বিজ্ঞাপন

‘আর কত তাজা প্রাণ ঝরবে’

July 1, 2018 | 8:25 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ‘ঢাকার রাস্তায় যাতে ব্রেক ছাড়া লক্কর-ঝক্কর গাড়ি আর না চলে। নিমিষেই এভাবে যেন এমন তরতাজা প্রাণ ঝরে না যায়। এক বছর আগে ভালোবেসে বন্ধুকে জীবনসঙ্গী করেছিলাম। ‍সুখে-দুঃখে একইসাথে কাটাব বলে। কিন্তু এ কী হয়ে গেল! এই ক্ষতি সামলাব কী করে, বুঝতেই পারছি না।’

রোববার (১ জুলাই) বাসচাপায় নিহত শাহরিয়ার সৌরভ সেজানের মরদেহ জড়িয়ে ধরে এভাবেই বিলাপ করছিলেন স্ত্রী মুনিয়া ইসলাম মজুমদার। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পড়ে ছিল সেজানের নিথর দেহ।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলের বিপরীতে কালশী ফ্লাইওভার থেকে বনানী উত্তরা সড়কে নামার পথে শাহরিয়ার সৌরভ সেজানের মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয় পেছন থেকে আসা বসুমতি পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্টো-গ-১৪-২৬১০)। এতে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন সেজান।

বিজ্ঞাপন

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সেজানের মোটরসাইকেলটি ফ্লাইওভার থেকে নামছিল। তখন পেছন থেকে আসা গাজীপুরগামী বসুমতি পরিবহনের একটি বাস চাপা দেয়। এ সময় মোটরসাইকেলসহ সেজান বাসের নিচে চলে যায়। এ অবস্থা দেখে বাসের চালক নেমে পালিয়ে যায়।

রাস্তায় থাকা লোকজন এবং ওই বাসের যাত্রীরা নেমে বাসটিকে আটকিয়ে সেজানকে উদ্ধার করে পাশেই থাকা কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাসের যাত্রীরা জানান, বাসটি ব্রেক ফেল করেছিল।

বিজ্ঞাপন

ঘটনার পর একে একে ছুটে আসেন বন্ধু সহকর্মী ও আত্মীয়-স্বজন। সেজান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৯/১০ সেশনে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকেই তিনি অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

হাসপাতালে ছুটে আসা সেজানের বন্ধু মাহিদুল ইসলাম মাহি সারাবাংলা’কে বলেন, ‘গত বছর বন্ধু মুনিয়া ইসলাম মজুমদারকে বিয়ে করেছিলেন সেজান। একই সেশনে ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন মুনিয়া। দুই দিন আগে তাদের বিবাহবার্ষিকী গেছে। আজ (রোববার) সকালের দিকে মিরপুর ডিওএইচএসের বাসা থেকে দু’জন একইসাথে অফিসের উদ্দেশে বের হয়ে যান। মুনিয়া বর্তমানে ব্র্যাকের ফার্মেসি বিভাগে আর সেজান গুলশানের নিকেতনে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করতেন।’

মাহি আরও বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেজান ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি গিটার বাজিয়ে গান করতেন। তার গান শোনার জন্য সবাই পাগল হয়ে থাকত। তার একটি অ্যালবাম বের করারও কথা ছিল। সবই বাকি রয়ে গেল।’

বিজ্ঞাপন

সেজানের স্ত্রী মুনিয়ার বরাত দিয়ে মাহিদুল ইসলাম মাহি বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর পেযে মুনিয়া ছুটে আসে হাসপাতালে। সেখান থেকে ফ্লাইওভারের ঘটনাস্থলে আসে। সেজানের মোটরসাইকেল, হেলমেট জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।’

কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রশ্ন রেখে মুনিয়া বলেন, ‘এভাবে আর কত তরতাজা প্রাণ যাবে। কতজনের বুক খালি হবে। আর না, এবার থামান।’

সেজানের আরেক বন্ধু শিহাব উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলা’কে বলেন, ‘সেজানরা দুই ভাইবোন। পরিবারের একমাত্র ছেলেটি দুনিয়া থেকে বিদায় নিলো। তার মরদেহ কুর্মিটোলা হাসপাতালে গোসল শেষে সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিমান বন্দর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে ঠাকুরগাঁওয়ে পাঠানো হয়। তার গ্রামের বাড়ি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাড়ির পাশের গ্রামে। সেখানে তার জানাজা শেষে দাফন করা হবে।’

দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর পেয়ে শিহাব উদ্দিন ফেসবুক ওয়ালে লিখেন, ‘মুনিয়া পাখির জোড়াটা চলে গেল। রেখে গেলো সহস্র স্মৃতি। তোকে বলার মতো ভাষা নেই। আল্লাহ রহমত আর শান্তি তোর ওপর বর্ষিত হোক। সেজানের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি ।’

তার আরেক বন্ধু ইমরানুজ্জামান লিখেছেন, ‘ওপারে খুব ভালো থাকিস, দোস্ত। তোর হাসিমাখা মুখটা আর কখনোই দেখতে পাবো না রে। প্রিয়জন হারানোর কষ্ট আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। কী করে ভুলব তোকে বল! দোস্ত তুই প্রথম টিকিট কাটলি আমাদের ০৬ ব্যাচ থেকে? তুই এই ঈদে আসলি না। বললি, দোস্ত কুরবানির ঈদে তাড়াতাড়ি আসব। এই তোর তাড়াতাড়ি আসা? বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছি আমি। চোখের কোনায় জমছে না কোনো জল। যতদিন বেঁচে থাকব, তোর হাসিমাখা মুখটি স্মরণ করে বেঁচে থাকব। এই অধিকারটুকু দিস দোস্ত। আর কিছুই চাই না তোর কাছ থেকে। কোনো ভুল হলে মাফ করে দিস।’

সারাবাংলা/ইউজে/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন