বিজ্ঞাপন

১০ মেশিনের ৯টিই নষ্ট, বেহাল দশায় স্মার্টকার্ড মুদ্রণ প্রকল্প

July 16, 2018 | 9:55 pm

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ঝিমিয়ে পড়ছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের (স্মার্টকার্ড) মুদ্রণ প্রক্রিয়া। কার্ড মুদ্রণকারী ১০ মেশিনের মধ্যে ৯টি নষ্ট থাকায় উৎপাদন চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। বাকি একটি মেশিন সচল থাকলেও তা ঠিকমতো কাজ করছে না। ফলে যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে স্মার্টকার্ড মুদ্রণ। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গত জানুয়ারিতে ইসির নিজস্ব প্রযুক্তিতে ১০টি মেশিনের মাধ্যমে স্মার্টকার্ড মুদ্রণ শুরু হয়। শুরুতে প্রতিদিন গড়ে দেড় লাখ কার্ড মুদ্রণ হলেও বর্তমানে তা কমে ৪০ হাজারে নেমে এসেছে। বর্তমানে পুরো প্রকল্পই বেহাল দশায় রয়েছে।

জানা গেছে, উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ড মুদ্রণে গত কয়েক মাস ধরে কারিগরি সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু দক্ষ টেকনিশিয়ান না থাকায় এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারছে না ইসি। গত জুন মাসে ১০টি মেশিনের মধ্যে চারটি মেশিন বন্ধ হয়ে যায়। চলতি মাসে আরো ৫টি মেশিনেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই মেশিনগুলো মাঝে মাঝে চালু হলেও মেশিনের সক্ষমতা কমে গেছে। ১০টি মেশিনের ৯টিই একপ্রকার বন্ধ। বাকি একটি মেশিন সচল থাকলেও সেটি যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে যেকোনো সময় স্মার্টকার্ড মুদ্রণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র আরও জানায়, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ৯ কোটি স্মার্টকার্ড ভোটারের মধ্যে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। এই অবস্থায় অধিকাংশ মেশিন নষ্ট থাকায় তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। চলতি জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ৪ কোটির কিছু বেশি কার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। এখনো লক্ষ্যমাত্রার পৌঁছাতে হলে আরো ৫ কোটি কার্ড প্রস্তুত করতে সহবে। যা একপ্রকার অসম্ভব। যদিও বর্তমানে দেশে ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৪২ লাখ। বাকি ১ বা দেড় কোটি ভোটারকে পরবর্তী ধাপে স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের পরিচালক আবদুল বাতেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো মেশিন বন্ধ হয়েছে কিনা খবর না নিয়ে বলতে পারছি না। আমি যতটুকু জানি স্মার্টকার্ড প্রিন্টিং এখনো চলছে।’

এর আগে গত বছরের শেষ দিকে স্মার্টকার্ড প্রকল্প থেকে ফ্রান্সের ‘ওবার্থু’ কোম্পানি সরে গেলে নিজস্ব প্রযুক্তিতে, কম খরচে গাজীপুরের মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে শুরু হয় স্মার্টকার্ড মুদ্রণ প্রকল্প। এই প্রকল্পে সহায়তা করার জন্য ‘টাইগার আইটি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অর্ধশত কর্মী স্মার্টকার্ড মুদ্রণ কাজ শুরু করে। এদের সঙ্গে যোগ দেন ইসির এনআইডি প্রকল্পের টেকনিক্যাল এক্সপার্টরা।

বিজ্ঞাপন

ফেব্রুয়ারিতে টাইগার আইটির লোকদের সঙ্গে ইসির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। পরে তাদের ইসিতে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে এমন আশ্বাসে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়। তবে ইসির আশ্বাস বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত ৩০ মে আইটির লোকজন চাকরি ছেড়ে দেয়। এরপর থেকেই স্মার্টকার্ড মুদ্রণকারী মেশিনগুলো নষ্ট হতে থাকে।

এ ব্যাপারে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘কতটি মেশিন নষ্ট আছে এবং উৎপাদন কমে গেছে কিনা তা আমার জানা নেই।’

ইসি সূত্র জানায়, স্মার্টকার্ড মুদ্রণ-বিতরণের জন্য আইডিয়া প্রকল্পের সঙ্গে ২০১৫ সালে ফ্রান্সের ‘ওবার্থু টেকনোলজি’র প্রায় ৮০০ কোটি টাকার চুক্তি হয়। এর আগে বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপির আইডিইএ প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সালের মে মাসে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে প্রথমে প্রায় ২০ কোটি ডলারের চুক্তি সই করে সরকার। তখন এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) ঋণ ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জে পাওয়া এ ঋণ বাংলাদেশকে ৪০ বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে। এর মধ্যে প্রথম ১০ বছর কোনো সুদ দিতে হবে না।

বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় এ প্রকল্পের অধীনে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার ফ্রান্সের ‘ওবার্থু টেকনোলজি’র সঙ্গে চুক্তি হয়। পরে প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে চলতি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত হয়। কিন্তু চুক্তির শর্ত ওবার্থু না মানায় নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস আগেই তা বাংলাদেশ চুক্তি বাতিল করে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন