বিজ্ঞাপন

হজ ফ্লাইটে শিডিউল বিপর্যয় নয়, পুনর্বিন্যাস— দাবি বিমানের

July 26, 2018 | 8:11 am

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : রোববার (২২ জুলাই) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দু’টি হজ ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যেতে পারেনি। এতে করে দুর্ভোগে পড়েন প্রায় ৮০০ যাত্রী। পরে নতুন করে ওই দুই ফ্লাইটের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়। হজ ফ্লাইটের শিডিউল নিয়ে হজযাত্রীদের ভোগান্তির পরও বিমান বলছে, ফ্লাইটে কোনো বিপর্যয় হয়নি। ফ্লাইট শিডিউল রিভাইজ বা পুনর্বিন্যাস করে যাত্রীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেন তারা পরিবর্তিত সময় অনুযায়ী বিমানবন্দরে রিপোর্ট করেন।

সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সকাল সাড়ে ১০টার ফ্লাইট পরিবর্তন করে নেওয়া হয় দুপুর ৩টায়, আর বিকেল সাড়ে ৪টার ফ্লাইটের সময় নির্ধারণ করা হয় রাত ১টায়। এতে করে হজযাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ বলছে, গত ১০ দিনে প্রায় ৬০টির মতো ফ্লাইট পরিচালনা করলেও দুই-তিনটি ফ্লাইটে দেরি হয়েছে।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম সারাবাংলা’কে বলেন, গত ২১ জুলাই রাতে বিজি ০৩৫ ফ্লাইট ছিল রাত ৮টায়। কিন্তু প্রায় সোয়া ১২ ঘণ্টা পর সেই ফ্লাইট ছেড়ে যায় পরদিন সকাল সোয়া ৮টায়। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকায় এসে হজক্যাম্পে অবস্থান নেন যাত্রীরা। এমনিতেই তারা ক্লান্ত অথবা অনেক কিছু নিয়ে শঙ্কায় ভোগেন। তার ওপর যদি হজ ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে না যায়, তাহলে সেটা খুব কষ্টের বিষয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ফ্লাইট দেরি হলে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। বিমানের উচিত হজ ফ্লাইটের বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া, আরও দায়িত্বশীল হওয়া। হজযাত্রীদের বিড়ম্বনার কারণে আমরা খুবই বিব্রত। আমরা আশা করব, এমন ঘটনা আর ঘটবে না।

শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, গত ২১ জুলাই রাতে আমি নিজে বিমানবন্দরে ছিলাম। ফ্লাইট বিড়ম্বনা নিয়ে বিমান কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, আবার হজযাত্রীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। হজযাত্রীরা তখনও শঙ্কায়— পরদিন ফ্লাইট পাবেন কিনা।

তিনি আরও বলেন, নিয়ম হলো— একটি ফ্লাইট যদি আট ঘণ্টার বেশি ডিলে হয়, তাহলে সেই ফ্লাইটের যাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা, খাবারসহ অন্যান্য দায়িত্ব নেবে এয়ারলাইন্স। কিন্তু বিমান তা করেনি। ধরেই নিলাম, এখানে হজ ক্যাম্প রয়েছে, কিন্তু তাদের খাবারের দায়িত্ব বিমানের নেওয়া উচিত ছিল।

বিজ্ঞাপন

‘ফ্লাইট দেরি হওয়ায় সে রাতে আমি বিমানবন্দরে ছিলাম। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ফ্লাইট দেরি হওয়ার কারণে যাত্রীদের কী পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে- তা ওই যাত্রীদের সঙ্গে কথা না বললে বোঝা যাবে না। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত যাত্রীদের কমফোর্ট (স্বস্তি) দেওয়া’,- বলেন তসলিম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ সারাবাংলা’কে বলেন, ‘এটা এত বড় একটা অপারেশন, বিমানের কর্মীরা রাত-দিন কাজ করছে। একইসঙ্গে একটা এয়ারক্রাফটের টেকনিক্যাল সমস্যা হতে পারে, ছোটখাটো মেইনটেন্যান্সের (ব্যবস্থাপনা) প্রয়োজন হতে পারে। একটা এয়ারক্রাফট ঢাকা থেকে টেকঅফ করার পর জেদ্দা পৌঁছানো, জেদ্দা থেকে ফিরে আসা এবং পরবর্তী ফ্লাইটের জন্য তাকে প্রস্তুত করা— সব মিলিয়ে প্রায় ১৮ ঘণ্টার মতো সময় লেগে যায়। এটি একটি বিরাট বিষয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুয়েকটি ফ্লাইট যেতে দেরি হয়েছে। কারণ হজের সময়ে জেদ্দা বিমানবন্দর অত্যন্ত ব্যস্ত থাকে। সারাবিশ্ব থেকে হজ ফ্লাইট সেখানে আসে। কোনো কারণে যদি জেদ্দার আকাশে ঢুকতে না পারলে বিমানবন্দর যদি নামার অনুমতি পরে দেয়, তখন উড়োজাহাজ হোল্ডিংয়ে থাকে, আকাশে চক্কর খায়। একটা ফ্লাইট ডিলে হয়ে গেলে অন্যান্য ফ্লাইটেও তার প্রভাব পড়ে।’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে এ বছর প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ যাত্রী হজ পালনে সৌদি আরব যাবেন।  এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১৫৫টি ডেডিকেটেড ও ৩২টি শিডিউল ফ্লাইটে সৌদি আরব যাবেন ৬৩ হাজার ৫৯৯ জন হজযাত্রী। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাত হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৫৬ হাজার ৪০১ জন হজযাত্রী।

বিজ্ঞাপন

এসব যাত্রীদের সৌদি আরব নিয়ে যেতে বিমানের তিনটি নিজস্ব বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর এবং লিজে নেওয়া একটি বোয়িং উড়োজাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে চলাচলকারী বিমানের নিয়মিত শিডিউল ফ্লাইটেও হজযাত্রীরা সৌদি আরব যাবেন। এমনকি হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা ও জেদ্দা— উভয় স্থানেই বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছে।

শাকিল মেরাজ জানান, ২৩ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত বিমানের আটটি শিডিউল ও ৪৩টি ডেডিকেটেড ফ্লাইটসত মোট ৫১টি ফ্লাইটে ২২ হাজার ৩৮৪ জন এবং সৌদিয়া এয়ারলাইন্সে ২১ হাজার ৩৩১ জন মিলিয়ে মোট ৪৩ হাজার ৭১৫ জন হজযাত্রী এরই মধ্যে সৌদি আরব পৌঁছেছেন।

১৪ জুলাই হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার প্রথম ১০ দিনে কোনো ধরনের ‘ক্যাপাসিটি লস’ বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি বলে জানান শাকিল মেরাজ। তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত টিকিট বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার। তবে শঙ্কার কথা হলো— এখনও আগামী ২৯ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত এখনও বিমানের বিভিন্ন ফ্লাইটের প্রায় ৮ হাজার টিকিট অবিক্রিত রয়েছে। আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে টিকিটগুলো বিক্রি না হলে সব হজযাত্রীকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়াটা কঠিন হবে। কারণ, এ বছরে সৌদি সরকার নির্ধারিত স্লটের বাইরে অতিরিক্ত কোনো ফ্লাইট পরিচালনা করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। সে কারণে যাত্রীর অভাবে কোনো ফ্লাইটে আসন খালি থাকলে ওই ফ্লাইটের হজযাত্রীদের যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, তাদেরকে অতিরিক্ত কোনো ফ্লাইটে নেওয়ার সুযোগ থাকবে না।’

এ কারণে বিমানের পক্ষ থেকে সব হজ এজেন্সিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকিট সংগ্রহ করার জন্য বিমান থেকে অনুরোধ করা হচ্ছে বলে জানান শাকিল মেরাজ।

সারাবাংলা/জেএ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন