বিজ্ঞাপন

শাহবাগ-রামপুরা-বসুন্ধরায় দিনভর সংঘর্ষ, টিয়ারশেল-রাবার বুলেট

August 6, 2018 | 11:09 pm

।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দিনভর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে।

এর মধ্যে শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রামপুরায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এই সংঘর্ষ ঘটে। টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

বিজ্ঞাপন

শাহবাগে শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ, জলকামান-টিয়ারশেল নিক্ষেপ
এদিন দুপুর ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে অবস্থান নিতে চায়। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ব্যানারে মিছিল নিয়ে এগুতে থাকে। পুলিশ বাধা দিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পুলিশ ছাত্রদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ছোড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল
এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ টিয়ারশেলের পাশাপাশি ফাঁকা গুলিও ছোড়ে। প্রস্তুত রাখা হয় জলকামান। এরপর পুলিশ অবস্থান নেয় পাবলিক লাইব্রেরির সামনে আর শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয় চারুকলার সামনে।

শাহবাগ চত্বরে আসার আগে সকালে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিল শেষে তারা শাহবাগের দিকে আসতে শুরু করে। মিছিল থেকে দুইজনকে আটক করে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠনের কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’-এর ব্যানারে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। টিএসসি’র সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ আসার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। মিছিলটি তখন ঘুরে অপরাজেয় বাংলায় গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে অন্তত ৩শ’ শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়ে শাহবাগ ‘ফ্রি’ করলো পুলিশ
প্রায় আধাঘণ্টা ধরে শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষের পর বিকেল ৪টার দিকে শাহবাগ মোড়ের পরিস্থিতি শান্ত হয়। জলকামান ব্যবহার ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়ে শাহবাগ মোড় ‘ফ্রি’ করে পুলিশ।

বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেন, “গত কয়েকদিন আমরা কোনো ব্যবস্থা নেইনি। অনেক ধৈর্য ধরেছিলাম। আজ থেকে চেষ্টা করছি শাহবাগ মোড় ফ্রি রাখার জন্য। এসব ‘লোকজন’কে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে, কিন্তু তারা শোনেনি। এরপর যখন আমরা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছি, তখন তারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ভেতরে সরিয়ে দিয়েছি।”

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, গত কয়েকদিন থেকেই জিগাতলা-শাহবাগ যানচলাচলে বিঘ্ন ছিল। সাধারণ জনগণ এই পথে চলাচল করতে পারেনি। অথচ এখানে বারডেম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় দু’টি হাসপাতাল আছে। আবার এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। সবদিকে যাওয়ার প্রধান রাস্তা এটাই।

মারুফ সরদার আরো বলেন, আমরা সবসময় চেষ্টা করি শাহবাগ মোড়ে যেন কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা (অবস্টাকল) না থাকে। শাহবাগে যেন যানচলাচল স্বাভাবিক থাকে। কারণ, এখানে সারাদেশ থেকে রোগী আসে। আমরা চাই না তাদের চিকিৎসায় বিঘ্ন হোক বা হাসপাতলে পৌঁছানোর আগেই কোরো রোগী মারা যাক।

পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ

নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ
সকাল থেকেই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) শিক্ষার্থী-পুলিশ মুখোমুখি অবস্থানের কারণে সারাদিনই যানচলাচল বন্ধ ছিল। দফায় দফায় সংঘর্ষের পর রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সামনের পরিস্থিতি শান্ত হয়।

পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, সোমবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা নর্থ এনএসইউ ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে।

শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে পুলিশকে লক্ষ্য করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেট পর্যন্ত এসে অবস্থান নেয়।

এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় র‌্যাব। দফায় দফায় সংঘর্ষের পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটে শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ায়। সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল মারে। এরপর পুলিশ তাদের সরাতে টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে এরপরও তারা দফায় দফায় পুলিশের ওপর চড়াও হয়।

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি

ভিসি’র হস্তক্ষেপে শান্ত হয় পরিবেশ, ফিরে যায় ইস্ট-ওয়েস্টের শিক্ষার্থীরা
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি’র উপাচার্য সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিনের হস্তক্ষেপে পুলিশ এবং শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ থেমে যায়।

সোমবার (৬ আগস্ট) বিকেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন। এরপর তিনি উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেন। এ সময় অনেক অভিভাবক উপস্থিত হয়ে তাদের সন্তানকে নিরাপদে নিয়ে যান।

ফরাস উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। পুলিশের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। উভয়পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। আমরাদের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ছাত্র-ছাত্রীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান নিলে পুলিশ ভেতরেও হামলা করার চেষ্টা করে। তখন শিক্ষার্থীরাও ভেতর থেকে ইট-পাটকেল ছোড়ে।

ইস্টওয়েস্ট-ইউনিভার্সিটি, ছাত্র আন্দোলন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস

বিকেলে ডিএমপি বাড্ডা জোনের উপ-কমিশনার আহমেদ হুমায়ূন সারাবাংলাকে বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা ফিরে গেছে।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে রাস্তায় নামেন ইস্ট ওয়েস্টের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে জহুরুল হক সিটির সামনে মূল রাস্তায় অবস্থান নেয়। ছাত্র-ছাত্রীরা জানায়, একই এলাকায় সকাল থেকে অবস্থান নেন স্থানীয় কয়েকশ যুবক। এরা পুলিশের পাহারায় সেখানে অবস্থান নেয়।

শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এলে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল ছোড়ে। পুলিশের পাশাপাশি ওই যুবকরা ছাত্রদের ধাওয়া দেয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পুলিশের ধাওয়ায় ছাত্ররা ক্যাম্পাসের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে সাত শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ।

সারাবাংলা/এটি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন