বিজ্ঞাপন

বিভীষিকাময় রাতের ২ বছর

July 1, 2018 | 8:31 am

।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ঢাকার ইতিহাসে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালের ১ জুলাই। ওই হামলার পর রাজধানীর গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন, হত্যাকান্ড ও তথ্য গোপনের অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। তবে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো মামলারই তদন্ত কাজ শেষ হয়নি।

ঢাকার আদালত সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত শেষ করতে না পারায় হলি আর্টিজান মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ শতাধিকবারেরও বেশি পরিবর্তন করেছেন আদালত। সর্বশেষ, গত ২৫ জুন ঢাকা মহানগর হাকিম নুরুন্নাহার ইয়াসমিন আগামী ২৬ জুলাই এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নতুন তারিখ নির্ধারন করেন।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনার তদন্ত কাজ গুছিয়ে এনেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। যে কোনো সময় আদালতে তা দাখিল করা হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, হলি আর্টিজান হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে ২৯ জন জঙ্গির সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে সিটিটিসি। এদের মধ্যে ১৬ জন বিভিন্ন সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে। সিটিটিসি বিভাগের হাতে ধরা পড়েছে ১১ জন। বাকি ২ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তারা হলেন, মামুনুর রশীদ রিপন ওরফে মামুন এবং সিরিয়ায় পাড়ি জমানো চিকিৎসক রোকনউদ্দিন।

ওই হামলায় যে ১১ জন ধরা পড়েছে তারা হলেন, আবুল হাসনাত রেজা করিম, মো. রাকিবুল হাসান ওরফে রাফিউল ওরফে রাফি ওরফে রিপন ওরফে রিগ্যান, মো. জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজিব গান্ধি, মো. মিজানুর রহমান ওরফে রক মিজান ওরফে বড় মিজান, আব্দুস সবুর খান, আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা, হাদিসুর রহমাস সাগর, সোহেল মাহফুজ ওরফে আবদুস সবুর খান ওরফে নসরুল্লাহ ওরফে হাত কাটা মাহফুজ, আসলাম হোসাইন মোহন ওরফে আবু জাররা ওরফে রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, আবদুস সামাদ ওরফে মামু ওরফে আরিফ এবং মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সিটিটিসি বিভাগের হাতে যে ১১ জন ধরা পড়েছে তাদের মধ্যে ওপরে উল্লেখ করা প্রথম ৭ জনকে আসামী করে আদালতে অভিযোগপত্র (তদন্ত প্রতিবেদন) দাখিল হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

হলি আর্টিজান হামলার দুই বছর পূর্তিকে সামনে রেখে ২৮ জুন (বৃহস্পতিবার) ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, গুলশান মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে সিটিটিসি’র তদন্ত কর্মীরা অনেক তথ্য পেয়েছে। তদন্ত একেবারে শেষ পর্যায়ে। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র (তদন্ত প্রতিবেদন) আদালতে জমা দেওয়া হবে।

হলি আর্টিজান হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে ২৯ জন জঙ্গির সম্পৃক্ততার মধ্যে ১৬ জন বিভিন্ন সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে। এরা হচ্ছে, তামিম আহমেদ চৌধুরী, সারোয়ার জাহান ওরফে আবদুর রহমান ওরফে আবু ইব্রাহীম আল হানিফ, তানভীর কাদেরী, নুরুল ইসলাম মারজান, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম, মাইনুল ইসলাম ওরফে মুসা, রায়হান কবির তারেক, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সাবিহ মোবাশ্বের, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল, খায়রুল ইসলাম পায়েল, আবদুল্লাহ ও ফরিদুল ইসলাম আকাশ, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।
গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশি নাগরিক, ২ জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ২২ জন নিহত হন।

পরদিন (২০১৬ সালের ২ জুলাই) সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত অভিযানে উদ্ধার করা হয় ৫ জঙ্গি এবং হলি আর্টিজানের পাচক সাইফুলের লাশ। এ ছাড়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত অভিযানে ৫ জন বিদেশিসহ ৩২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়ার পর ৯ জুলাই (২০১৬ সালে) হাসপাতালে মারা যান হলি আর্টিজানের আরেক কর্মী জাকির হোসেন শাওন। সব মিলিয়ে ওই ঘটনায় ২৯ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
ওই জঙ্গি হামলায় নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, ১ জন ভারতীয়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ১ জন মার্কিন নাগরিক এবং ২ জন বাংলাদেশি।

হামলায় নিহত ইতালির ৯ জন হলেন, ভিনচেনসো ডি আলেস্ত্রো, নাদিয়া বেনেদেত্তি, ক্রিস্ত্রিয়ান রসি, ক্লাউদিও কাপেলিন্ত, ক্লদিয়া মারিয়া ডি আন্তোনা, সিমোনা মন্তি, আদেলে পুলিজি, মারিয়া রিবোলি ও মার্কো তোন্দাত।

বিজ্ঞাপন

জাপানের ৭ নাগরিক হলেন, তানাকা হিরোশি, কোয়ো ওগাসাওয়ারা, সাকাই ইউকু, কুরুসাকি নুবুহিরি, ওকামুরা মাকাতো, শিমুধুইরা রুই ও হাশিমাতো হিদিকো।

এ ছাড়া ভারতের নাগরিক তারিশা জেইন, এলিগেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যানের মেয়ে মার্কিন নাগরিক অবিন্তা কবির, বাংলাদেশের ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেন, ডেএক্সওয়াই ইন্টারন্যাশনালের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ইশরাত আখন্দও ওই হামলায় মারা যান।

জীবিত অবস্থায় যে ৫ জনকে উদ্ধার করা হয়, তারা হলেন, শ্রীলঙ্কার ২ জন নাগরিক পেপেথা শায়ামা বিজেসেকেরা ও হারিকেশা বিজেসেকেরা, জাপানের নাগরিক ওয়াতানাবে তামোকে, ইতালীয় জিয়ান জালেহো বোসেনি এবং আর্জেন্টাইন বংশোদ্ভূত ইতালীয় নাগরিক ডিয়াগো রোসিনি।

উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিরা হচ্ছেন মিরাজ হোসেন, আবদুল মোমিন, শেফা করিম, নিয়ামুল মুন্সী, সমীর বাড়ই, শারমিনা করিম, আকাশ খান, সুহিন, আবুল হাসনাত রেজাউল করিম, তাহানা তাসমিয়া, ইমাম হোসেন সবুজ, আরিফ মাহমুদ শাওন, লিটন ইসলাম, বাচ্চু, দেলোয়ার হোসেন, শাহরিয়ার আহমেদ, সত্য প্রকাশ, তাহমিদ হাসিব খান, দ্বীন ইসলাম রাকিব, কে এম রেজাউল ইসলাম, সবুজ হোসেন, শিশির বৈরাগী, শিশির সরকার,শাহীন, রায়হান করিম, ফাইরোজ মাহিন, রেন্টু কীর্তনিয়া।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন