বিজ্ঞাপন

বোঝেননি কামরান, বোঝেননি আরিফুল

July 31, 2018 | 12:22 am

।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

সিলেট থেকে: ভোটের বাতাস ঘুরে গেছে সিলেটে। একযোগে সারাদেশে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও রাজশাহী ও বরিশাল সিটিতে যেমন ছিল ভোটের হাওয়া, সিলেটের চিত্র ছিল তার থেকে একদম ভিন্ন। বাকি দুই সিটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা নিরঙ্কুশ বিজয় পেলেও সিলেটে সর্বশেষ পাওয়া ফলে এখন বিএনপি প্রার্থীই রয়েছেন সাড়ে ৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে। স্থানীয়রা বলছেন, ভোটের এমন হাওয়া শুরু থেকেই বুঝতে পারেননি বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ প্রার্থী।

সোমবার (৩০ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট নেওয়া হয়। বিকেল ৪টার পর থেকে শুরু হয় গণনা।

শুরুতেই ইভিএম ব্যবহার করে ভোট নেওয়া দুই কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করা হয়। তাতে এগিয়ে ছিলেন বিএনপির প্রার্থী আরিফুল ইসলাম চৌধুরী। ধীরে ধীরে অন্য কেন্দ্রগুলোর ফল ঘোষণা শুরু হলে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে যেতে থাকেন বদর উদ্দীন আহম্মেদ কামরান। বাকি দুই সিটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা শুরু থেকেই বড় ব্যবধান ধরে রাখলেও সিলেটে লড়াই ছিল হাড্ডাহাড্ডি। কামরান শুরুর দিকে এগিয়ে ছিলেন মাত্র হাজার খানেক ভোটের ব্যবধানে।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে রাজশাহীতে প্রায় ৮৫ হাজার ও বরিশালে প্রায় লাখো ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হলেও দৃশ্যপট পাল্টে যায় সিলেটে। ১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১১টি কেন্দ্রের ফল যখন পাওয়া যায়, তখন আরিফুল হক চৌধুরী এগিয়ে ছিলেন সাড়ে চার হাজার ভোটে। শেষ পর্যন্ত রাত পৌনে ১১টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা যখন ১৩২টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করেন, তখনও প্রায় একই ব্যবধান ধরে রেখেছেন আরিফুল।

সর্বশেষ ১৩২টি কেন্দ্রের ফলে ধানের শীষ প্রতীকে আরিফুলের প্রাপ্ত ভোট ৯০ হাজার ৪৯৬। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কামরানের প্রাপ্ত ভোট ৮৫ হাজার ৮৭০। দু’জনের ভোটের ব্যবধান ৪ হাজার ৬২৬।

এই সিটিতে দুইটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে। সেই দুই কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৮৭। ফলে এই নির্বাচনে এই মুহূর্তে এখনই কাউকে বিজয়ী বলা যাচ্ছে না। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকেও কাউকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি। বাকি দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর তার ফলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে সিলেটবাসীকে নতুন নগরপিতার নাম জানার জন্য।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ভোট শুরুর পর থেকেই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। এসব অভিযোগ নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা আলীমুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনে জয়ী হলেও ভোট বাতিল ও পুনঃনির্বাচন চান তিনি। তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী অভিযোগ করেন, মোট ৪১ কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে।

যদিও ভোট শুরুর পর থেকেই বদর উদ্দীন কামরান বলে আসছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। সিলেটে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে দাবি করার পাশাপাশি কেন্দ্র দখল বা ভোটের পরিবেশ নিয়ে বিএনপির অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে কামরান বলেন, ‘জণগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসছে। ইনশাল্লাহ আমি জয়ী হব।’

এদিকে, ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর বাকি দুই সিটির বিপরীতে সিলেটে বর্তমান মেয়র আরিফুল ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরানের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের চিত্র ফুটে উঠতে থাকলে সিলেটবাসীর চোখ আটকে যায় টিভি পর্দায়। তারা নির্বাচনের ফল পর্যবেক্ষণে উৎসুক হয়ে ওঠে। ভোটগ্রহণ শেষে নগরীতে খানিকটা স্থবিরতা দেখা দিলেও সন্ধ্যার পর থেকেই মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানগুলোতে থাকা টিভি পর্দায় মনোযোগী হন তারা। নির্বাচনের ফল নিয়ে জল্পনা-কল্পনাও ডানা মেলতে থাকে। দুই প্রার্থীর এই কঠিন ভোটের লড়াইয়ের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে তাদের মধ্যেও।

বিজ্ঞাপন

ভোটগ্রহণ শেষে সিলেটের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী-সর্মথকদের মধ্যেও খানিকটা স্থবিরতা ছিল। সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকা কামরানের নেতাকর্মীরা খানিকটা চাঙ্গা থাকলেও ভোট বর্জনের আহ্বান জানানো আরিফুলের নেতাকর্মী-সমর্থকরাও ছিলেন খানিকটা স্থবির। তবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাসে সেই চিত্রও পাল্টে যায়। একটা পর্যায়ে যখন ভোটে আরিফুল এগিয়ে যেতে শুরু করেন, তখন উল্টো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে খানিকটা হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। আর বিপরীতে চাঙ্গা হয়ে উঠতে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকরা। নির্বাচনকে ঘিরে ফল ঘোষণার শেষ মুহূর্তে বেশ তৎপর হয়ে ওঠে দুই দলই। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ও দলীয় কার্যালয়কে ঘিরে আনাগোনা বাড়তে থাকে।

স্থানীয়রা বলছেন, কামরান হয়তো বুঝতে পারেননি পাশার দান এভাবে ঘুরে যেতে পারে। আরিফুলও হয়তো বুঝতে পারেননি শেষ পর্যন্ত তিনিই এগিয়ে যাবেন ভোটের ফলে। বুঝতে পারলে হয়তো দুই দলের নেতাকর্মীরাই ভোটকে ঘিরে আরো আগে থেকেই আরো বেশি তৎপরতা দেখাতেন।

একযোগে তিন সিটিতে নির্বাচন হলেও রাজশাহী ও বরিশালের নির্বাচন ছিল ভীষণভাবে একপেশে। ওই দুই সিটিতে বিজয়ী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেই কেবল এ নিয়ে ছিল তীব্র উচ্ছ্বাস-উৎসাহ। কিন্তু এর বিপরীতে সিলেটই একমাত্র ভোটের নাটকীয়তা উপহার দিয়েছে নগরবাসীকে। তাই শেষ পর্যন্ত সিলেট সিটিতে আজকের দিনের ভোট শেষ হলেও নগরপিতার নাম জানতে অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না সিলেটবাসীর। স্থগিত দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের পর তার ফলাফল জানা পর্যন্ত অপেক্ষাতেই থাকতে হচ্ছে তাদের।

সারাবাংলা/এমএস/টিআর/এটি

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন