বিজ্ঞাপন

লাইসেন্সের জন্য বিআরটিএতে উপচে পড়া ভিড়

August 5, 2018 | 8:40 pm

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: হঠাৎ করেই রাজধানীতে যানবাহন ও গাড়ির চালকদের লাইসেন্স করা ও লাইসেন্স নবায়নের পরিমাণ বেড়ে গেছে। গত এক সপ্তাহ ধরেই  লাইসেন্সের জন্য মানুষের ভিড় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। রাজধানীর রাজপথে চলমান নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের হাতে লাইসেন্স চেকিং শুরু হওয়ার পাশাপাশি পুলিশেরও কঠোর অবস্থান নেওয়াকে লাইসেন্সের কদর বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে মনে করছে সংস্থাটি। এদিকে, লাইসেন্সের জন্য চাপ বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে দালালদের কদরও; যদিও তা মানতে রাজী নয় বিআরটিএ।

রোববার (৫ আগস্ট) রাজধানীর মিরপুরে বিআরটিএ কার্যালয়ে সরেজমিনে ঘুরেও দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ এখন ভিড় করছেন বিআরটিএ কার্যালয়ে। তাদের কেউ কেউ এসেছেন নিজের মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সটি নবায়ন করে নিতে, আবার কেউ এসেছেন নতুন করে লাইসেন্স করতে। মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স বা লাইসেন্স না নিয়েই তাদের অনেকে দিনের পর দিন গাড়িয়ে চালিয়ে আসছিলেন।

লাইসেন্সের জন্য অপেক্ষমাণদের লাইন বাইরে চলে এসেছে

বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, এক সপ্তাহ আগেও মিরপুর বিআরটিএ’তে প্রতিদিন গড়ে ১৮০ জন থেকে ২০০ জন চালক নতুন করে শিক্ষানবিশ লাইসেন্স বা লার্নার লাইসেন্স করার জন্য আবেদন করতেন। বর্তমানে আবেদনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫০ থেকে ২৬০টিতে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। বিআরটিএ কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, এই সংখ্যা আগামী কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়তে থাকবে।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন যানবাহন ও গাড়ি চালকদের নতুন লাইসেন্সের আবেদনের পাশাপাশি বেড়েছে লাইসেন্স নবায়ন করার হারও। আগে যেখানে মিরপুর বিআরটিএ’তে লাইসেন্স নবায়নের জন্য  প্রতিদিন আবেদন জমা পড়ত গড়ে ৭০ থেকে ৮০টি, সেখানে এই সংখ্যা এখন ১২০ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানালেন একজন কর্মকর্তা। রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্তই লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন পড়েছে ৯৫টি।

আশপাশের ফটোকপির দোকানগুলোতে রয়েছে দালাল চক্র

জানতে চাইলে মিরপুরে বিআরটিএ ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক মো. মাকসুদ আলম (ইঞ্জিনিয়ার) তার কার্যালয়ে সারাবাংলা’কে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমাদের কাজের চাপ বেড়ে গেছে। প্রতিদিন লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীরা সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

অন্যদিকে মিরপুর বিআরটিএ‘র লাইসেন্স নবায়ন ও লাইসেন্স শাখার সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলী আহসান মিলন তার কার্যালয়ে সারাবাংলা’কে বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স করার হার বেড়েছে। আগে প্রতিদিন নতুন লাইসেন্সের জন্য সর্বোচ্চ ২০০ জনের মতো আবেদন করতেন। এখন এই সংখ্যা আড়াইশ ছাড়িয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, নতুন লাইসেন্স করার পাশাপাশি লাইসেন্স নবায়নের হারও বেড়েছে। সপ্তাহখানেক আগে দিনে গড়ে ৮০টির মতো লাইসেন্স নবায়নের আবেদন পড়লেও বর্তমানে তা বেড়ে ১০০ ছাড়িয়েছে।

অনেকেই বিআরটিএ’র বাইরে বসে পড়েছেন টেবিল-চেয়ার নিয়ে

এদিকে, মিরপুর বিআরটিএ ঘুরে দেখা গেছে, বিআরটিএ সংলগ্ন প্রতিটি ফটোস্ট্যাট দোকানে বাড়তি টাকার বিনিময়ে লাইসেন্স নবায়ন ও লার্নার লাইসেন্স করে দেওয়ার দায়িত্ব নিচ্ছেন একদল ব্যক্তি। এ ছাড়া, বিআরটিএ সংলগ্ন রাস্তায় টেবিল-চেয়ার নিয়েও বসে পড়েছেন একদল লোক যারা লাইসেন্স নবায়ন ও লার্নার লাইসেন্সের কাগজপত্র পূরণ করে দিচ্ছে। পাশাপাশি সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা বাড়তি দিলে তারাই নতুন লাইসেন্স করে দিচ্ছে, নবায়ন করে দিচ্ছে পুরনো লাইসেন্স।

বিআরটিএ চত্বরে কথা হয় নতুন করে লাইসেন্স করতে আসা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলা’কে বলেন, মোটরসাইকেলসহ অন্য একটি হালকা যানের লার্নার লাইসেন্স করতে সরকারিভাবে ৫১৮ টাকা লাগে। কিন্তু তার জন্য তো অনেক বিড়ম্বনা। ব্যাংকে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিতে হয়, মেডিকেল করতে হয়, তারপরও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কাগজপত্র জমা দিতে হয়। কিন্তু ওদিকে (বাইরে থাকা দালাল চক্র) ১৩০০ টাকা দিলেই কোনো ঝামেলা নেই। আজ টাকা জমা দিলে কালকেই লাইসেন্স করে দিচ্ছে। আমি ওখানেই টাকা দিয়েছি।

লাইসেন্স বিষয়ে বিআরটিএ’র নির্দেশনা

নতুন গাড়ির জন্য লাইসেন্স কিনা, জানতে চাইলে রফিকুল বলেন, ‘না, নতুন গাড়ির জন্য না। এতদিন লাইসেন্স ছাড়াই রাস্তায় পুলিশকে ম্যানেজ করে গাড়ি চালিয়েছি। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কিছুতেই ম্যানেজ করা যাচ্ছে না। বোধহয় শিক্ষার্থীদের চাপে পড়েই পুলিশও আগের চেয়ে কড়াকড়ি করছে। তাই বাধ্য হয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে এসেছি।’

বিজ্ঞাপন

বিআরটিএ’কে ঘিরে দালালদের দৌরাত্ম্যের কথা অবশ্য পুরোপুরি স্বীকার করছেন না সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলী আহসান মিলন। তিনি বলেন, ‘দালাল তো আছেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। মাঝেমধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে তাদের সাজা দেওয়া হয়। তবে কিছুদিন পরই আবার তারা ফিরে আসে।’

মিলন জানান, মোটরসাইকেল ও অন্য একটি হালকা যানের লার্নার লাইসেন্স করতে প্রথমে ৫১৮ টাকা জমা দিতে হয়। আর লাইসেন্স নবায়নের জন্য বছরে জমা দিতে হয় ১ হাজার ৫৬৪ টাকা। লাইসেন্স ও লাইসেন্স নবায়নের বিষয়ে কোনো ধরনের দালালের আশ্রয় না নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

আরও পড়ুন-

আন্দোলনে আক্রান্ত গণমাধ্যমকর্মীরা

সরে গেল শিক্ষার্থীরা, যান চলাচল স্বাভাবিক

টিএসসি‌তে ছাত্রলী‌গের হামলায় ৩ শিক্ষার্থী আহত

নৌমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের

ধানমন্ডিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

শেখ হাসিনার নির্দেশ ‘ধৈর্য ধরতে হবে, অ্যালার্ট থাকতে হবে’

‘শিক্ষার্থীদের আদর করে বোঝান, সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে’

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন