বিজ্ঞাপন

বসল পঞ্চম স্প্যান, দৃশ্যমান হলো পদ্মা সেতুর ৭৫০ মিটার

June 29, 2018 | 2:38 pm

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

মুন্সীগঞ্জ: লক্ষ্য চলতি ২০১৮ সালের ডিসেম্বর। এর মধ্যেই একটি স্বপ্নের বাস্তবায়নে মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া, মাদারীপুর জেলার শিবচর ও শরীয়তপুর জেলার জাজিরায় চলছে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ; যার দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানীকে সরাসরি সংযুক্ত করার এই মেগা প্রকল্প এখন বাংলাদেশের স্বপ্ন; এর নাম পদ্মা সেতু। পঞ্চম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই স্বপ্নের ৭৫০ মিটার এখন দৃশ্যমান।

শুক্রবার (২৯ জুন) দুপুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয় পঞ্চম স্প্যান।

এদিন পৌনে ১টায় ভাসমান ক্রেন দিয়ে স্প্যানটি পিলারে তোলা হয়। ১৫০ মিটার দীর্ঘ এই স্প্যানটি এর আগে কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে তৈরির করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় স্প্যানটি জাজিরার উদ্দেশে পাঠানোর হয়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ক্রেনটি ১৮ নম্বর খুঁটির কাছাকাছি অবস্থান করছিল।

বিজ্ঞাপন

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এদিন (শুক্রবার) স্প্যান বসানোর কাজ সরাসরি তদারকি করেন।

এর আগে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। পরে এ বছরের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। গত ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয় তৃতীয় স্প্যান। সর্বশেষ ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হলে সেতুর ৬০০ মিটার দৃশ্যমান হয়।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতল পদ্মা সেতু হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর উপর দিয়ে চলবে যানবাহন। পুরো সেতুতে মোট খুঁটির সংখ্যা হবে ৪২। একটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হবে। ৪২টি খুঁটির ওপর এ রকম ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে তৈরি করে সমুদ্রপথে জাহাজে করে আনা হয় বাংলাদেশে। ফিটিং করা হয় মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে।

বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে।

প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেদের অর্থে সেতুটি নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। স্বপ্নের এই পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প’। দ্বিতল এই সেতু নির্মিত হচ্ছে কনক্রিট আর স্টিল দিয়ে। এর উপরের তলায় থাকবে সড়ক, নিচ তলায় চলবে রেল। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ পরিবহন সুবিধাও থাকবে এই সেতুতে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর রঙ হবে সোনালি। তবে রাতে সেতুটিতে জ্বলবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে লাল ও সবুজ বাতি। সেভাবেই লাগানো হবে বাতি।

বিজ্ঞাপন

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল সেতুর প্রস্থ হবে ৭২ ফুট, এতে থাকবে চার লেনের সড়ক। পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার; এর দুই প্রান্তে (মাওয়া ও জাজিরা) সংযোগ সড়ক হবে ১৪ কিলোমিটার। এই সেতুর জন্য দুই পাড়ে নদীশাসন হয়েছে ১২ কিলোমিটার।

পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট পিলার হবে ৮১টি। আর পানির স্তর থেকে এর উচ্চতা হবে ৬০ ফুট। এই সেতুর পাইলিং গভীরতা ৩৮৩ ফুট। পদ্মা সেতুর মোট ৪২টি পিলারের প্রতিটির জন্য পাইলিং হবে ৬টি।

২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার (মূল সেতুর জন্য মোট ব্যয়) এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড। মেগা এই প্রকল্পে কাজ করছে প্রায় চার হাজার মানুষ।

সারাবাংলা/এমএইচ/জেএএম/এটি

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন