বিজ্ঞাপন

‘শিশু রাইফার মৃত্যুতে তিন চিকিৎসক দায়ী’

July 6, 2018 | 2:14 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে সাংবাদিক রুবেল খানের মেয়ে রাইফা খানের মৃত্যুতে তিন চিকিৎসককে দায়ী করেছে এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি। এরা হলেন-শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরী এবং ম্যাক্স হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেব।

তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, রাইফার চিকিৎসায় এই তিন চিকিৎসকের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও এসেছে এই প্রতিবেদনে।

শুক্রবার (৬ ‍জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস।

বিজ্ঞাপন

রাইফা’র বাবা-মা, ম্যাক্স হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লিখিত ও মৌখিক জবাবসহ মোট ১২ জনের বক্তব্য নিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনা করে তদন্ত প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে সাত দফা পর্যবেক্ষণের ষষ্ঠ দফায় বলা হয়েছে-‘শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরী শিশুটিকে যথেষ্ঠ সময় ও মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেননি। ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেব শিশুটির (রাইফা) গুরুতর অসুস্থ্যতার সময়ে আন্তরিকতার সাথে সেবা দেননি বলে পিতা-মাতা যে অভিযোগ করেছিলেন, তা এই তিন চিকিৎসকের বেলায় সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।’

চতুর্থ দফায় বলা হয়েছে-‘শিশু কন্যা রাফিদা খান রাইফা যখন তীব্র খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয়, তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অনভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাব দেখা হয় এবং ওই সময়ে থাকা সংশ্লিষ্ট নার্সদের আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও এরকম জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো দক্ষতা বা জ্ঞান কোনোটাই তাদের ছিল না।’

বিজ্ঞাপন

তবে, তদন্তে ভুল চিকিৎসার প্রমাণ মেলেনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে- ‘শিশু কন্যাকে ভর্তির সময় থেকে পরবর্তী যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে তাতে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধের প্রয়োগ যথাযথ ছিল।’

তদন্ত প্রতিবেদনে ম্যাক্স হাসপাতালের চরম অব্যবস্থাপনার চিত্রও উঠে এসেছে। পঞ্চম দফায় বলা হয়েছে- ‘শিশুকন্যা রাফিদা খান রাইফাকে অসুস্থতার জন্য ম্যাক্স হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে শেষ চিকিৎসা পাওয়া পর্যন্ত প্রতিটা ক্ষেত্রে তার অভিভাবকের ভোগান্তি চরমে ছিল।’

সপ্তম দফায় বলা হয়েছে-‘তদন্তে স্পষ্ট হয় যে, হাসপাতালে রোগী ভর্তি প্রক্রিয়ায় ভোগান্তি প্রকট। চিকিৎসক ও নার্সদের সেবা প্রদানের সমন্বয়হীনতা ও চিকিৎসাকালীন মনিটরিংয়ের অভাব দেখা যায়। অদক্ষ নার্স ও অনভিজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের ফলে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অনেক দুর্বল। বিশেষত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবায় বিশেষজ্ঞের সার্বক্ষণিক উপস্থিতির সংকট প্রবল।’

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে চার দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এতে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং ম্যাক্স হাসপাতালের সার্বিক ত্রুটিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। ওই হাসপাতালে ডিপ্লোমাধারী নার্স নেই উল্লেখ করা হয়েছে। ডিপ্লোমাধারী নার্সের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার সুপারিশ এসেছে প্রতিবেদনে। ম্যাক্স হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক দ্রুত সেবা নিশ্চিত করা এবং অভিভাবকদের রোগীর নিয়মিত আপডেট জানানোর কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনের সুপারিশে।

প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর হাসান ফেরদৌস বলেন, ’এই তদন্ত প্রতিবেদন আমরা গ্রহণ করছি এবং আমরা আশা করছি দ্রুত দায়ী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ম্যাক্স হাসপাতাল বন্ধ করা হবে। আমরা আবারও বলছি-সমগ্র বিএমএ’র বিরুদ্ধে আমাদের কোন আন্দোলন নয়। আমাদের আন্দোলন শুধুমাত্র দায়ী চিকিৎসক ও ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে। আমাদের আন্দোলন সাংবাদিকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণকারী বিএমএ নেতা ফয়সল ইকবাল চৌধুরী এবং উস্কানিদাতা বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী ডা. খুরশীদ জামিলদের বিরুদ্ধে। আমরা এই আন্দোলন অব্যাহত রাখব।’

সংবাদ সম্মেলনে সিইউজে সভাপতি নাজিমউদ্দিন শ্যামল বলেন, ’আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের পিছু হটার কোন সুযোগ নেই।’

এক প্রশ্নের জবাবে সিইউজে সভাপতি বলেন, ’এই তদন্তে আমাদের সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট হওয়ার কোন সুযোগ নেই।’

এসময় তদন্ত কমিটি সদস্য ও সিইউজের যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভ তদন্তের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

এছাড়া বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম ও যুগ্ম মহাসচিব তপন চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ এবং চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ ও এজাজ ইউসুফী বক্তব্য দেন।

গত ২৮ জুন দৈনিক সমকালের জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক রুবেল খানের আড়াই বছরের শিশু গলা ব্যাথায় আক্রান্ত রাফিদা খান রাইফাকে নগরীর মেহেদিবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৯ জুন রাতে শিশুটি মারা যায়। শুরু থেকেই রুবেল খান তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের অবহেলাকে দায়ী করে আসছেন।

ঘটনার রাতেই সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ম্যাক্স হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ ডা.দেবাশীষসহ তিনজনকে আটক করে চকবাজার থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে বিএমএ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ডা.ফয়সল ইকবাল চৌধুরী কয়েকজনকে নিয়ে চকবাজার থানায় গিয়ে পুলিশ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং আটকদের ছাড়িয়ে নিয়ে যান।

এসময় পুলিশের মধ্যস্থতায় ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে বিএমএ ও সাংবাদিকদের প্রতিনিধিও ছিল। তবে বিএমএ পরে তাদের প্রতিনিধি প্রত্যাহার করে নেয়। কমিটিকে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

বৃহস্পতিবার (০৫ জুলাই) সিভিল সার্জন ডা.আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা.প্রণব কুমার চৌধুরী এবং সিইউজে’র যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভ’র স্বাক্ষরিত তদন্ত প্রতিবেদন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে জমা দেওয়া হয়।

শিশু রাফিয়ার মৃত্যুর জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তার এবং ফয়সাল ইকবালের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদে আন্দোলন করছেন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সাংবাদিক।

সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন

 

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন