বিজ্ঞাপন

ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, মশাবাহিত রোগ বাড়ার শঙ্কা

July 23, 2018 | 10:52 am

।। জাকিয়া আহমেদ ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় চলতি জুলাই মাসে রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম। অথচ এ বছরের জুন মাসেও গত বছরের তুলনায় এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কম ছিল।

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, এবারের মৌসুমে ভারি বর্ষণে এডিস মশাবাহিত রোগ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে সবাইকে সচেতন থাকতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত জানুয়ারি থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, বারডেম, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০৭ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন একজন।

বিজ্ঞাপন

তবে এই মুহূর্তে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৫৫ জন।

অন্যদিকে অ্যাপোলো, স্কয়ার, ইবনে সিনাসহ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ভর্তি হয়েছিলেন ৫৯০ জন ডেঙ্গু রোগী। বর্তমানে ভর্তি আছেন ৪৪ জন এবং চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৪২ জন। রোগীদের মধ্যে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে একজন, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে দুইজন, ইউনাইটেড হাসপাতালে একজন মারা গেছেন।

বিজ্ঞাপন

ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে জনসাধারণকে সচেতন থাকতে পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এবছর এখন পর্যন্ত কোনো হাসপাতালে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তির তথ্য পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস বর্ষা মৌসুম চলে। তাই গত জানুয়ারি থেকে চলতি মাস পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের সচেতনতামূলক প্রচারণা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। পরিষ্কার পানিতেই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বাহক এডিস মশার জন্ম হয়। তাই অত্যন্ত খেয়াল রাখতে হবে যেন কোথাও পানি জমে না থাকে। বালতিতে অতিরিক্ত পানি রাখা যাবে না, ফুলের টব, ডাবের খোসাসহ কোথাও খোলা জায়গায় যেন পানি জমে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

দেশের ৬৪ জেলার সিভিল সার্জনকসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সর্ম্পকে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অধিদফতর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান আয়েশা আখতার। ডেঙ্গু রোধে হাসপাতালগুলোতেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ’ডেঙ্গু জ্বরের জন্য ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুইশ চিকিৎসককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা দুই সিটি করপোরেশনের ৯৩ টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানে জরিপ চালায়। এতে এই ১০০ এলাকার মধ্যে ১৯টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এদিকে, আইইডিসিআর ঢাকা শহরের সব হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তঃবিভাগকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের দৈনিক প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক লিফলেট তৈরি ও বিতরণ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্য ও শিক্ষামূলক উপকরণ আইইডিসিআর ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করা হয়েছে বলে সারাবাংলাকে জানান প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর। তিনি বলেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত জাতীয় নির্দেশিকা আইইডিসিআর-এর ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মৌসুম পূর্ব, মৌসুম ও মৌসুমোত্তর এডিস মশার তিনটি কীটতাত্ত্বিক জরিপ শেষ হয়েছে। এছাড়া ঢাকা শহরে একটি ডেঙ্গু প্রিভেলেন্স সার্ভে সম্পন্ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরেও এডিস মশা শনাক্তকরণে একটি জরিপ করেছে।

সারাবাংলা/এসআই/এসএমএন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন