বিজ্ঞাপন

নীরব শ্রদ্ধায় হলি আর্টিজানে নিহতদের স্মরণ

July 1, 2018 | 1:41 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার দুই বছর পূর্তিতে নিহতদের স্মরণের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিভিন্ন স্তরের মানুষ। রোববার (১ জুলাই) সকালে বিদেশি কূটনীতিকদের কয়েকদফা শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সকাল ১০টায় সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় আর্টিজানের মূল স্মরণ বেদী। এ সময় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং স্মৃতিচারণ করেন।

সকাল ৭টার কিছু পর প্রথম দফায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে আর্টিজান প্রাঙ্গণে আসেন ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসের প্রতিনিধিরা। সকাল ৯টার পরে আসেন ইতালি দূতাবাসের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি। বিনম্র পায়ে মূল সড়ক দিয়ে কূটনীতিকরা যখন হলি আর্টিজানের দিকে এগিয়ে যান, তখনও তারা ছিলেন নির্বাক। আর্টিজান ঘিরে তখন এ এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কূটনীতিকরা গণমাধ্যমে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

কূটনীতিকদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকাল দশটায় সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় আর্টিজান প্রাঙ্গণ। সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

সকাল পৌনে ১১ টার দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আসেন স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। নাশকতাকারী, জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসীরা হীন স্বার্থ বাস্তবায়নের জন্য এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায়। এর কারণে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে- তা বলা যাবে না।

বিজ্ঞাপন

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ৯ ইতালিয়ান, সাত জাপানি, একজন ভারতীয়, একজন আমেরিকান-বাংলাদেশ দ্বৈত নাগরিক ও দু’জন বাংলাদেশি এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ২০ জনকে হত্যা করে।

সেদিনের হামলায় নিহত ইতালির নাগরিক নাদিয়া বেনেদিতি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা। তার গড়ে তোলা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এখনো ব্যবসা পরিচালনা করছে এ দেশে। তার মধ্যে স্টুডিওটেক্স নামের একটি বায়িং হাউজের পক্ষ থেকে ফুল দিতে আসেন প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজন কর্মী।

প্রতিষ্ঠানটি সিনিয়র ম্যানেজার ওয়াহিদুল আলম বলেন, সেদিনের ঘটনায় আমরা ভাবতেই পারিনি বেনিদিতি মারা গেছেন। আমরা পুরো পরিবার স্থবির হয়ে গিয়েছিলাম। প্রায় ছয় মাস আমাদের ব্যবসায়িক কোনো অর্ডার হয়নি। তবে এখন অবশ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছি।

নাদিয়া বেনিদিতি একজন অসাধারণ কর্মীবান্ধব উদ্যোক্তা ছিলেন জানিয়ে ওয়াহিদুল আলম বলেন, এ দেশের মানুষের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ছিল। কর্মক্ষেত্রে তিনি ছিলো অসীম অনুপ্রেরণা। তার শুন্যস্থান কখনোই পূরণ হওয়ার নয়।

বিজ্ঞাপন

নাদিয়ার হাতে গড়া আরেকটি প্রতিষ্ঠান ভালমন্ট স্যুয়েটার্স। কারখানার বর্তমান পরিচালক বিপুল কুমার সমদ্দার বললেন, কারখানাটি ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হওয়ার পর বেশ ভালো করছিল। ব্যবসায়িকভাবে আমরা অনেক এগিয়েছিলাম। ঘটনার দিন আমরা জানতাম না তিনি হলি আর্টিজানে আছেন। তার মৃত্যুর খবর শোনার পর পুরো কারখানা প্রায় অচল হয়ে গিয়েছিল। আমরা তার অবদান কোনোদিনও ভুলতে পারব না।

এদিকে, গুলশান ট্র্যাজেডির দুই বছর পূর্তির এই দিনটিতে হলি আর্টিজান প্রাঙ্গণ খুলে দেওয়া হয়। সেখানে দেখা গেছে মূল ভবনের সামনে ছোট্টো সবুজ ঘাসের গালিচা ঠিক আগের মতোই পরিপাটি। পাশের লেক দিয়ে আসা ফুরফুরে বাতাস এই ভ্যাপসা গরমেও কেমন শীতল অনুভূতি জাগায়। আঙ্গিনার একপাশে চৌবাচ্চায় বাহারি রঙের মাছ খেলা করছে। পাশের একটি গাছের শাখায় কায়দা করে রাখা একটি বাক্সে তাদের জন্য খাবার রাখা আছে। এখানে-ওখানে গাছের ছায়ায় রাখা মাটির শো’পিসগুলো দেখে মনে হয়, এখনও নিয়ম মেনে যত্ন নেয় কেউ। সব মিলিয়ে হলি আর্টিজান এখনও জেগে আছে। আর সেদিনের সেই নারকীয় হামলায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তারা রয়ে গেছেন কেবল অসংখ্য-অগণিত মানুষের স্মরণে।

দুই বছর আগের এই দিনটি ছিল রমজান মাসের একটি দিন। এদিন সন্ধ্যায় জঙ্গিরা অতর্কিতে হামলায় চালায় গুলশান-২-এর হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়। মুহূর্তের মধ্যে গোটা রেস্টুরেন্ট দখলে নিয়ে নেয়, রেস্তোরাঁর অতিথি-কর্মচারীদের রাতভর জিম্মি করে রাখে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিকবার পাল্টা হামলা চালালে জঙ্গিদের সাথে সংঘর্ষ ঘটে। এতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহতও হন। শেষ পর্যন্ত পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর কমান্ডোদের নেতৃত্বে চালানো হয় ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’। এতে পাঁচ জঙ্গি ও একজন পিৎজা শেফ নিহত হয়।

সারাবাংলা/এমএস/জেডএফ

আরও পড়ুন-

বিভীষিকাময় রাতের ২ বছর

নতুন ‍ঠিকানায় হলি আর্টিজান,কাটেনি অস্বস্তি!

বাংলা‌দে‌শে জঙ্গিরা এখন আর সক্রিয় নেই: কা‌দের

‘শোককে শক্তিতে পরিণত করেই জঙ্গি নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দিয়েছি’

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন