বিজ্ঞাপন

সন্ধ্যে নামে, নামে না ক্লান্তি ওদের চোখে

August 3, 2018 | 1:05 am

।। মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সারাদিন গেছে নিরাপদ সড়কের দাবিতে। কড়া রোদ, ঝুম বৃষ্টি— সব উপেক্ষা করেও প্ল্যাকার্ড হাতে পথ আগলে দাঁড়িয়ে ছিল ওরা। ওরা স্কুলের শিক্ষার্থী। কেউ ক্লাস সিক্সে পড়ে, কেউ নাইনে, বড়জোর কলেজে। এর চেয়ে বড় কেউ নেই।

বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) ছিল ওদের পথে দাঁড়ানোর পঞ্চম দিন। এই সপ্তাহটা যখন শুরু হয়, তখনও ওরা নিছকই ছোট ‘ছেলেপেলে’। স্কুলে যায়, কোচিংয়ে যায়, পরীক্ষার পেছনে দৌড়ায়, জিপিএ’র চিন্তা করে, বার্গার খায়, চিকেন খায়। দেশের ভাবনা করার প্রয়োজন ওদের হয় না।

কিন্তু জীবনের ছক বদলে যায় যখন রোববার (২৯ জুলাই) কুর্মিটোলায় দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ হারায় ‘ওদেরই সহপাঠী আব্দুল করিম ও দিয়া খান মিম। ওদের বয়সীই তো ছিল দু’জন। ওরাও তো ক্লাস করত, কোচিংয়ে যেত, জিপিএ নিয়ে ভাবত, বার্গার খেত, চিকেন খেত…।

বিজ্ঞাপন

পাঁচ দিন ধরে পথঘাট দখল করে রেখেছে শিক্ষার্থীরা। ওদের এক দাবি, সড়ক নিরাপদ করো, সড়কে হত্যার বিচার করো। সেই দাবিতে নিজেরাই নেমে গেছে পথে। গাড়ি ধরে ধরে যাচাই করছে। কারা লাইসেন্স ছাড়া পথে নেমেছে? কে ট্রাফিক আইন ভেঙেছে? ওদের এই চেকিং থেকে বাদ পড়েননি বিচারপতি, মন্ত্রী, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কিংবা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।

সপ্তাহের আজ শেষ দিন। একে বৃহস্পতিবার, তায় বৃষ্টি। এই নগরের মানুষমাত্রই জানে, কত ভোগান্তি পোহাতে হয় এমন দিনে। কিন্তু সড়কে নেই কোনো যানজট। মতিঝিল, শান্তিনগর, ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব, জসিমউদ্দিন— কোথাও না।

সোজা লাইন ধরে চলছে সবাই। পথে দাঁড়িয়ে কিশোর-কিশোরীরা অফিস ফিরতি মানুষদের অনুরোধ করছে, আমরা সবাই একটু ফুটপাথে উঠি; সন্ধ্যে হয়েছে, হেড লাইট জ্বালিয়ে দেই। কিশোর কণ্ঠের আন্তরিক আহ্বান— আমরা সবাই আইন মেনে চলি।

বিজ্ঞাপন

যেমন বলা তেমনি কাজ। সবাই জানে এই শহরের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে এই নবীনরা। তারাই আজ ঠিক করে দেবে, কেমন চলবে এ শহর।

চলতি পথে টুকরো টুকরো বাক্য ভেসে আসে পথচারীদের মুখ থেকে, ‘অনিল কাপুরের ওই সিনেমাটা দেখেননি, নায়ক। একদম সেই কাণ্ড!’ রিকশা থেকে, গাড়ি থেকে মাথা বের করে ধন্যবাদ জানাতে ভুলছেন না কেউ কেউ। সবার মুখে এক কথা— এরাই পারবে, হ্যাঁ, এরাই পারবে।

দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা নামে নগরে। এই সন্ধ্যায় যখন নগরবাসীর দু’চোখ ক্লান্তিতে বুঁজে আসতে চায়, ঠিক কখনও ক্লান্তি নামে না এদের চোখে। সন্ধ্যার আলোতেও জ্বলজ্বল করতে থাকে এই কিশোর-কিশোরীদের চোখ। এই শহর ঠিক করার দায় নিয়েই যে পথে নেমেছে ওরা। সেই দায়বোধের আভা যেন ঠিকরে পড়তে থাকে চোখ থেকে, মুখের প্রতিজ্ঞাদৃপ্ত দীপ্তি থেকে।

এমন দায়িত্ববান কারও অপেক্ষাতেই ছিল এই নগর?

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এমএ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন