বিজ্ঞাপন

ভবিষ্যতের জন্য ‘শঙ্কা’র বার্তা দিয়ে গেল ৩ সিটি নির্বাচন

July 31, 2018 | 8:35 am

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে ব্যাপক অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ আর সরকারদলীয় প্রার্থীদের সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। রাজশাহী ও বরিশালে প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা, বরিশালে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) প্রার্থীর ওপর হামলা, বরিশালেই মোট ১৬টি কেন্দ্রে ভোট ও ফল স্থগিতের পাশাপাশি সিলেটে দুই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত, রাজশাহীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থীরই ভোট না দেওয়ার মতো ঘটনাগুলো দিনভর ছিল আলোচিত।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটগ্রহণ শেষে গতানুগতিকভাবেই বলছে, কিছু বিশৃঙ্খলা থাকলেও সার্বিকভাবে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে। পুনঃনির্বাচনের দাবি ভিত্তিহীন। যদিও নির্বাচন কমিশনের এমন দাবির সঙ্গে একমত নন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা। তারা বলছেন, এই নির্বাচন এমন কিছু উদাহরণ রেখে গেল, যা ভবিষ্যতের জন্য আরও বেশি শঙ্কার বিষয়।

তিন সিটিতে ভোট শেষে এরই মধ্যে নতুন নগরপিতা পেয়েও গেছেন রাজশাহী ও বরিশালবাসী। তবে ভোটের নাটকীয়তায় স্থগিত দুই কেন্দ্রের নির্বাচন ও ফল ঘোষণার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে সিলেটবাসীকে। অন্য দুই সিটিতে বিএনপি প্রার্থীকে প্রায় লাখো ভোটে হারিয়ে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী বিজয়ী হলেও সিলেটে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছেন বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

এই তিন সিটির নির্বাচনকে ‘বিতর্কিত’ নির্বাচন বলে অভিহিত করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। এমন নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের প্রয়োজন ছিল না বলেও মনে করেন তিনি।

বদিউল আলম মজুমদার সারাবাংলা’কে বলেন, ‘খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচন নীরবে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন ছিল। কিন্তু এবারের নিবার্চনটি সরব ও নীরব- দুইভাবেই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। ভোটকে

ঘিরে সহিংসতা হয়েছে, বাড়াবাড়ি ও প্রতিরোধ- সবই হয়েছে।’ এগুলোকে ভবিষতের জন্য শঙ্কার বিষয় বলে মনে করছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বরিশালে একটি ও সিলেটে দুইটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। পরে অনিয়মের অভিযোগে বরিশালে আরও ১৫টি কেন্দ্রে ফল ঘোষণা স্থগিত করে সংস্থাটি। এর বাইরে প্রার্থীদের অভিযোগ নিয়ে খুব বেশি তৎপর দেখা যায়নি ইসিকে।

তিন সিটিতে বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা আর অনিয়ম হলেও ইসির এমন নির্বিকার ভূমিকার অভিযোগ করে সুজন সম্পাদক বলেন, ‘সব অভিযোগ নিয়েই অযৌক্তিকভাবে সাফাই গেয়েছে নির্বাচন কমিশন।’ তিনি আরও বলেন, বরিশালে অনেক অভিযোগ আর অনিয়মের কথা উঠেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নীরব থেকেছে।’

বরিশালে ভোটকে ঘিরে সহিংসতা, নারী মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তীকে লাঞ্ছিত করার মতো ঘটনাগুলোকে ‘অ্যালার্মিং’ বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) এই সদস্য সারাবাংলা’কে বলেন, ‘মোটা দাগে বললে, রাজশাহীতে পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল, সিলেটে বিছিন্ন কিছু সহিংসতা আর অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। তবে বরিশাল সিটিতে পুরোপুরি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতেই নির্বাচন হয়েছে। এখানে ১২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫টিতে ফল স্থগিত করা করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করার মতো নয়।’

বরিশালে নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে দুপুরেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। পরে আরও দুই মেয়র প্রার্থী নির্বাচন বর্জন ও আরও দুই প্রার্থী নির্বাচন স্থগিত না হলে ভোট বর্জনের ঘোষণাও দেন। এই সিটিতে ছয় মেয়র প্রার্থীর মধ্যে কেবল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীই নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ জানান।

বিজ্ঞাপন

ড. কলিমুল্লাহ বলেন, ‘জাল ভোট, সিল মারা, বিরোধী দলকে হুমকি-ধমকি দেওয়া, এমনকি বিরোধী দলের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এই সিটিতে ছয় মেয়র প্রার্থীর মধ্যে পাঁচ জনই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এটা খুবই অ্যালার্মিং। ভবিষতের জন্য এমন ধরনের ঘটনা শঙ্কাজনক। এই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নেওয়ার অনেক বিষয় আছে।’

তবে তিন সিটির নির্বাচন নিয়ে খানিকটা ভিন্নমত জানিয়েছেন সাবেক তথ্য কমিশনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেককিছুই আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু সমস্যা ছাড়া গোটা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করার জন্য নির্বাচন কমিশন ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।’

তিন সিটিতে বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণকেই মূলত ইতিবাচক বলে মনে করছেন ড. সাদেকা হালিম। তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় দিক হলো বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণ। এটি গণতন্ত্রের জন্য শুভ ইঙ্গিত। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেশের জন্য শুভ।’

সারাবাংলা/জেডএফ/এসবি/টিআর

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন