বিজ্ঞাপন

‘দেশকে এগিয়ে নিতে ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান’

June 27, 2018 | 8:19 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান নিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, সেই অগ্রযাত্রা যেন থেমে না যায় তার দিকেও নজর রাখতে দেশবাসীকে আহ্বান জানান তিনি।

বুধবার (২৭ জুন) দশম জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

বিকেলে ৩টা ২০ মিনিটের দিকে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনের দিনের কার্যসূচি শুরু হয়। তার আগে প্রস্তাবিত বাজেটের সাধারণ আলোচনায় বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা অংশ নেন।

বিজ্ঞাপন

আলোচনায় সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কিন্তু যে কাজটাই করি অত্যন্ত উন্নত মানের করতে চাই। যে কারণে আমাদের সময় আর অর্থ লাগবে। ওই সস্তার সাধ অবস্থা করতে চাই না। উন্নত মানের করতে চাই। যেন শত বছর টিকে থাকে। আর আমাদের দেশের জনগণ যেন সুফল পায়।

তিনি বলেন, আমরা মিটিং করলাম (একনেক )। শুধু এখনকার জন্য নয় আমরা একশো বছরের ডেল্টা প্লান নিয়েছি। দুই হাজার একশো সাল পর্যন্ত। আমাদের নদীমাতৃক বাংলাদেশ। নদীকে যেমন বাঁচাতে হবে। সেই সাথে তার অববাহিকা বা মানুষের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেটাও রক্ষা করতে হবে। কারণ বাংলাদেশটা একটা বদ্বীপ। কাজেই এটাকে যেমন রক্ষা করতে হবে। নদীর গভীরতা নাব্যতা যেমন বাড়াতে হবে, ভাঙন রোধ করতে হবে। মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পরিকল্পনাটা নিয়েছি।

“আমরা চাই আমাদের অগ্রগতির এই ধারাবাহিকতাটা বজায় থাকুক। আজকে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। আর আমরা যখন এগিয়ে যাচ্ছি, তখন রোহিঙ্গা সমস্যা দেখা গেল। আমাদের ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে হয়েছে। তারা যেন কোনো কষ্ট না পায়, সেদিকটিও দেখতে হচ্ছে। এখন হয়তো আমরা আন্তার্জাতিক সমবেদনা পাচ্ছি।”

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান যেন সুস্থভাবে চলে। আমার দেশের জন্য যারা কাজ করবে, তারা যেন সংসারটা সুস্থভাবে চালাতে পারে এবং তাদের ভেতরে যেন একটা স্বস্তি থাকে, সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সফল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি দাবি করে তিনি বলেন, মাদকমুক্ত বাংলাদেশ আমাদের গড়তেই হবে। মাদক একটা দেশকে ধ্বংস করে, জাতিকে ধ্বংস করে, একটা সংসারকে ধ্বংস করে। সংসার যখন ধ্বংস হয়, তখন দেশও ধ্বংস হয়। কাজেই এটার বিরুদ্ধে আমাদের যে অভিযান- যে যাই বলুক, আমরা এটাকে অব্যাহত রাখব। আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখবে। মানুষের মতো মানুষ হবে। মাদকাসক্ত কেন হবে! তার জন্য যা যা করার দরকার, আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি- এটা অব্যাহত থাকবে। যে যা বলুক তাতে কিছু আসে যায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার অর্থমন্ত্রী যে বাজেট দিয়েছেন, অত্যন্ত চমৎকার একটা বাজেট। যেটা নিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পারেনি। সব শ্রেণির মানুষের দিক বিবেচনা করে দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে এই বাজেট উপহার দিয়েছেন। এই বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। সেটাই আমরা আশা করি। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আর এই স্বাধীনতার সুফল আমার জনগণের হাতে পৌঁছে দিতে হবে।

পদ্মা সেতু নিয়ে বিরোধী দলীয় নেতার বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আামদের জন্য খুবই সেনসেটিভ। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার করেনি। ১৯৯৬ সালের সরকার গঠনের কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, জাপানে যখন গেলাম, জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করলাম। দুইটা সেতুর ব্যাপারে, একটি হচ্ছে পদ্মা আরেকট হচ্ছে রূপসা সেতু। আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল আমার প্রায়োরিটি কোনটা, আমি দেখলাম রূপসাটা তাড়াতাড়ি হবে। কারণ রূপসায় ছোট ব্রিজ। আর পদ্মার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করতে যথেষ্ট সময় লাগাবে, কারণ পদ্মা নদী খরস্রোতা। এটার জন্য বিশেষভাবে স্টাডি করতে হবে। রূপসার কাজ তারা শুরু করলো। আর পদ্মার ফিজিবিলিটি স্টাডি করার পর যখন রিপোর্ট দিল প্রথম ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলাম ২০০১ সালের জুলাই মাসে। আমাদের ক্ষমতা ছাড়ার কয়েকদিন আগে। জাপান সরকার এটা করে দেবে কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে এটা বন্ধ করে দিলো।

পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপনের বিষয়টি তুলে বলেন, এখন আমাদের প্ল্যান হচ্ছে, আমরা পদ্মা সেতু থেকে একেবারে পায়রা বন্দর পর্যন্ত (বরিশাল-পটুয়াখালী) রেলপথ করবো। সেটা ব্রিটিশদের সাথে কথা হচ্ছে। এদেশে ব্রিটিশরাই রেললাইন করেছিল। সেই শত বছর আগেরকার একটি কোম্পানি রেললাইন করেছিল, তাদের সাথে আমরা আলোচনা করছি এবং আমরা এটা করে দেবো।

বিজ্ঞাপন

আমরা আমাদের দেশকে উন্নত করবার জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নিয়েছি। আমরা নিজেদের আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যখন বিএনপি বা জেনারেল এরশাদ সাহেব যারাই ক্ষমতায় ছিলেন তখন বাজেট করবার জন্য বিদেশের কাছে ধরনা দিতে হতো। হাত পাততে হতো। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আজকে আমরা উন্নয়ন বাজেটের ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা অর্জন করেছি। এক সময় বাংলাদেশকে সবাই করুণার চোখে দেখতো। সেটা খুব কষ্টের। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, আামাদের প্রচেষ্টাই ছিল দেশকে আবার একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাব। আজকে আমরা সেই জায়গায় পৌঁছাচ্ছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

“এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে এসেছি। আমাদের সাথে এই কাতারে আছে এখন ভারত, চীন, ব্রাজিল, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনের মতো শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। আমরা এখন তাদের কাতারে আছি। আমাদের এই অর্জনের পেছনে রয়েছে আমাদের দেশের সব মেহনতি মানুষ। তাদের কর্মস্পৃহা, তাদের কর্মউদ্যোম এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। কারণ যখনি আমরা যে আহ্বান করেছি, তারা সেই ডাকে সাড়া দিয়েছেন।”

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী সব শ্রেণি-পেশার মানুষ, সব রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি অর্থমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, তিনি আরও বাজেট দেন। আমরা সেটাই চাই।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর/এটি

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন