বিজ্ঞাপন

সড়ক আইন ভাঙলে কঠোর ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের ফিরে যাওয়ার আহ্বান

August 4, 2018 | 2:50 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: আগামীকাল রোববার থেকে ট্রাফিক সপ্তাহ ঘোষণা করে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, সারাদেশে আগামীকাল থেকে ট্রাফিক সপ্তাহ উদযাপন করা হবে। এই সময় সড়ক আইন ভাঙলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, যে অভিপ্রায় নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেছিল, সেই আন্দোলনকে সমর্থন করি আমরা। একইসঙ্গে তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের স্কুলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করব। অভিভাবকদের অনুরোধ করব, আপনাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যান, তারাই আগামীর ভবিষ্যৎ। তারা ভবিষ্যতের কাণ্ডারি।

শনিবার (৪ আগস্ট) দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আছাদুজ্জামান মিয়া এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, অনেক আগেই আমাদের যা করা উচিৎ ছিল, অথচ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা তা করতে পারিনি- শিক্ষার্থীরা সেই কাজ করে দেখিয়েছে। কিন্তু আপনারা দেখেছেন, যাত্রাবাড়ীতে লাইসেন্স চেক করার জন্য একটি পিকআপ ভ্যানকে থামানো চেষ্টা করে এক ছাত্র। চালক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ওই ছাত্র চাপা পড়ে। সে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ রকম ঘটনা আরো ঘটেছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।

“আমরা আরো উদ্বিগ্ন, আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে ছাত্রদের স্কুল ড্রেস তৈরি ও বিক্রি বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনে একটি মহল মূলত ঘোলা জলে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। আমরা এটাও লক্ষ্য করেছি, সোশ্যাল মিডিয়ায়- বিশেষ করে ফেসবুকে নানা ধরনের অপপ্রচার ও উসকানিমূলক কথা প্রচার করছে। কেউ কেউ বলছে, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে মাঠে নামতে হবে। যারা উসকানি দিচ্ছে, তাদের আমরা ইতোমধ্যে শনাক্ত করেছি। যথা সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” -বলেন ডিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, আমি সম্মানিত অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আপনারা দেখেছেন বাচ্চারা প্লা-কার্ড হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে। বিশেষত মেয়েদের হাতে অশ্লীল ভাষায় লেখা যেসব স্লোগান দেখতে পাচ্ছেন, আপনার কোমলমতি সন্তান হয়তো জানেই না তার হাতে থাকা প্লা-কার্ডে কী লেখা আছে।

বিজ্ঞাপন

একটি মহল এরই মধ্যে পুলিশকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা করছে, সেটা দেখা যাচ্ছে। ২০১২-১৩ আগুন সন্ত্রাসীদের দমন করার সময় পুলিশ যে ভূমিকা নিতে বাধ্য হয়েছিল, সেই সব পুরনো ছবি সামনে এনে বলা হচ্ছে শিশুদের ওপর পুলিশ এমন হামলা করেছে। আর এই কাজটি করা হচ্ছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে, বলেন তিনি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈরে্যর পরিচয় দিয়ে সব ধরনের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছে। কাফরুল থানায় আক্রমণ করা হয়েছে। মিরপুর পুলিশ লাইনন্সে হামলা করা হয়েছে। আমাদের পুলিশ সার্জেন্টের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরও আমরা চরম পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আমরা দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি।

“মনে রাখতে হবে, পুলিশ রাতদিন কাজ করে বলেই আপনারা বাড়িতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন। এটা ঠিক, আমাদের অনেক ব্যর্থতা রয়েছে। তবে পুলিশের আন্তরিকতা, চেষ্টাকে ছোট করে দেখার সঠিক হবে না। তাপদাহ, শৈত্যপ্রবাহ, বৃষ্টি পেক্ষা করে পুলিশ তার ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করে। ভালো সার্ভিস দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশকে নেতিবাচকভাবে উপস্থান করে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়া ঠিক হবে না। পুলিশ সাধারণ মানুষের প্রতিপক্ষ না। আজ ছাত্র-ছাত্রীরা যে উদ্যোগ নিয়েছে, প্রভাবশালীদের গাড়ির কাগজপত্র চেক করেছে- তাতে পুলিশ বাহিনীকে একটি নৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তারা। ভবিষ্যতে ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরো কঠোর হবে। সেই সাহস আমরা পেয়েছি।”- বলেন তিনি।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আমার দীর্ঘ ৩১ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখিনি মিরপুর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে হামলার ঘটনা। আমরা অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, মিরপুর পুলিশ লাইনে হামলা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা করতে পারে না। এই আন্দোলনে অনপ্রেবেশকারীরা আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নেওয়ার অপচেষ্টা শুরু করেছে। তারাই উসকানিমূলক নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আরেকটা বিষয় চিন্তা করতে হবে। এই চেকিংয়ের যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমন খারাপ দিকও রয়েছে। ইতোমধ্যে যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে- আপনারা দেখেছেন, সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামতে ভয় পাচ্ছে। দূরপাল্লার বাস বন্ধ হয়ে গেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মাছ-মাংস আসতে পারছে না। এই অব্যবস্থাপনা, জনদুর্ভোগ দীর্ঘ দিন চলতে পারে না। কার্মস্থলে আসা-যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই ভোগান্তি কারো কাম্য হতে পারে না, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরও না।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমাদের সংস্কৃতি হলো আইন না মানার সংস্কৃতি। আমরা আইন মানার মনোভাব ধারণ না, পুলিশকে সহযোগিতা করি না। আমরা নিজে আইন মানি, অন্যকে আইন মানতে উদ্বুদ্ধ করি। যদি এই অবস্থার পরিবর্তন না হয়- তাহলে সড়কের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিরপুরে পুলিশ ছাত্রদের ওপর হামলা করেছে এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এই আন্দোলনে যেমন কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে- তেমনই হয়েছে।

সারাবাংলা/জিএস/এটি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন