বিজ্ঞাপন

নারী ও শিশুদের প্রাণ নিচ্ছে ডেঙ্গু!

July 25, 2018 | 8:28 am

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে ৯ বছরের তাহমিদ ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয় ১৫ জুলাই। একদিন পরই মৃত্যু হয় তার। অন্যদিকে হেমোরেজিক শকে আক্রান্ত ২৬ বছরের সেজুঁতি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন ১২ জুলাই, এর তিন দিন পর ১৫ জুলাই মারা যান তিনি। আবার ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হয়ে এক বছর সাত মাস বয়সী আরিয়ান সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১২ জুলাই ভর্তি হওয়ার পর তার মৃত্যু হয় ১৫ ‍জুলাই। এর আগে ৪ জুলাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশু হাসপাতালে ভর্তি আট বছরের হিমু মারা যায় চার দিন পর, ৮ জুলাই।

এরও আগে, গত ২১ জুন হেমোরেজিক শকে আক্রান্ত হয়ে ৩১ বছরের রোজলিন বৈদ্য ভর্তি হয়েছিলেন হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন দিন পর মারা যান তিনি। একই হেমোরেজিক শকে আক্রান্ত হয়ে ৭ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দুই দিন পর মারা যান ৩৪ বছরের ফারজানা আক্তার। আর ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত নার্গিস বেগম গত ২৫ জানুয়ারি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরদিনই মারা যান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে দেওয়া উপাত্ত পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি বছরে ডেঙ্গু জ্বর, ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ও হেমোরেজিক শকে আক্রান্ত হয়ে নারী ও শিশুদেরই মৃত্যু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টারের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার সারবাংলা’কে বলেন, চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া এবং আক্রান্ত হওয়া রোগীর মধ্যেও নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। ঢাকা শিশু হাসপাতালের উপ-পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু তৈয়বও বলছেন, গত ছয় মাসের তুলনায় এ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা বেড়েছে হাসপাতালে। একইসঙ্গে ব্যক্তিগত চেম্বারেও শিশু রোগীদের সংখ্যা বেড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা শহরের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং বাকি সাত বিভাগীয় শহরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮৭০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন সাত জন, বর্তমানে রোগী ভর্তি আছেন ৮৮ জন এবং চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৭৫ জন।

বিজ্ঞাপন

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে এ বছরের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা দুই সিটি করপোরেশনের ৯৩টি ওয়ার্ডের একশটি স্থানে জরিপ চালায়। এর মধ্যে ১৯টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যদিও এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে, জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ঢাকা শহরের সব হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তঃবিভাগকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের দৈনিক প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক লিফলেট তৈরি ও বিতরণও করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্য ও শিক্ষামূলক উপকরণ আইইডিসিআর ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করা হয়েছে বলে সারাবাংলা’কে জানান প্রতিষ্ঠানটির ডা. এ এস এম আলমগীর। তিনি বলেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত জাতীয় নির্দেশিকা আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মৌসুম পূর্ব, মৌসুম ও মৌসুমোত্তর এডিস মশার তিনটি কীটতাত্ত্বিক জরিপ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা শহরে একটি ডেঙ্গু প্রিভ্যালেন্স সার্ভে সম্পন্ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরেও এডিস মশা শনাক্তকরণে একটি জরিপ করেছে।

বিজ্ঞাপন

আর ডেঙ্গু রোগের বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে আইইডিসিআরের এই জেষ্ঠ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, প্রথমবার ডেঙ্গু জ্বর হলে তাকে কেবল ডেঙ্গু জ্বরই বলা হয়, যেখানে জ্বরের সঙ্গে শরীর ব্যাথা হবে আবার সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তখন তাকে বলা হয় হেমোরেজিক শক। আর জ্বরের সঙ্গে রক্তপাত হওয়া সত্ত্বেও যদি সময়মতো চিকিৎসা না দেওয়া হয় এবং প্লাটিলেট অনেক কমে যায়, তখন তাকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বলা হয়ে থাকে।

ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ সারাবাংলা’কে বলেন, ‘এখন মাঝে মাঝেই বৃষ্টি হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতার কারণে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে। যে কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।’

মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টির প্রবণতা বেশি থাকে বলে জানুয়ারি থেকেই সচেতনামূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে জানিয়ে ডা. আয়েশা আক্তার সারাবাংলা’কে বলেন, ‘পরিষ্কার পানিতেই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বাহক এডিস মশার জন্ম হয়। তাই অত্যন্ত খেয়াল রাখতে হবে যেন কোথাও পানি জমে না থাকে। বালতিতে অতিরিক্ত পানি রাখা যাবে না, ফুলের টব, ডাবের খোসাসহ কোথাও খোলা জায়গায় যেন পানি জমে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

দেশের ৬৪ জেলার সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এ সর্ম্পকে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান আয়েশা আখতার। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে হাসপাতালগুলোতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু জ্বরের জন্য ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুইশ চিকিৎসককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’

সারাবাংলা/জেএ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন