বিজ্ঞাপন

পুলিশ এবং ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি

July 6, 2018 | 7:59 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: কোটা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশবাহিনী এবং ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজ এবং অভিভাবকরা। পাশাপাশি গ্রেফতার হওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্তি, সরকারি উদ্যোগে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি করেন তারা।

শুক্রবার (৬ জুলাই) বিকেলে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। প্রতিবাদ সভায় সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশ নেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, আজকে আমরা কোন পরিস্থিতির কারণে প্রেস ক্লাবের সামনে এই প্রতিবাদ সভায় অংশ নিয়েছি- তা সবাই জানেন। সরকার কোটা আন্দলনের সঙ্গে জড়িত সাধারণ শিক্ষার্থীরা- যারা আক্রান্ত হয়েছে, তাদের গ্রেফতার করছে অথচ আক্রমণকারীদের কিছুই বলছে না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে গেলেও চিকিৎসা পাচ্ছে না। আক্রান্তকারীদের হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নুরুকে এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তরিকুলকে বের করে দেওয়া হয়েছে- চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এ কেমন বাংলাদেশ, এ কেমন মানসিকতা।

বিজ্ঞাপন

আমরা উল্টো রাজার দেশে বাস করছি- মন্তব্য করে ফাহমিদুল হক বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রলীগের নামধারীরা শত শত মোটরবাইক নিয়ে হামলা চালাচ্ছে। এটা কিসের লক্ষণ? এই সমাজ আমরা চাই না।

তিনি আরো বলেন, যে সমাজ নাগরিকদের স্বাধীনভাবে চলার এবং মুক্তভাবে কথা বলার অধিকার দিতে পারে না, এমন সমাজ আমরা চাই না। সরকার যদি স্বাধীন সমাজের পরিস্থিতি গড়তে না পারে তবে চলে যাক। বিক্ষুব্ধ মানুষ ঘুরে দাঁড়ালে কিছুই করার থাকবে না। যারা আক্রমণ করেছে তাদের গ্রেফতার করতে হবে এবং আক্রান্তদের বিরুদ্ধে মামলা বিনা শর্তে তুলে নিতে হবে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মুক্তি দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জাকির হোসেন বলেন, আমিও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। আমাদের সময়ে জিয়া-এরশাদের বিরুদ্ধে আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি, আন্দলন করেছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ঢাকা বিশ্ববিশ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক আগেই শিখেছে। অথচ আধুনিক সময়ে এসে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, তা লজ্জার। ন্যায্য আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সরকার যেভাবে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে তা লজ্জাজনক।

বিজ্ঞাপন

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, প্রক্টর বলছে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে কিছুই জানেন না। এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে! তিনি যদি না-ই জানেন, তবে ওই পদে বসে আছেন কেন- প্রক্টর সাহেব ইস্তফা দিয়ে এখনই চলে যান।

লোকজ গবেষক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ বলেন, মরিয়ম নামে তেজগাঁ কলেজের এক শিক্ষার্থী এই আন্দলনে ছাত্রলীগ এবং পুলিশের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। মরিয়ম বলেছে যে সে দুইটি জানান্নাম দেখেছে, একটি সিএনজিতে ছাত্রলীগের যৌন নির্যাতনের জাহান্নাম। অন্যটি থানাতে পুলিশের যৌন হয়রানির ঘটনা। তাই যৌন নির্যাতনের ঘটনাও তদন্ত করে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

ব্যারিস্টার জোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, ছাত্রলীগের চরিত্র বোঝা যাচ্ছে না। কখনো তারা আন্দলনের পক্ষে, কখনো বিপক্ষে। এখন দেখা যাচ্ছে তারা হাতুড়ি, বাঁশ, রড নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। তাদেরকে সাবধান করে দিতে চাই, এভাবে চললে ভবিষ্যতে খারাবি আছে। কেননা এগুলো ফৌজদারি অপরাধ। আর পুলিশও একই অপরাধ করছে। আইনের লোক পোশাক পরে অপরাধ করে পার পেয়ে যাবেন- এমনটা ভাবার কিছু নেই।

পুলিশের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে ব্যারিস্টার জোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, কোটা আন্দলনের পক্ষ নিয়ে আমার একজন জুনিয়র নারী আইনজীবী তার ফেসবুকে ওয়ালে স্ট্যাটাস দিয়েছিল। স্ট্যাটাস দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকাকে তারই ছাত্র ধর্ষণের হুমকি দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কিছু বললেই জামায়াত-বিএনপির ট্যাগ জুড়ে দেওয়া হয়। আপনারা অন্যায় করবেন, রাস্তায় পেটাবেন, ধর্ষণের হুমকি দেবেন- তা তো হতে পারে না।

বিজ্ঞাপন

“১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে উল্লেখ আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি বজায় রাখা প্রক্টরের দায়িত্ব। অথচ তিনি এই ব্যাপারে কিছুই জানেন না। দায়িত্ব নিতে না পারলে প্রক্টরের পদত্যাগ করা উচিত। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোটা আন্দোলন নিয়ে ৫টি মামলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। রাশেদকে গ্রেফতার করে কোথায় রাখা হয়েছে জানা যায়নি। রাশেদের বাবা একজন রাজমিস্ত্রী, জামায়াতের তকমা দিয়ে তাকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। পুলিশ আমাকে ফোন করে জানতে চেয়েছিল আমার উদ্দেশ্য কী, আমি কেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করব। আমি পাল্টা জানতে চাইলাম- আপনার উদ্দেশ্য কী, আমাকে কেন এগুলো প্রশ্ন করছেন।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক অধ্যাপক আহমেদ কামাল বলেন, আমি ৪৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ভিসি এবং প্রক্টর দেখিনি। এতো ঘটনা ঘটছে অথচ তারা কিছুই জানেন না। যেহেতু জানে না, তাই তাদের উচিত না- এই পদ আঁকড়ে থাকা।

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা বাকী বিল্লাহ প্রতিবাদ সভায় সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন।

সারাবাংলা/জেআইএল/এটি

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন