বিজ্ঞাপন

আতঙ্কের দিন শেষ হচ্ছে আজিমপুর কলোনীর বাসিন্দাদের

July 10, 2018 | 3:16 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ‘বাসার মধ্যে যতক্ষণ থাকি, ততক্ষণই ভয় আর আতঙ্কে থাকতে হয়। না জানি কখন ছাদ খসে মাথার ওপর পড়ে।’

এমন আতঙ্কের কথা জানালেন রাজধানীর আজিমপুর সরকারি কলোনির বাসিন্দা নাফিজা-ই-মীম। বাবা মো. ইদরিস আলীর চাকরির সুবাদে এই কলোনিতে তাদের দীর্ঘ দিনের বাস।

তবে আশার কথা হলো, এই আতঙ্ক নিয়ে আর বেশিদিন বাস করতে হবে না মীমের পরিবারকে। এরইমধ্যে আজিমপুর কলোনিতে নবনির্মিত ২০ তলা ভবনে বাসা বরাদ্দ পেয়েছেন তারা। শিগগিরই উঠবেন নতুন ফ্ল্যাটে। এখন শুধু সময় গুনছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে মীমের সঙ্গে কথা হয় কলোনির ১১ নম্বর ভবনের পুরনো বাসায়।

লম্বাটে ভবনের মাঝখানের সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় মাথার ওপর বেশ কিছু যায়গা থেকে পলেস্তারা খসে পড়ার চিত্র দেখালেন মীম। বললেন, গত রমজান মাসের কোনো এক রাতে এ অবস্থা হয়েছে। তখন একজন আহতও হন। মীম জানান, পুরো ভবনেরই এই অবস্থা। কখন কোথা থেকে ধসে পড়ে তা বোঝা মুশকিল।

পুরোনো ভবনের চারপাশের ড্রেন উপচে ময়লা পানি জমে আছে। ঝোপঝাড় আর ময়লার ভাগাড়ে মশাদের উপদ্রব বেশ প্রকট। এতোদিন এভাবেই অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করতেন এই কলোনির বাসিন্দারা।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মীম বলেন, ’এখানকার অন্যান্য পরিবেশ অনেক ভাল। একটা গ্রামীন পরিবেশ আছে। গাছপালায় ছায়া সুনিবিড় ভাব। কিন্তু ঘরের মধ্যে কেবল আতঙ্ক আর ভয়।’

কথার এক ফাঁকে রান্না ঘর ঘুরে দেখালেন মীম। জানান, কোনো এক রাতে রান্না ঘরের ছাদ খসে পড়ে কাঁচের ক্রোকারিজের সব জিনিস ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। তবে ওই সময় সেখানে কেউ না থাকায় বড় ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেছেন তারা।

দেখা গেল, ওই ভবনের বাসাগুলির দেয়ালের বিভিন্ন জায়গা ফুলে আছে। বৃষ্টি হলে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। ছাদ থেকে বালু খসে পড়ে নষ্ট হয় ঘর-বিছানা।

একই ভবনের চারতলায় থাকেন ফারজানা। তিনিও জানালেন দেওয়াল ধসে পড়ার বিড়ম্বনার কথা। ফারজানা বলেন, ‘একটা সময় ভেবেছিলাম নতুন ভবন মনে হয় হবে না। আমাদের মনে হয় এই পুরনো ভবনেই থেকে যেতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

মীম আর ফারজানাদের অপেক্ষা এখন নতুন ভবনে ওঠার। সবকিছু গুছিয়ে কখন উঠবেন, কবে থেকে শুরু হবে আতঙ্কহীন জীবন সেই কথা ভেবে অনেকটা নির্ভার তারা। জানালেন, বসবাসের যায়গাটা নিরাপদ থাকলে কলোনির জীবনটা আরো অনেক মজার হতো তাদের।

১০ নম্বর ভবনের সামনে কথা হয় সোলায়মান শিহাব নামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি জানান, ২ নম্বর ভবনে তারা বাসা পেয়েছেন। ইতিমধ্যে কিছু মালামালও সেখানে নেওয়া হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে পুরোপুরি চলে যাবেন তারা।

শিহাবের মতে পুরোনো বাসায় আতঙ্কের মধ্যে আর না থাকাই ভাল। কেননা সেখানে কখন বিপদ ঘটবে কেউ জানেনা। তাছাড়া, পুরনো বাসায় একজন মেহমান আসলেও অস্বস্তিতে পড়তে হয় বলে জানালেন শিহাব। তাই নতুন বাসায় ওঠার পর জীবন-যাত্রায় অনেক পরিবর্তন আসবে বলেও মনে করেন তিনি।

আজিমপুর কলোনির পুরনো ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলার পর কলোনির পরিবেশ আরো খোলামেলা হবে জানিয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কুশলী নির্মাতা লিমিটেডের প্রকৌশলী রওশন জামিল বলেন, নতুন ভবনগুলো বহুতল হওয়ায় সংখ্যার দিক দিয়ে ভবন কমবে। জায়গা বাড়বে। সেইসঙ্গে ভেতরের রাস্তাগুলো উন্নত হবে। খেলার মাঠ বাড়ার পাশাপাশি সেগুলো আরো গোছানো হবে। সবমিলে আজিমপুর কলোনির বাসিন্দারা পাবেন উন্নত জীবনের ছোঁয়া।

সারাবাংলা/এমএস/এসএমএন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন