বিজ্ঞাপন

‘প্লিজ, তোমরা শান্ত হও’

August 3, 2018 | 12:54 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঢাকার রাজপথে নামা শিক্ষার্থীদের প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্লিজ তোমরা শান্ত হও। আমরা তোমাদের প্রতিবাদী কণ্ঠকে সম্মান করি। তোমারা দেশ ও জনগণের স্বার্থে, শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে অপশক্তির উসকানির মুখে বিভ্রান্ত হবে না।

শুক্রবার (৩ আগস্ট) সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কার্যালয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলির সঙ্গে এক যৌথসভায় তিনি এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মহানগরের অন্তর্গত দলীয় সংসদ সদস্য, থানার সভাপতি ও সাধারণ ও দলীয় কাউন্সিলর এবং সহযোগী  সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে এ যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, ‘তোমারাই বাংলাদেশের আগামী দিনের নাগরিক। তোমারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তোমরাই আমাদের ভবিষ্যতের নাগরিক। ভবিষ্যতের নেতা। তোমাদের কাছে, অনুরোধ করতে চাই, তোমরা শান্ত হও।’

‘আমরা তোমাদের যে ন্যায্য যৌক্তিক দাবি, তোমাদের প্রতিবাদী কণ্ঠ, এই কণ্ঠকে সম্মান করি। আমরা সম্মান করেই বলছি, প্লিজ তোমারা দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে তোমাদের ভবিষ্যতে নির্মাণের সুযোগকে কাজে লাগাবে এবং অপশক্তির উসকানির মুখে তোমরা অবশ্যই বিভ্রান্ত হবে না।’

‘আমি গতকাল অনেক ছাত্র-ছাত্রীর বক্তব্য শুনেছি, তাদের মধ্যে শুভবোধ আছে। এই শুভ বোধ জাগ্রত হয়েছে, এটা আমাদের কাজে লাগবে ভবিষ্যতের জন্য’ বলেন ওবায়দুল কাদের।

বিজ্ঞাপন

আন্দোলনের পরিণতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ও বিচলিত হওয়ার দিকটি তুলে ধরে কাদের বলেন, আজকে নিরাপরাদ সড়কের আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে বিএনপি এবং তার সাম্প্রদায়িক দোসররা সরকার হঠানোর নিরাপদ সড়ক খুঁজছে। তারা কোটা আন্দোলনে ভর করে ব্যর্থ হয়েছে। তারা নয় বছরে নয় মিনিটেও রাস্তায় আন্দোলন করতে পারেনি। সেই দগদগে ব্যর্থতার পর এখন বিএনপিও তার দোসররা এখন সওয়ার হয়েছে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবির যে আন্দোলন সেই আন্দোলনের উপর তারা এখন ভর করেছে। তার সাইন অ্যান্ড সিনটোম আমরা গত পাঁচদিন ধরে লক্ষ্য করছি দাবি করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক দাবি করেন।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের যৌক্তিকতা সরকার স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু এই যৌক্তিক আন্দোলনকে অযৌক্তিক পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য, এ আন্দোলনকে প্রভোকেশন দিয়ে ভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করার অশুভ চক্রান্ত লক্ষ্য করছি। আমরা লক্ষ্য করছি, শিক্ষার্থীদের মিছিলে প্রবেশ করে কিভাবে অশ্লীল-বিশ্রী ও অশালীন স্লোগানের উসকানি দিচ্ছে একটি রাজনৈতিক মতলবি মহল। কারা খাবার পানি সরবরাহ করছেন এবং শিশুদের উসকানি দিচ্ছেন উত্তেজিত হওয়ার জন্য। আরো আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করছেন সেই দিকেও লক্ষ্য রাখছি বলে দাবি করেন কাদের।

এ বিষয়ে কাদের আরও বলেন, আমরা এটাও দেখেছি, অনেক জায়গায় শিক্ষার্থীরা তাদের মিছিল থেকে কিছু কিছু লোককে বের করে দিয়েছে। তারা যখন বুঝতে পেরেছে এরা রাজনৈতিক কুচক্রী। এই মহলটি সন্ধ্যার পর বেশি তৎপর থাকে। সন্ধ্যার পর অনেক ঘটনা ঘটেছে। এমপি, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার, বিজিবি অফিসার এবং অনেক ভদ্রলোককে অপমান অপদস্ত করেছে, অনেককেই নাজেহাল হয়েছেন। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীরা এদের নাজেহাল করেনি। এদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে, ওই মতলবী মহলটি করেছে। এই মতলবি উসকানির মহলটি সন্ধ্যার পর রাতের অন্ধকারে তাদের অন্ধাকারের কার্যকলাপ শুরু করেছে। এটা লক্ষ্য করে আমরা উদ্বিগ্ন।

তবু আমি আমাদের নেত্রীর নির্দেশে আমাদের নেতাকর্মীদের ধৈর্য্য সহিষ্ণুতা পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করেছি। কোন প্রকার প্রভোকেশনে কেউ যেন ফাঁদে না পড়ে সে ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছি। শুধু তারা লক্ষ্য রাখবে, কারা কারা এই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশ করছে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চক্রান্ত করছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে জনগণের কাছে বিভ্রান্ত সৃষ্টির করার জন্য নেমে পড়েছে। সে বিষয়ে আমাদের নেতাকর্মীকে লক্ষ্য ও সতর্ক থাকতে বলেছি।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ সভাপতির পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, স্কুল কলেজের শিক্ষক ও গর্ভনিং বডির কাছে আন্তরিক আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি যৌক্তিক দাবি শান্তিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের ব্যাপারে আপানদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। আমি আশা করি, আমরা সকলের সহযোগিতা পাবো। এখানে যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা প্রবেশ করতে না পারে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে দেখুন, গাড়ী বন্ধ, মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ভয়ে অনেক গাড়ি রাস্তায় নামছে না। গতকাল পর্যন্ত বিআরটিসির গাড়ি চালিয়ে ছিলাম। কিন্তু চালকরা এখন তাদের জীবনের আশঙ্কায়, তাদের নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে রাস্তায় গাড়ি চালাতে রাজি নয়। আজকে সারাদেশে এই যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর একটা কালো ছাঁয়া নেমে এসেছে। একটা বিপর্যকর পরিস্থিতি নেমে এসেছে। যান চলাচল বন্ধের কারণে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ এখান থেকে ওখানে যেতে পারছে না। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এই অচলাবস্থার অবসানের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত পাঁচ দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে সরকার কিন্তু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেনি। আমরা প্রথম থেকেই এই পরিস্থিতিতে প্রোঅ্যাকটিভ ছিলাম। এখনও আমরা প্রোঅ্যাকটিভ আছি। শিক্ষার্থীদের যে দাবিনামা নয় দফার দাবি এটা পাবলিক স্টেটমেন্ট করে আমরা মেনে নিয়েছি। একটি দাবিও নেই যেটা আমরা মানতে অপরাগতা প্রকাশ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাতে আমাকে বলেছেন, রমিজ উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজের পাশে আন্ডারপাসটি নির্মাণের যে দাবি, এই দাবিটি পূরণে তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। তিনি অবশ্য তার আগেই সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দিয়েছেন। গতকাল সেনাবাহিনী সে প্রস্তাব আমাদের মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সেনাবাহিনী এই আন্ডারপাসটির নির্মাণ কাজ অচিরেই শুরু করতে যাচ্ছে।

এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একেএম এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুরনাহার লাইলী, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনসহ অন্যান্যরা।

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন