বিজ্ঞাপন

‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত আইন নিয়ে আলোচনা চলবে’

July 11, 2018 | 5:11 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সবার কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে আলোচনা চলতে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বলেন, ‘আমাদের আলোচনায় দু’টি জিনিস বেরিয়ে এসেছে। প্রথমত, এই আইনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমরা সবাই একমত; দ্বিতীয়ত, এই আইনটি গণবান্ধব ও মিডিয়াবান্ধক হোক- এটাই আমরা চাই। একটি ভালো আইন হওয়ার যে পথ, এই আলোচনায় সেই পথ পরিষ্কার হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা আইন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই এক্সারসাইজ চলতে থাকবে।’

বুধবার (১১ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের মালিকদের সাথে বৈঠক শেষে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকে ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, একুশে টিভির সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুল ও একাত্তর টিভির সিইও মোজাম্মেল বাবু উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

বৈঠক শেষে আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথমে কিছু রাষ্ট্রদূত আমার সাথে দেখা করেছিলেন। পরে এডিটরস কাউন্সিল, বিএফইউজে ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ব্যক্তিরা আমার সাথে দেখা করেছেন। তখন আমি বলেছিলাম, সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে এই আইনটি আছে। সেখানে তারা তাদের মতামত দেবেন, সেখানে তারা দু’বার গেছেন। আগের বৈঠকে তারা আরেকবার আমার সাথে বসার কথা বলেছিলেন। আজকেই (বুধবার) সেই বসাটা হলো।’

মন্ত্রী বলেন, ‘যে সংশোধনগুলো আনা হয়েছিল সেগুলো নিয়ে তারা আলাপ-আলোচনা করেছেন। তারপরও কিছু কিছু ব্যাখ্যা তারা আমার কাছে চেয়েছেন। আর নতুন কিছু সাজেশন দিয়েছেন। আইনটি নিয়ে যেন এমন পারসেপশন না হয় যে এটি সংবিধানে দেওয়া বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে বন্ধ করে। তবে আমি আগেও বলেছি, এখনও পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কিছুতেই বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সংবিধানের বাকস্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা খর্ব করে কোনো আইন  করবে না।’

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই আইনের মধ্যে কিছু কিছু প্রটেকশনের কথা বলা হয়েছে; সেখানে ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে, সেগুলো যেন আমরা আরেকটু ভালোভাবে দেখি। সেই সুপারিশগুলো আমরা নিয়েছি। আমাদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাথে আলাপ-আলোচনা করতে হবে, সেই সুপারিশগুলো আমি পৌঁছে দেবো। আমি সম্মত হয়েছি, আমরা আরেকবার বসব। তারপর সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে যে সিদ্ধান্ত হবে সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিলটা পাস হবে। পুরনো আইনের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেগুলো যেন দূর করে আমরা সারাবিশ্বের কাছে একটা রোল মডেলের মতো আইন করতে পারি।’

বিজ্ঞাপন

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন কবে নাগাদ পাস হতে পারে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি আইন মন্ত্রণালয়ের আইন নয়। এটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আইন। তারা যখন পাস করার জন্য উপস্থাপন করবেন, তখন পাস হবে। তবে ১২ জুলাই হয়তো পার্লামেন্ট শেষ হয়ে যাবে। দুই মাসের মধ্যে আবার পার্লামেন্টকে বসতে হবে। আমার মনে হয় ওই সেশনে এই আইনটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর্যায়ে আমরা এখনও পৌঁছাইনি। আমরা ধারাবাহিক আলোচনার মধ্যে আছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে রয়েছে। তারা উদ্যোগী হয়ে আমাদের সাথে আলোচনা করেছে।’

মাহফুজ আনাম আরও বলেন, ‘খসড়া আইনটি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, আমরা আইনমন্ত্রীকে অনেকগুলো প্রস্তাব দিয়েছি। মন্ত্রীকে ধন্যবাদ। তিনি প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন, কীভাবে এগুলো গ্রহণ করা যায় তা দেখবেন বলে জানিয়েছেন। সিদ্ধান্ত পার্লামেন্ট নেবে, আমরা পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের পক্ষ থেকে বলেছি, সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেন কোনোভাবেই খর্ব না হয়, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেন রক্ষা করা যায়। এটা মন্ত্রীও বলেছেন, সরকারের উদ্দেশ্যও এটা। ওনারাও চান না সাংবাদিকদের স্বাধীনতা খর্ব হোক। তবে আইনের ধারার মধ্যে মিস ইন্টারপ্রিটেশন থাকতে পারে, যেগুলোর ওপরে আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি। কনসার্ন এক্সপ্রেস করেছি।’

বিজ্ঞাপন

একুশে টিভির সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘খসড়া আইনের বিভিন্ন ধারার ব্যাখ্যায় অস্পষ্টতা ছিল, আইনমন্ত্রী সেগুলো স্পষ্ট করেছেন। সাংবিধান বা অন্য আইনের সঙ্গে কোনো কিছু সাংঘর্ষিক কিনা, সেগুলো বলেছেন। আমরা বলেছি, দেশের স্বার্থে, নিরাপত্তার স্বার্থে একটা নিরাপত্তা আইন চাই। আইনের ব্যাখ্যামূলক ও স্পিরিট নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

একাত্তর টিভির সিইও মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘আমরা মনে করি এই আইনের মাধ্যমে আমাদের সাংবাদিকতা কোনোভাবেই ক্ষুন্ন হবে না। তবে অপসাংবাদিকতা, ডিজিটাল মিডিয়ায় যে নৈরাজ্য চলছে, গুজব বা ফেক নিউজের যে সংস্কৃতি চলছে, সেটার মোকাবিলা করা প্রয়োজন। সেটা উনি যেমন মনে করেন, আমরাও মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় যারা কাজ করি, তারা আরও বেশি প্রয়োজন বলে মনে করি।’

সারাবাংলা/এইচএ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন