বিজ্ঞাপন

‘মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন-চীনা হুমকি মোকাবেলায় রাশিয়ার সমর্থন ছিল’

July 10, 2018 | 9:26 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রাশিয়া বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দুই বৃহৎ শক্তি যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের হুমকি মোকাবেলায় রাশিয়া বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছিল। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের অবস্থানকে জাতিসংঘে তিনবার ভেটো দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া।

‘বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্ক, মুক্তিযুদ্ধের পরীক্ষিত বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী: বর্তমান ও প্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একথা বলেন। সেমিনারটি রাজধানীর অভিজাত একটি সংগঠনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইন চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘রাশিয়া বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহৎ দুই শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান পরিস্থিতি জটিল করে তোলে। সেই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান বন্ধু ভারতের সমর্থন যেমন অপরিহার্য ছিল ঠিক তেমনি বৃহৎশক্তির হুমকি মোকাবেলার জন্য রাশিয়ার সমর্থনও প্রয়োজন ছিল। যুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধাদের পর্যাপ্ত সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তিনবার ভেটো দিয়েছে। রাশিয়ার ওই ভেটোই সেদিন পাকিস্তানিরা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনে যে বাধা তৈরি করতে চেয়েছিল তা চূড়ান্তভাবে অপসারিত হয়।’

সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান বলেন, ‘রাশিয়া বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। অথচ রাশিয়ার শিক্ষামূলক একাধিক কর্মকাণ্ড ৭৫ সালের পর এদেশে করতে দেওয়া হয়নি, যা দুঃখজনক। আমরা যারা ঢাকার রাশিয়ান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে যেতাম, আমাদেরকে তখন বিশেষ বাহিনীর লোকরা এসে জিজ্ঞাসাবাদ করত, কেন যেতাম, কী কথা, কার সঙ্গে কথা। অথচ রাশিয়া একাত্তরে যে সহযোগিতা করেছে তা কোনোভাবেই বিস্মৃত হওয়া যায় না।’

রাশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. সাইফুল হক বলেন, ‘৭১ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের স্বর্ণ যুগ ছিল। এরপর ৭৫ সালের পর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সম্পর্কে ভাটা পড়ে। কেননা ওই সময়ে আমরা একাত্তরের প্রকৃত বন্ধুদের পাত্তা দেইনি। যারা একাত্তরের বিরোধিতা করেছিল, আমরা ওই সময়ে তাদেরই পাত্তা দিয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরো বলেন, ‘এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে রাশিয়ার সঙ্গে আবার সম্পর্ক শক্তিশালী করার চেষ্টা করলে কিছুটা উন্নতি হয়। কিন্তু ২০০১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সম্পর্কে আবার ভাটা পড়ে। সর্বশেষ ২০০৯ সাল থেকে দুইদেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা বিরাজ করছে।’

রাশিয়া বাংলাদেশকে আগে সাহায্য করত এখন উন্নয়ন সহযোগী এমন মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে রাশিয়া বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে। ভোলায় গ্যাস আহরণে রাশিয়া বিনিয়োগ করবে। রাশিয়ার সহযোগিতায় রুপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে রাশিয়ার সঙ্গে নতুন মাত্রার সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে। জ্বালানি, বাণিজ্য এবং সামরিক তিনখাতে রাশিয়া আমাদের সহযোগিতা করছে। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের পাশাপাশি সামরিক খাতে, বিশেষ করে বিমান বাহিনীর উন্নয়নে রাশিয়া ব্যাপক সহযোগিতা করছে। সামনের দিনে এই সম্পর্ক আরো গভীর হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আমস আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক। এ কারণে সুযোগ পেলেই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের বাইরের একমাত্র রাশিয়ান পুসকিনেরই ভাস্কর্য রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআইএল/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন