বিজ্ঞাপন

ডিসিদের যেসব নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

July 24, 2018 | 5:30 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সন্ত্রাস নির্মূল করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, ভূমি ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি, নারী ক্ষমতায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহসহ বিভিন্ন বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) দুপুরে তিন দিনব্যাপী ‘জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন ২০১৮’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন।

চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশীশক্তি ও সন্ত্রাস নির্মূল করতে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিনা দ্বিধায় আপনারা এই টেন্ডারবাজি, পেশীশক্তি, সন্ত্রাস মাদক— এগুলো নির্মূল করবেন। এখানে কে কোন দল করে, কে কী করে- এগুলো দেখার কোনো দরকার নেই। যদি কেউ বাধা দেয়, আমি এটুকু আপানাদের অনুমতি দিতে পারি যে আপনারা সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। আমার অফিসে যোগাযোগ করতে পারবেন। আমরা সমাজ থেকে এসব অশুভ জিনিসগুলো দূর করে মানুষের শান্তি নিশ্চিত করতে চাই।’

বিজ্ঞাপন

ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনিমার্ণে ডিসিদের সহযোগিতা চেয়েও কিছু নির্দেশনা ও করণীয় গ্রহণের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকারি সেবা পেতে সাধারণ মানুষ যেন কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে। তরুণদের মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে, মাদকবিরোধী অভিযান চলবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সব ক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আরও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে উদ্যোগী হতে হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে নেতৃত্ব দিতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে। শিক্ষার সব স্তরে নারীশিক্ষার হার বাড়াতে ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

জনগণের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে করণীয় প্রসঙ্গে নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কৃষিতে উৎপাদন বাড়াতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নির্বিঘ্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। সাধারণ মানুষকে সহজে সুবিচার প্রদান ও আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতগুলোকে কার্যকর করতে হবে। পাশাপাশি ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বাজারজাত প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা তৈরি এবং এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২’ এবং এ সংক্রান্ত স্থায়ী নির্দেশনাবলি অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসকরা জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসব কমিটিকে সক্রিয়, গতিশীল ও ফলপ্রসূ করতে হবে। দফতরগুলোর বিদ্যমান সেবা তৃণমূলে পৌঁছানোর লক্ষ্যে তথ্য মেলা, সেবা সপ্তাহ পালনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা, পণ্য-পরিবহন ও আমদানি-রফতানি নির্বিঘ্ন করা এবং চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশীশক্তি ও সন্ত্রাস নির্মূল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাজার-ব্যবস্থার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের দিকে গুরুত্বারোপ করতে হবে। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির যেকোনো অপচেষ্টা কঠোর হাতে দমন করতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন ও পাচার, যৌতুক, ইভটিজিং এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে নজরদারি বাড়াতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নিজ নিজ জেলায় ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ বাড়াতে হবে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংস্কৃতিবোধ ও বিজ্ঞানমনস্কতা জাগিয়ে তুলতে হবে। প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ ছাড়া, পার্বত্য জেলাসমূহের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বনাঞ্চল, নদী-জলাশয়, প্রাণিসম্পদ ও গিরিশৃঙ্গের সৌন্দর্য সংরক্ষণ এবং পর্যটন শিল্প, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প এবং কুটির শিল্পের বিকাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছে, প্রতিটি গ্রামকে শহর হিসেবে গড়ে তুলে নাগরিক সুবিধা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। সেই পরিকল্পনাটা আমাদের রয়েছে।

এ ছাড়াও যত্রতত্র ময়লা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলতে দেশবাসীর মাঝে সচেতনতা তৈরির জন্য পদক্ষেপ নিতে ডিসিদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে— সে বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া স্কুল-কলেজে জাতীয় সংগীত চর্চার প্রতিযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি নির্দেশনা দেন।

বিজ্ঞাপন

ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এরপর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক শায়লা ফারজানা, নওগাঁর জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান, চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিন আহমেদ, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল হান্নান, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব নজিবুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ৬৪ জেলায় কর্মরত জেলা প্রশাসক এবং আট বিভাগীয় কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। তিন দিনের এই সম্মেলন চলবে ২৬ জুলাই পর্যন্ত।

আরও পড়ুন-

‘আমার ইচ্ছা ছিল উন্নয়ন যেন দৃশ্যমান হয়’

তিন দিনের ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে, ডিসিদের প্রধানমন্ত্রী

দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে ডিসি’দের প্রতি আহ্বান

ক্রিকেটে মেয়েরা বোধ হয় একটু বেশি ভালো করছে: প্রধানমন্ত্রী

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন