বিজ্ঞাপন

‘ইহারা নবাবজাদা, ইহাদের লাইসেন্স নেই’

August 2, 2018 | 1:56 pm

।।এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা:

সারা শহর জুড়ে চলছে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। যেখানেই গাড়িতে লাইসেন্স পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানেই ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান তুলছে শিক্ষার্থীরা। সিট বেল্ট না বাঁধা, হেলমেট না পরা, উল্টোদিকে গাড়ি চালানো, যত ছোটই হোক ভুল, সব নাকে খৎ দিয়ে শোধরানো হচ্ছে। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে এসে রাষ্ট্রের অনিয়মকে এভাবেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে স্কুল কলেজের কিশোর-কিশোরীরা। পুরো ঢাকার চিত্রই এটা। ব্যতিক্রম নয় ফার্মগেটও।

এরই মধ্যে বিলাস বহুল একটি গাড়ি হুশ করে ঢুকলো, এভাবেই ঢুকে অভ্যস্ত তারা। তাদের দেখে সবাই মুগ্ধ চোখেই তাকিয়ে থাকে। তবে সমীহ পাওয়া যায় না শিক্ষার্থীদের থেকে। চোখ গরম করে জিজ্ঞেস করে, লাইসেন্স কই? না পেয়ে,  ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান তোলে। শেষে গাড়ির সামনের কাঁচে পোস্টার সাঁটিয়ে দেয়, ‘ইহারা নবাবজাদা, ইহাদের লাইসেন্স নেই।’

বিজ্ঞাপন

ফার্মগেটে ওভার ব্রিজের নিচে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তারা অনেকটাই নীরব ভূমিকায়।  কখনো যদি তাদের গাড়ি আটকে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছে তারা, রাষ্ট্রের গাড়ি, রাষ্ট্রের কাজ, আরও কতো কী! কিন্তু মোটেই নরম হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। এক পুলিশ দাবী করেন, পুলিশের সব গাড়িতে লাইসেন্স থাকে না। ভাবটা এমন, লাইসেন্সের তোয়াক্কা করেন না তারা, তাদের আবার কে ধরবে? ভুলেই গিয়েছিলেন হয়তো এই প্রজাতন্ত্রের মলিক জনগণ, এই দেশ আগামী প্রজন্মের। তারাই আজ শুরু করেছে প্রশ্ন, কোথায় লাইসেন্স? কোথায় নিরাপত্তা? কোথায় দায়িত্বশীলতা? জবাব দাও।

সকাল দশটায় রাস্তায় নেমে আসে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজ এবং তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা। অধিকাংশ সময় তারা গাড়ির লাইসেন্স চেক করছে। কখনো রাস্তায় দুপাশে সমান্তরালে দাঁড়িয়ে স্লোগান তুলছে। আবার কখনো অ্যাম্বুলেন্স কিংবা ঠিকঠাক পাওয়া গাড়িকে বিক্ষোভের স্থল পার করিয়ে দিচ্ছে খুব বিনয়ে।

বিজ্ঞাপন

তবে মাফ পাচ্ছে না লাইসেন্স ছাড়া চালক বা বাহন।  লাইসেন্স পাওয়া না গেলেই ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিচ্ছে। ছবি তুলছে ওই গাড়ির। টুকে রাখা হচ্ছে নম্বর। এমনভাবে সাড়ে ১১ টায় আটকে দেয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়িকে। এর স্টিকারে লেখা রয়েছে পরিচালনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। চালক রবিউলের সাথে লাইসেন্স নেই। গাড়িতে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাসপোর্ট অনুবিভাগের পরিচালক সাইদুল ইসলাম। চালক রবিউলের বলেন, পুলের গাড়ি হওয়ায় লাইসেন্স নেই।

পুলের গাড়িতে কেন লাইসেন্স থাকবে না? প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের।  লাইসেন্স না থাকায় তাই তারা স্লোগান তোলে- ‘ভুয়া, উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’ অন্তত ১৫ মিনিট আটকে রাখা হয় এই গাড়িকে। তাচ্ছিল্যের সুরে পুরোটা সময় শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান তুলে লজ্জায় ডুবিয়ে মারে এই সরকারি গাড়ির আরোহীদের।

সকাল ১১ টার দিকে সরকারী তিতুমীর কলেজের সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা বাইকের পেছনের সিটে বসে ফার্মগেট পার হচ্ছিলেন। চালকের লাইসেন্স ও হেলমেট থাকলেও যাত্রীর মাথায় ছিল না হেলমেট। নামানো হয় তাকে। দেয়া হয় ঝুঁকির সবক।এক পর্যায়ে ক্ষেপে উঠেন ওই নেতা। গাড়ি থেকে নেমে ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিছুটা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেও পরে শিক্ষার্থীরাই তাকে পার করে দেয় ওই স্থান।

পুলিশের পিকআপ ভ্যানে নেই লাইসেন্স। আটকে দেয়া হয়। ছাত্রছাত্রীরা বলতে থাকে, যাদের লাইসেন্স নেই তারাই আবার সড়কের নিরাপত্তায়, মানবে শিক্ষার্থীরা? তো ঘোড়াও গাড়ি ফেরো বাড়ি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইএইচটি/এমএ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন