বিজ্ঞাপন

‘সাইফুল জঙ্গি ছিল না, আমার সন্তানদের কলঙ্ক থেকে বাঁচান’

July 1, 2018 | 3:43 pm

।। মো. মানিক মোল্যা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

শরীয়তপুর: ২০১৬ সালের জুলাই। গোটা দেশের মানুষের সঙ্গে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি সোনিয়া বেগমও জানতে পারলেন রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। যেখানে সোনিয়ার স্বামী সাইফুল ইসলাম চৌকিদার বাবুর্চি হিসেবে কাজ করতেন। রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার পর জানা গেল পাঁচ জঙ্গির লাশের সঙ্গে পাওয়া গেছে সাইফুলের লাশ। তবে কী সাইফুলও জঙ্গিদের সহযোগী, এই প্রশ্ন ছিল তখন সবার মুখে।

অবশ্য দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, সাইফুল জঙ্গি নন। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্তে হলি আর্টিজেনের বাবুর্চি সাইফুল ইসলাম চৌকিদার ও জাকির হোসেন শাওনের সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাই অভিযোগপত্র থেকে তাদের নাম বাদ দিতে আবেদন করা হবে।’

অভিযোগপত্র থেকে নাম বাদ দিলেই কি দূর হবে সাইফুলের পরিবারের দুর্দশা? বদলাবে অসহায় পরিবারটির পরিস্থিতি? যে মা তার সন্তানের লাশ দেখতে পারেননি, যে স্ত্রী সদ্যজাত সন্তানকে তুলে দিতে পারেননি স্বামীর কোলে, তাদের কষ্ট কি কিছুটা কমবে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই সারাবাংলা’র প্রতিবেদক যান নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামে সাইফুলের বাড়িতে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, হলি আর্টিজানে হামলার সময় ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন সোনিয়া। সাইফুলের মৃত্যুর তিন মাস পর জন্ম দেন একটি ছেলে। পরিবারের সদস্যরা ওই শিশুটির নাম রেখেছে মোহাম্মদ হাসান। মাত্রই হাঁটতে শিখেছে শিশুটি, শিখেছে কথা বলতে। কিন্তু বাবা বলে ডাকবার মতো কেউ নেই তার।

বড় মেয়ে সামিয়া আক্তার ও ছোট মেয়ে ইলমিকে বুকে জড়িয়ে খাটের কোনে বসে ছিলেন সাইফুলের স্ত্রী সোনিয়া বেগম। এ প্রতিবেদককে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সোনিয়া বলেন, ‘বাবাকে দেখা হলো না আমার বাছার। একটি মিথ্যা কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে বেড়ে উঠবে আমার ছেলে। আপনারা আরো তদন্ত করুন। আমার স্বামী জঙ্গি ছিল না। আমার সন্তানদের কলঙ্ক থেকে বাঁচান।’

সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাননি জানিয়ে সোনিয়া বেগম বলেন, ‘আমি সেলাইয়ের কাজ করি আর হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ থেকে মাসে কিছু টাকা পাই। তা দিয়ে সংসার চালাই। কোনোরকমে জীবনযাপন করছি। বেঁচে থেকে কী লাভ? আমার স্বামীর লাশটা পর্যন্ত দেখতে পারলাম না। ছেলে-মেয়েদের ভাল কোন স্কুলে লেখাপড়া করাতে পারছি না ’

বিজ্ঞাপন

কথা হয় সাইফুলের মা মেহের বেগমের সঙ্গে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমার সাইফুল নিরাপরাধ।’ রেস্তোরাঁর পোশাক পরিহিত অবস্থায় সাইফুলের লাশ পাওয়ার পরেও তাকে জঙ্গি বলে প্রচার করা হয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘লাশের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তাকেও ঢাকায় নিয়ে পরীক্ষা করানো হয়। এরপরেও আমার ছেলের লাশটি ফেরত পাইনি। লাশটা ফেরত পেলে সারা জীবন ওর সন্তানেরা বাবার কবরটা দেখে শান্তি পেত।’

যে ছেলে সংসার চালাতেন সেই ছেলেই নেই, তাই কোনোরকমে জীবন কাটছে বলে জানিয়ে সাইফুলের মা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সরকার কি আমাদের দেখে না?’

উল্লেখ্য, হামলার ঘটনার আড়াই বছর আগে হলি আর্টিজান রেস্তোরায় বাবুর্চি হিসেবে যোগ দেন সাইফুল ইসলাম চৌকিদার। এর আগে তিনি জার্মানিতে ছিলেন। সেখান থেকেই শিখে আসেন পিৎজা তৈরির নানা কৌশল। সেখানেই শিকার হন দেশের ভয়াবহতম জঙ্গি হামলার। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর না করে তিন মাস পরে বেওয়ারিশ লাশের সাথে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয় সাইফুলকে। ফলে শেষবারের মতোও সাইফুলের দেখা পাননি তার পরিবারের সদস্যরা।

আরও পড়ুন: নীরব শ্রদ্ধায় হলি আর্টিজানে নিহতদের স্মরণ

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এমএইচ/এসএমএন/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন