তালিকা]
এরপর রাজনীতিতে কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থেকে ২০১০ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন আদায় করেন মনজুর। সেই নির্বাচনে তিনি মহিউদ্দিনকে লাখো ভোটের ব্যবধানে হারান। মনজুরকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ দেওয়া হয়। বিএনপির রাজনীতিতে গেলেও ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী পালন, বঙ্গবন্ধু ও তার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখেন তিনি।
তবে নির্বাচনের পর মহিউদ্দিন ও মনজুরের মধ্যে সম্পর্ক আবার ‘পুনঃস্থাপন’ হয়। সিটি করপোরেশন পরিচালনায় বিভিন্ন পরামর্শের জন্য মনজুর বারবার ছুটে গেছেন পূর্বসূরীর কাছে। মেয়র থাকাকালে মনজুরের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হলেও মহিউদ্দিনের কণ্ঠে কখনোই তা শোনা যায়নি। আর মনজুরের মধ্যেও ছিল শ্রদ্ধা ও আনুগত্য। মৃত্যুর আগে মহিউদ্দিন মনজুরকে আওয়ামী লীগে ফেরাতে উদ্যোগী ছিলেন।
২০১৫ সালে মনজুরকে আবার বিএনপি থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে পরাজিত হন। গোলযোগপূর্ণ সেই নির্বাচনের মাঝপথে মনজুর ভোট বর্জনের পাশাপাশি রাজনীতি ছাড়ারও ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুন- গোপালগঞ্জ-৩ আসনে লড়বেন শেখ হাসিনা
এরপর তিন বছর ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় মনজুর আলম কেবল বঙ্গবন্ধু জন্ম-মৃত্যুদিনে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ‘মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশনের’ পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন অব্যাহত রাখেন। পরে আবার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে বিফল হন। ২০২০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনেন। তবে গণভবনে সাক্ষাৎকারে যাননি মনজুর।
এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেননি। স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে কেন— জানতে চাইলে মনজুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘এলাকার মানুষে আমাকে চায়। আমার নির্বাচনি এলাকার অন্তত আটটি ওয়ার্ডে এখনো অনেক উন্নয়ন কাজ বাকি আছে। আমার লক্ষ্য একটাই— শুধু জনগণের উন্নয়ন। আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। জনগণের সঙ্গে জীবনের বাকিটা সময় কাটাতে চাই।’
আরও পড়ুন- একাদশে ‘উপেক্ষা’ দ্বাদশে নৌকা পেলেন নানক-মায়া-রহমান-নাছিম
মনজুরের ছেলে মোহাম্মদ সারোয়ার আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কাল (মঙ্গলবার) মনোনয়নপত্র নেব। ইনশাল্লাহ নির্বাচনের মাঠে আমরা থাকব। মাঠ ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’
চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু। তিনিও এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আগের সাংসদ আফছারুল আমিনের মৃত্যুর পর গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত হন।
এদিকে মনজুর যখন বিএনপির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখনই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে তার বড় ভাইয়ের ছেলে দিদারুল আলম চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড ও নগরীর একাংশ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। ওই নির্বাচন এবং পরেরবারও মনোনয়ন পেয়ে দুবার সংসদ সদস্য হন দিদারুল, যিনি বিএনপি ঘরানার শিল্পপতি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
তবে এবার দিদারুল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। কিন্তু তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে আগ্রহী নন বলে জানিয়েছেন।
দিদারুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি দুবার নৌকার এমপি ছিলাম। এবার যদি নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করি, সেটা সমীচীন হবে না। নিজের বিবেকের কাছেও দায়বদ্ধ থাকব। যিনি নমিনেশন পেয়েছেন, তিনি আমার চেয়ে ভালো না কি খারাপ, সেটা আগে তো মানুষকে বুঝতে হবে। আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন করব না। দল যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, আমি মেনে নিয়েছি।’
আরও পড়ুন-
- মাগুরা-১ আসনে মনোনয়ন পেলেন সাকিব
- আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন ফেরদৌস
- পাহাড়ের পুরনো মাঝিদের হাতেই নৌকার বৈঠা
- আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি তিন প্রতিমন্ত্রী
- কিশোরগঞ্জে পাপন, নড়াইলে মাশরাফিকে মনোনয়ন
- ঢাকার ২০ আসনের মধ্যে ৯টিতেই নতুন প্রার্থী আ.লীগের
- নৌকার মনোনয়ন পেলেন গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক
- দ্বাদশের ভোটযুদ্ধে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল আওয়ামী লীগ
- ইনু-সেলিম ওসমানের আসন বাকি রেখে প্রার্থী ঘোষণা করল আ.লীগ
- বাদ পড়লেন দুর্জয় নতুন প্রার্থী সালাম, জাহিদ মালেক ও মমতাজ বহাল
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
এম মনজুর আলম চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম সংসদীয় আসন চট্টগ্রাম-১০ চট্টগ্রাম-১০ আসন চট্টগ্রাম-৪ আসন জাতীয়-নির্বাচন দিদারুল আলম দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সংসদ নির্বাচন