বিজ্ঞাপন

আজ দ্বিগুণ মিষ্টি বিক্রির প্রত্যাশা

July 19, 2018 | 9:44 am

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : রাজধানীসহ সারাদেশের মিষ্টির দোকানগুলোতে চলছে মিষ্টি বিক্রির বাড়তি প্রস্তুতি। ক্রেতাদের যেন চাহিদামতো মিষ্টি সরবরাহ করা যায় সেজন্য কিছুটা বেশি পরিশ্রম করছেন এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবাই। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বৃহস্পতিবারসহ (১৯ জুলাই) আরো দুই একদিন দ্বিগুণেরও বেশি মিষ্টি বিক্রির প্রত্যাশা করছেন দোকান মালিকরা।

কারণ উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) বা সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে বৃহস্পতিবার। যদিও মিষ্টি ব্যবসায়ীদের মতে, এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন এবং পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মিষ্টি বিক্রি হয়। সে তুলনায় এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন এতোবেশি মিষ্টি বিক্রি হয় না। তারপরেও এদিন অন্য সাধারন দিনের তুলনায় বেচাকেনা অনেক বেশি হয়।

বাংলাদেশে একসময় পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলে কিংবা অন্য যে কোন শুভ সংবাদ দেওয়ার সময় মিষ্টি নিয়ে যাওয়াটা এক ধরনের সামাজিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে অন্যতম অনুসঙ্গও ছিল মিষ্টি বিতরণ। তাই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন অতিরিক্ত চাহিদাকে মেটাতে তিন চার দিন আগে থেকেই দোকানদার ও কারিগররা মিষ্টি বানানোর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিতেন।

বিজ্ঞাপন

তবে নানা কারণে আগের চেয়ে মিষ্টি বিতরণের পরিমাণ কিছুটা কমে এসেছে দেশে। এর পেছনে স্বাস্থ্যসচেতনতা যেমন একটি কারণ তেমনি এখন আর আনন্দের সংবাদ ভাগাভাগি করে নিতে আগের মতো মিষ্টি বিতরণ করেন না সাধারণ মানুষ। আগে পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর পাস করা পরিবারগুলোতে আনন্দের বন্যা বইত। আত্মীয়-স্বজনদের আনন্দের খবর দেওয়ার পাশাপাশি মিষ্টি মুখ করানোর প্রথা চালু ছিল।

অন্যদিকে বর্তমানে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার অনেক বেশি। এছাড়াও লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী প্রতি বছর এ প্লাস পাচ্ছে। দেশে শিক্ষার হার বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি পরিবারেই কম বেশি উচ্চ শিক্ষিত মানুষ রয়েছেন। সবার প্রত্যাশাই যেন এ প্লাস কিংবা গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া। ফলে পরীক্ষায় পাস করা কিংবা এ প্লাস পাওয়া প্রায় সব পরিবারেরই প্রত্যাশিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা এমন যে এখন অনেক পরিবার তাদের সন্তান গোল্ডেন এ প্লাস কিংবা এ প্লাস না পেলে এটাকে ভালো ফলাফল বলে মনে করেন না। আর এই কারণে মিষ্টি বিতরণের পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে। আগে যেখানে পাস করলেই মিষ্টি বিতরণ করা হতো, এখন সেখানে কেবল এ প্লাস পেলেই তা বিতরণ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর নয়াপল্টনের ডিআইটি এক্সটেনশন রোডের মুসলিম সুইটসের মালিক মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কথা হয় মিষ্টি বিক্রির হালহকিকত নিয়ে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, সাধারণত এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ও পহেলা বৈশাখের দিন সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মিষ্টি বিক্রি হয়। এছাড়াও রোজার ঈদ ও বিভিন্ন পূজার সময়ে মিষ্টি বেশি বেচাকেনা হয়।

এইচএসসির ফল প্রকাশের দিন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ কিংবা তার চেয়ে কিছুটা বেশি পরিমাণ মিষ্টি বিক্রি হয় বলে জানালেন এই ব্যবসায়ী। তবে এজন্য খুব বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হয় না বলে জানালেন তিনি।

অন্যদিকে রাজধানীর উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের রাজলক্ষী কমপ্লেক্সে অবস্থিত আলী বাবা সুইটসের মালিক মোহাম্মদ আবদুস সালাম সারাবাংলাকে বলেন, কয়েক বছর আগে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর যে পরিমাণ মিষ্টি বিক্রি হত। বর্তমানে সেই অবস্থা এখন নেই। বর্তমানে আন্দন প্রকাশের ধরন পরিবর্তন হয়েছে।

একই রকম কথা জানালেন মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের বনফুল সুইটসের মালিক আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন আগে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১০/১৫ গুণ বেশি মিষ্টি বিক্রি হত। বর্তমানে আর সেই অবস্থা নেই। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখন এত বেশি ছাত্রছাত্রী এ প্লাস পায়, যে অভিভাবক মিষ্টি বিলি করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর মতিঝিল, কমলাপুর, শাহজাহানপুর, মৌচাক, বাংলামটর, ধানমন্ডি, মিরপুর, শেওড়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রমপুর, ভাগ্যকুল, রসুইঘর, মরণচাঁদসহ বেশ কয়েকটি মিষ্টি দোকানের মালিক ও বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে কথা বলে প্রায় একই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার ২০১৮ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হচ্ছে। এইচএসসির ফল উপলক্ষে রাজধানীর মিষ্টি দোকানগুলোতে ২০ থেকে ৩০টি আইটেমের মিষ্টি সরবরাহ করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্পেশাল সন্দেশ, কাচাগোল্লা, বাসমতি চমচম, মালাই ভোগ, মালাই চপ, মিষ্টি চমচম, স্পেশাল রসগোল্লা, রসমালাই, রাজভোগ, চাঁদ ভোগ, লাড্ডু, মিষ্টি দই, টেস্টি রোল, জিলাপী, সরমলাই, জাফরান ভোগ, কালো জাম, হরলিকস চমচম, মতি লাড্ডু।

মান ও ব্র্যান্ড ভেদে এইসব মিষ্টির দাম কেজি প্রতি ২৫০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত।

সারাবাংলা/জিএস/এসএমএন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন