বিজ্ঞাপন

কয়লায় তুলকালাম

July 27, 2018 | 8:53 am

।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের সোনা কেলেঙ্কারির রেশ না কাটতেই বেরিয়ে এসেছে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে এক লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন কয়লা লোপাটের ঘটনা। প্রায় দুইশ কোটি টাকা মূল্যের এ কয়লা নিয়ে এখন তুলকালাম চলছে দেশজুড়ে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের এরই মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতের দুর্নীতিগুলোর যথাযথ বিচার না হওয়ায় এই ‘সাগর চুরি’র ঘটনা ঘটেছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য করছেন তারা।

দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন এ কাণ্ডে এরই মধ্যে সরকারের টনক নড়েছে। এ ঘটনা রাজনীতিতেও ছড়াচ্ছে উত্তাপ। সেইসঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এ কয়লা কেলেঙ্কারি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার  মধ্যে এমন ‘সাগর চুরি’ বিনিয়োগকারীদের শঙ্কিত করে তুলতে পারে। তাই ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

কয়লা গায়েবের ঘটনায় এরই মধ্যে বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট ১৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পেট্রোবাংলার গঠিত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে।

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট সবার যোগসাজশেই এমন বড় রকমের লোপাটের ঘটনা ঘটানো সম্ভব হয়েছে। তবে পুরো প্রতিবেদন দেখেই ব্যবস্থা নেবে সরকার। এক্ষেত্রে জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

কয়লা কাণ্ডে বিস্ময় জানিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন খান। তার মতে, দেশে দুর্নীতি প্রকাশ্য রূপ নেওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্ট থেকে সোনা গায়েবের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে এ পর্যন্ত উল্লেখ করার মতো অনেকগুলো দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এগুলোর বিরুদ্ধে শক্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাঘব বোয়ালদের আড়াল করা হয়েছে। এমনটি হলে দুর্নীতি কমানো সম্ভব নয়।

বিজ্ঞাপন

কয়লা লোপাটের ঘটনাকে দেশের জন্য লজ্জাজনক উল্লেখ করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল ইমাম বলেন, ইয়ার্ডে থাকা কয়লা প্রকাশ্যে দেখা যায়। এত কয়লার ঘাটতি হওয়ার পরও এমডি বা অন্য কারও চোখে পড়ল না— এটা রীতিমতো বিস্ময়ের ব্যাপার। তার মতে, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছাড়া এত বড় ধরনের লোপাটের ঘটনা সম্ভব নয়।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ব্যবহৃত এসব কয়লা লোপাটের ঘটনায় এরই মধ্যে ব্যহত হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। বিঘ্নিত হচ্ছে এসব এলাকার কলকারখানার উৎপাদনও। এ অবস্থা কোনোভাবেই দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয় বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তার মতে, বড় ধরনের লোপাটের প্রভাব সরাসরি পড়তে শুরু করেছে উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায়। এ অবস্থা যদি মাসখানেক দীর্ঘায়িত হয়, তবে তা সামগ্রিক অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি এ দুর্নীতি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শঙ্কিত করবে।

তবে সরকার যদি এ ঘটনাকে আমলে নিয়ে শক্ত ব্যবস্থা নেয়, সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

বিজ্ঞাপন

দুর্নীতিকে স্বাভাবিক ঘটনা আখ্যা দিয়ে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এত বড় ঘটনা কেবল সেখানকার কর্মকর্তারাই ঘটাননি, সঠিকভাবে তদন্ত করলে এ ঘটনায় অনেক প্রভাবশালীর জড়িত থাকার প্রমাণ মিলবে।

দেশে দুর্নীতির বিচার হয় না বলেই এমনটি করার সাহস পেয়েছে মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আগেও এমন দুর্নীতি হয়েছে, যেগুলোর বিচার বছরের পর বছর হয়নি। ফলে এ ধরনের সাগর চুরিতে খুব বেশি অবাক হওয়ার নেই।

সারাবাংলা/এমএস/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন