বিজ্ঞাপন

গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম

June 27, 2018 | 7:48 am

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

গাজীপুর থেকে: গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বেসরকারিভাবে নতুন নগরপিতা নির্বাচিত হলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে ২ লাখ ১২ হাজার ভোটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে গাজীপুরের দ্বিতীয় মেয়র হলেন তিনি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪১৬টি কেন্দ্রের ফলে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন ৪ লাখ ১০ হাজার ভোট। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট। শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল এই ফল ঘোষণা করেন।

নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর নিজ বাড়িতে এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নবনির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আজকের এই আনন্দঘন দিনে আমার পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মানুষের জীবনের সব দায়িত্ব সামাজিকভাবে হাতে নিয়েছি। সবার সহযোগিতা পেলে সেই দায়িত্ব সফলভাবে পালন করতে পারব বলে আমি আশাবাদী।’

বিজ্ঞাপন

জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, ‘বিরোধী দল আছে, ব্যবসায়ীরা আছেন, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আছেন। সবার সাথে আলোচনা করে, সবার পরামর্শ নিয়েই কাজ করতে চাই। আমাদের এখানে অনেক শ্রমিক কাজ করেন। তারা যেন নাগরিক সেবা পায়, সে জন্য কাজ করতে চাই। সিটি করপোরেশনের উন্নয়নের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে চাই। যেখানে যার পরামর্শটি দরকারি, সেখানে তার পরামর্শই নিয়েই কাজ করতে চাই।’

দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গাজীপুরের নবনির্বাচিত নগরপিতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তিনি মায়ের মতো, আমার ওপর গাজীপুরের দায়িত্ব দিয়েছেন; আমি সেই দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করব।’ ভবিষ্যতে দল চাইলে জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নেবেন বলে জানান তিনি।

এই নির্বাচনে ৯টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। স্থগিত হওয়া কেন্দ্রগুলোর মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ হাজার ৯৫৯।

বিজ্ঞাপন

এই নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী বাকি পাঁচ প্রার্থী হলেন— ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন (কাস্তে) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ (টেবিল ঘড়ি)। তবে জাহাঙ্গীর আলম ও হাসান উদ্দীন সরকার বাদে বাকি পাঁচ প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট হাতেগোনা।

এর আগে, মঙ্গলবার (২৬ জুন) সকাল ৮টায় ৫৭টি ওয়ার্ডের ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রের ২ হাজার ৭৬১টি কক্ষে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এই সিটির ১৯টি সংরক্ষিত নারী ও ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন, নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন।

এই নির্বাচনে সকাল ৯টা ১৪ মিনিটে নিজ গ্রাম কানাইয়া এলাকার কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। অন্যদিকে, সকাল ৮টা ১২ মিনিটে টঙ্গীর আউচপাড়ায় বশির উদ্দিন উদয়ন একাডেমিতে ভোট দেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার।

নির্বাচন কমিশন দাবি করছে, দুয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, স্থগিত হওয়া ৯টি কেন্দ্র ছাড়া বাকি সব কেন্দ্রে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন সারাদিন বিভিন্ন মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে। কোথাও কোনো অনিয়ম বরদাস্ত করা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না— এমন আশঙ্কা জানিয়ে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমি নির্বাচনে আছি, থাকব। এই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। জনগণ ফল মেনে নিলে আমিও মেনে নেবো।’ সকাল ৭টা থেকেই দলীয় এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া, সাদা গাড়িতে করে বিএনপির নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেন তিনি। পরে ভোট বন্ধের দাবি জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চিঠিও দেন হাসান উদ্দিন সরকার।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনবিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভীও অভিযোগ করেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রায় দুই শতাধিক ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে। ঢাকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সাথে সাক্ষাৎ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও একই অভিযোগের কথা জানান।

তবে আওয়ামী লীগ বলছে, বিএন‌পি সাংগঠনিক দুর্বলতার কার‌ণে সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এ দা‌বি ক‌রেন। পরে সিইসির সাথে দেখা করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও একই কথা বলেন।

এটি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচন হলেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন এই প্রথম। এই নির্বাচনে ছয়টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট নেওয়া হয়। কেন্দ্রগুলো হলো- চাপুলিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাপুলিয়া মফিজউদ্দিন খান উচ্চ বিদ্যালয়, পশ্চিম জয়দেবপুরের মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই কেন্দ্র এবং রাণী বিলাসমণি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই কেন্দ্র।

এই নির্বাচনে স্থগিত হওয়া ৯টি কেন্দ্র হলো— ভোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা, ‍কুনিয়া হাজী আ. লতিফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নারী ও পুরুষ কেন্দ্র, বিন্দান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাহান পাবলিক স্কুল, খরতৈল মনসুর আলী আদর্শ বিদ্যালয়ের নারী ও পুরুষ কেন্দ্র এবং হাজী পিয়ার আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সারাবাংলা/জিএস/এজেড/এনআর/এটি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন