বিজ্ঞাপন

দিয়ার জন্য কাঁদছে ওরা

July 31, 2018 | 11:52 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় রহিম মেটাল কবরস্থান। ভেতরে একটি কবরকে ঘিরে দাঁড়িয়ে কয়েকটি কিশোর চোখের জল ফেলছে। কবরস্থানের বাইরের দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে কিছু কিশোরী। কবরস্থানের বাইরে আরও কিশোর-কিশোরীর ভিড়। তাদের কারও কারও পরনে স্কুলড্রেস। যে কবরটিকে ঘিরে চোখের জল ফেলছে কিশোররা, সেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত দিয়া আক্তার মিম। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের পাশের ফুটপাতে দুই বাসের রেষারেষি দুই দিন আগেই কেড়ে নিয়েছে যার প্রাণ।

মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) রহিম মেটাল কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, দিয়ার কবরকে ঘিরে কান্নায় ভেঙে পড়েছে তারই সহপাঠীরা। অবশ্য কেবল সহপাঠীই নয়, অন্যান্য স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও বন্ধু-স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে হাজির হয়েছে সেখানে।

বিজ্ঞাপন

গত সোমবার (২৯ জুলাই) কুর্মিটোলা জেলারেল হাসপাতালের সামনের সড়কে (মিরপুর-উত্তরা ফ্লাইওভার ঠেকেছে যেখানে) দুই বাসের রেষারেষিতে হত্যার শিকার হয় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া আক্তার মিম ও আব্দুল করিম। এ ঘটনার প্রতিবাদে তিন দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক দখল করে আন্দোলন করছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, তরতাজা দুই ভাই-বোনকে হারিয়েছে তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘাতক দুই বাসচালকের বিচারসহ নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে তারা। সড়ক সংলগ্ন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফুট ওভারব্রিজ তৈরি এবং লাইসেন্সবিহীন চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিষিদ্ধের মতো দাবিও জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে ঘিরে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বক্তব্যের জের ধরে তার পদত্যাগও চেয়েছে তারা।

মঙ্গলবার সকালে দিয়ার বাসায় গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। সেখানে রমিজ উদ্দিন কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গিয়ে তার কাছে ৯ দফা দাবি তুলে ধরে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের দাবি শোনেন এবং সেগুলো পূরণের আশ্বাস দেন।

বিজ্ঞাপন

এরপর শিক্ষার্থীদের একটি দল যায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় রহিম মেটাল কবরস্থানে, যেখানে তাদের বন্ধু-বোন দিয়া চিরনিদ্রায় শায়িত। গিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়ে তারা। কবরের পাশে বসে কাঁদতে থাকে তারা।

দিয়ার বন্ধু মুরসালিন বলে ওঠে, ‘দিয়া তুই চিন্তা করিস না। তোর হাজার হাজার বন্ধু রাস্তায় নেমেছে। আর কোনো দিয়াকে তোর পরিণতি বরণ করতে হবে না। আমাদের আর কোনো মায়ের কোল খালি হবে না। দেখ, তোর কত বন্ধু এসেছে। দোয়া করছি সবাই, তুই জান্নাতে থাকবি।’

কবরস্থানের ভেতরে দিয়ার বান্ধবীরা ঢুকতে না পারলেও দেয়ালের বাইরে থেকে তারা সমবেদনা জানিয়েছে। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে। মুসলিমা, রুপা, ফাজানা, কামরুন্নাহারসহ আরও অনেকেই এসেছে দিয়ার কবরকে একনজর দেখার জন্য।

বিজ্ঞাপন

দিয়াকে লেখা একটি চিঠি মুরসালিন তুলে দেন সারাবাংলা’র কাছে। চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো—

‘ওঠো ভাইয়া…’,

‘ভাইয়া, তুই ওইদিকে যাইস নাহ’,

‘দিয়া তো রাস্তা পার হইতে পারে না ভাইয়া’,

‘দোস্ত, ও না সৈনিক ক্লাবের সামনে আসবে বলছে’,

‘আরে দোস্ত, ও না বলছে ১ তারিখ থাইকা আমগো কোচিংয়ে ICT ক্লাস করব’

হ্যাঁ, ঠিক এমন উক্তিগুলোতেই ভারি ছিল তখনকার চারপাশ। সব দিক থেকে প্রতিধ্বনি ছিল একটাই- ‘দিয়া চইলা গেছে দোস্ত।’

এই ভাইয়া… একটু হাসো তো… এই হাসু…. ফাটছে হাসির ডিব্বা… সবসময়ই মুখটায় হাসি আঁকা ছিল। অন্যরকম একটি মেয়ে ছিল। কতকিছুই না বলত সারাদিন। মন খারাপ দেখলে যখন জিজ্ঞেস করতাম, ভাইয়া, মন খারাপ তোর? মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলত, কই না তো…

ওর কথা শুনে মনে হতো, কত কিছুই না জানি ভেতরে লুকিয়ে রেখেও হাসতে পারত মেয়েটি।

বাসায় বেড়াতে গেলে চলে আসার সময় দরজা ধইরা দাঁড়াই থাকত… শেষ সময়গুলোতে কার না কার কথা শুইনা ভাইয়াটা আর কথা বলত না আমার সাথে।

ভাইয়া… তুই না বলছিলি, ‘ভাইয়া আমাকে কুলে নিবা..???’ ওঠো ভাইয়া… ওঠো একবার, একবার চোখ খোলো… তুই তো চোখ খুলে একটাবার দেখলি না..!!! আমি তোরে অনেকক্ষণ কুলে নিছিলাম ভাইয়া… নিজ হাতে ওই সাড়ে তিন হাতে রাইখা আসলাম…

ও ঘুমাচ্ছে, ওরে কেউ জাগাইও নাহ..!!! ও আর চোখ মেলবে না… !!!!

ভাইয়া, আমারে মাফ করে দিস। আর ভুল বুঝিস না ভাইয়া… ভাইয়া বলে ডাকবি না, দিয়া? ওই দিয়া…

আরও পড়ুন-

‘আমি সব সময়ই হাসি, এটা কি দোষের?’

‘আমার গেছে সন্তান, শাজাহান খানের কাছে সংখ্যা’

মতিঝিল-সায়েন্স ল্যাব-নাবিস্কো-মিরপুরে যান চলাচল স্বাভাবিক

রাজধানী জুড়ে অবরোধ, লাঠিচার্জ, বাসে আগুন-ভাঙচুর, ছাত্র রক্তাক্ত

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন