বিজ্ঞাপন

রাজনৈতিক সংকট অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে গভীর: আলী রীয়াজ

July 6, 2018 | 8:36 pm

।। ঢাবি করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাবি: ‘অতীতে বাংলাদেশ যত ধরণের রাজনৈতিক সংকট বা অনিশ্চয়তার মোকাবেলা করেছে এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে তার আপাত সাদৃশ্য থাকলেও এবারের সংকট অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভিন্ন এবং আরো গভীর। এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তা আসলে দো-আঁশলা ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় দৃশ্যত গণতন্ত্রের কিছু কিছু উপাদান থাকলেও সেগুলো প্রধানত শক্তি প্রয়োগের ওপরে নির্ভর করে। ফলে রাষ্ট্রের নিপীড়ক যন্ত্রগুলো আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে এবং তাদেরকে একধরনের দায়মুক্তি দেওয়া হয়।’

শুক্রবার (৬ জুলাই) শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে ‘বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি’ শীর্ষক গণবক্তৃতায় যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। ‘রিডিং ক্লাব ট্রাস্ট’ ও ‘জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন’ যৌথভাবে এ বক্তৃতার আয়োজন করে।

আলী রিয়াজ বলেন, ‘এক সময় যে প্রাণবন্ত সিভিল সোসাইটি ছিল আর তার চিহ্ন পর্যন্ত অবশিষ্ট নেই। গত এক দশকে সিভিল সোসাইটির বিরুদ্ধে অব্যাহত প্রচারণা চালানো হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে নির্বাচনকে জবাবদিহিতার একমাত্র ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। যেহেতু নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেহেতু আর সব ধরনের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা চূর্ণ করে ফেলাই হচ্ছে ক্ষমতাকে নিরুঙ্কুশ করার উপায়। বাংলাদেশের সমাজে অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি, সহিংসতার ব্যাপক বিস্তারের যে সব ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করছি তা আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাবার আশঙ্কা এখানেই।’

বিজ্ঞাপন

রাজনীতিতে ইসলামপন্থীদের প্রভাব বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইসলামপন্থী রাজনীতি দুইভাগে বিভক্ত। তূলনামূলকভাবে রক্ষণশীল এবং সংস্কারপন্থী। গত কয়েক বছরে তুলনামূলকভাবে সংস্কারপন্থী ধারা দুর্বল হয়েছে। তাদের অনুপস্থিতির সুযোগ রক্ষণশীল ইসলামপন্থীরা রাজনীতির প্রান্তিক অবস্থান থেকে রাজনীতির কেন্দ্রে আসতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে রক্ষণশীল ইসলামপন্থীরা রাজনীতর এজেন্ডা নির্ধারণের মতো ক্ষমতা রাখেন। ক্ষমতাসীন দল গত দুই/তিন বছরে এই শক্তিকেই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।’

এসময় তিনি বলেন, ‘যদি আগামী নির্বাচনে বিএনপি এবং অন্যান্য পরিচিত দল অংশগ্রহণ না করে এদের প্রভাবের মাত্র সবচেয়ে বৃদ্ধি পাবে।’

ভারতের ভূমিকা বিষয়ে এ অধ্যাপক বলেন, ‘ভারত চারটি কারণে বাংলাদেশে তার ঘনিষ্ঠ মিত্র সরকার রাখতে চায়। এগুলো হলো, বাংলাদেশে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি, এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবেলা, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের মিত্রের অভাব এবং ইতোমধ্যে ভারতের যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিনিয়োগ হয়েছে তা রক্ষা করা।’

বিজ্ঞাপন

আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের অভাব। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়নি এবং তা ব্যক্তিনির্ভর। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক না হয়ে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতা,অধিকারহীনতায় ভুগছেন। এ সমস্যার প্রতিকারের উপায় অনুসন্ধান করা জরুরি এবং তা করতে হবে তরুণদের।’

সারাবাংলা/কেকে/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন