বিজ্ঞাপন

মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে সড়ক দুর্ঘটনায়

August 6, 2018 | 2:11 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বিধানমতে সড়ক দুর্ঘটনায় দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। সোমবার (৬ আগস্ট) অনুমোদন হওয়া এ আইনে দুর্ঘটনার ধরন বুঝে পেনাল কোডের  ৩০২ ও ৩০৪  ধারায় বিচার প্রযোজ্য হবে।

এছাড়া নতুন অনুমোদন হওয়া আইনে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজা ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।

তিনি জানান, আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে যে কোনো সময় এর বিধানগুলো প্রয়োগ করা যাবে।

বিজ্ঞাপন

আইন অনুমোদন হওয়ার পর সচিবালয়ে ব্রিফিং করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার ধরন বিষয়ে তদন্ত করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ৩০২ ধারায় বিচার হবে না। তদন্ত সাপেক্ষে যদি ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায় তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত ও তথ্যের ভিত্তিতে যদি নিশ্চিত করে যে এটি হত্যাকাণ্ড তবে ওই ধারা প্রযোজ্য হবে।’

তিনি বলেন, ‘যে কোনো দুর্ঘটনা শুধু সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না। যদি র‌্যাপড অ্যান্ড নেগলিজেন্স ড্রাইভিং হয় তখনই ৩০২ ধারা হবে।’

ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে সড়কে মৃত্যুর ক্ষেত্রে তিনরকমের বিধান আছে।

বিজ্ঞাপন

বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে কিংবা চালকের অবহেলায় নরহত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, মৃত্যুর বিষয়টি হত্যা না হয়ে থাকলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

অনুমোদন হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের ৬ ধারায় বলা হয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য বয়স হতে হবে ১৮ বছর। পেশাদার হলে বয়স হতে হবে ২১ বছর। এছাড়া লাইসেন্সধারী হতে চাইলে ন্যূনতম যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী বা সমমানের যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে।

আইনের ১১ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, একজন চালকের লাইসেন্সের বিপরীতে ১২টি পয়েন্ট থাকবে। একেবার অপরাধ করলে একটি করে পয়েন্ট কাটা যাবে। পয়েন্ট শূন্য হলে তার লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে।

১২ ধারায় বলা আছে, লাইসেন্সধারী কোনো ব্যক্তি শারীরিকভঅবে অক্ষম, অপ্রকৃতিস্থ, মদ্যপ হলে তার লাইসেন্স প্রত্যাহার-স্থগিত করা যাবে।

বিজ্ঞাপন

নতুন আইনে যানবাহনের চালক, হেলপারসহ পরিবহন সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করা হবে। এটি গেজেট বা প্রজ্ঞাপনে নেই। শ্রম আইন ২০০৬ এর সঙ্গে মিল করে কর্মঘণ্টা সরকার ঠিক করবে।

আইনের নতুন ধারায় মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সংখ্যা, সীমানা নির্ধারণ, মোটরযানের ইকোনোমিক লাইফ, গতিসীমা, শব্দমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া দুর্ঘটনার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক সহায়তা তহবিলের বিষয়টি আইনে যোগ করা হয়েছে।

১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ সংশোধন, পরিমার্জন ও সংশোধন করে একটি আইন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০১৩ সালে।

এরপর গত বছরের ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে কিছু পর্যবেক্ষণসহ আইনটি নীতিগত অনুমোদন পায়।

আইনে মন্ত্রণালয়ে সড়ক পরিবহন আইনটি মতামতের জন্য পাঠালে তারা অপরাধ ও দণ্ডের বিধান পর্যালোচনা করে খসড়া আইনটি সংযোজন ও পরিমার্জনের জন্য লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে।

ওই কমিটির প্রতিবেদন হুবহু রেখে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।

গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলে ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করে। রাজধানীসহ এই আন্দোলন দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।

এ আন্দোলন থেকে নয়টি দাবি উঠে আসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে। এর মধ্যে প্রথম দাবিটি হচ্ছে- বেপরোয়া চালককে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই শাস্তি সংবিধানে সংযোজন করতে হবে।

তাদের এ আন্দোলনের মুখে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের বিষয়টি গতি পায়। গত ১ আগস্ট ভেটিং শেষে আইনের খসড়াটি  সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়।

সারাবাংলা/একে

আরও পড়ুন

সড়ক আইন: শাস্তির আওতায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান-প্রকৌশলীরাও
পাঁচ বছরের সাজার বিধান রেখে নিরাপদ সড়ক আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন