বিজ্ঞাপন

গুলশান ট্র্যাজেডি: শাওনের মৃত্যু নিয়ে আজও প্রশ্ন রয়েছে পরিবারের

June 30, 2018 | 4:27 pm

।। এম এ কে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনার ৯ দিন পর হাসপাতালে মারা যায় রেস্তোরাঁর কর্মী জাকির হোসেন শাওন। তার শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিলো। শাওনের ‍মৃত্যু জঙ্গিদের হামলায় হয়েছে নাকি অন্য কোনোভাবে তা নিয়ে আজো প্রশ্ন রয়েছে পরিবারের। তাই পরিবারের সদস্যরা শাওনের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে চায়।

শুক্রবার (২৯ জুন) নারায়ণগঞ্জের গোদানাইলের দক্ষিণ কদমতলীর ভাড়া বাসায় কথা হয় নিহত শাওনের মা মাকসুদা বেগম ও বোন সোনিয়া আক্তারের সঙ্গে। শাওনের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ না জানায় এ প্রতিবেদকের কাছে হতাশা আর আক্ষেপ প্রকাশ করেন তারা। সেইসঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে আসে তাদের বর্তমান আর্থিক টানাপড়েনের কথাও।

নিহত মো. জাকির হোসেন শাওনের মা মাকসুদা বেগম এবং বোন সোনিয়া আক্তার সারাবাংলাকে জানান, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর তারা শাওনকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে হাসপাতাল থেকে পুলিশ ফোন করে তাদের জানায় যে শাওন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তারা আরো জানান, হাসপাতালে যাওয়ার পর তারা দেখেন শাওনের পা (পায়ের পাতা ও হাঁটু থেকে গোড়ালি), মাথা, চোখে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। সেসব জায়গায় রক্ত জমে ছিল। ডাক্তাররা বলেছেন, যেভাবে শাওনকে যেভাবে মারা হয়েছে তাতে তার কিডনি বিকল হয়ে গেছে। এতে করে সে অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যায়। হাসপাতালে যে আট-নয়দিন বেঁচে ছিল ওই সময়ে শাওন কোনো কিছু খেতে পারেনি এবং মলমূত্রও ত্যাগ করতে পারেনি। শুধু স্যালাইন লাগানো ছিল।

শাওনের মৃত্যুর ঘটনাকে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, ‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস  শাওনকে জঙ্গি সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্যাতন করেছিল। তাদের ভয়াবহ নির্যাতনের ফলেই শাওন মারা গেছে। একজন ছেলে জঙ্গি না হওয়া পরও কেবল সন্দেহের ওপর নির্ভর করে এমন নির্যাতন করা কতোটুকু যৌক্তিক তার বিচার হওয়া উচিত।’

বিজ্ঞাপন

শাওনের মা মাকসুদা বেগম এবং তার বোন সোনিয়া আক্তার সারাবাংলাকে আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের আকুল আবেদন যেন শাওনের মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করা হয়। সন্দেহের জেরে একজন মায়ের বুক খালি করা এবং একটি অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে মেরে ফেলার বিচার হওয়া প্রয়োজন।’

মাকসুদা বেগম জানান, শাওনের বাবা আব্দুস সাত্তার (৬২) বর্তমানের কোনো কাজ করতে পারেন না। মানুষের কাছ থেকে চেয়ে কোনোরকমে দিন পার করছেন তারা।

তবে শাওনের বোন সোনিয়া আক্তার (১৮) পোশাক কারখানায় কাজ করে। ছোট দুই ভাই আব্দুর রশিদ (১৫) ও আরাফাত (১২)। দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন গৃহকর্মীর কাজ করে মাসে ৩ হাজার টাকা উপার্জন করে।

মাকসুদা বেগম আরো বলেন, ‘আমিও নিজেও অসুস্থ, আমার কিডনি এবং হার্টের সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমি ফুটপাতে পিঠা বিক্রি করি। পিঠা বিক্রি এবং মেয়ের আয় দিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাই। কিন্তু হঠাৎ আমি অসুস্থ হওয়াতে এখন পিঠাও বিক্রি করতে পারছি না। কীভাবে যে সংসার চালাবো তা বুঝতে পারছি না।’

বিজ্ঞাপন

নিহত মো. জাকির হোসেন শাওন হলি আর্টিজানে চাকরি করার সময় প্রতিমাসে তার মা’কে ৭ হাজার টাকা সংসার চালানোর খরচ দিত। এখনও হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ প্রতিমাসে এখন ৫ হাজার টাকা করে দিচ্ছে।

‘তবে স্থানীয় প্রশাসন বা অন্য কোনো জায়গা থেকে আমাদের কোনো খোঁজ নেয়নি। তবে শুনেছি যারা ওই ঘটনায় মারা গেছেন তাদের পরিবারকে সরকার ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময় খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা গরীব বলেই কী আমাদের কেউ খোঁজ নেয় না’, প্রশ্ন রাখেন তারা।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার হামলায় ঘটনা ঘটে। সে সময় ১৭ বিদেশি নাগরিক ২ পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ২২ জন নিহত হয়। পরদিন সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযান শেষে ৫ জঙ্গি এবং এক রেস্তোরাঁ কর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমএস/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন