বিজ্ঞাপন

সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারে সরকারকে ৭২ ঘণ্টা সময়

August 7, 2018 | 4:08 pm

।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) উদ্যোগে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এ সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারে সরকারকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন সাংবাদিক নেতারা।

মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

ডিইউজে সভাপতি আবু জাফর সূর্যরে সভাপতিত্বে মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদ, সহসভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ ও ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীসহ বিএফইউজে, ডিইউজে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ও ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের (ডিএসইসি) নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলসহ অন্যান্য সাংবাদিক নেতারাও এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।

মানববন্ধনে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকরা বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছেন। রোববার ফটোসাংবাদিকদের ওপর হামলা ন্যাক্কারজনক। এই জঘন্য হামলার সমস্ত ভিডিও ফুটেজ আছে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। চাইলেই এসব ফুটেজ দেখে হামলাকালীদের বের করা সম্ভব। সরকারকে দ্রুত আন্তরিকভাবে এ হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় হতে নির্দেশ দেওয়া উচিত।

বিজ্ঞাপন

বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিকদের ওপর গত কয়েকদিন একের পর এক হামলা চালানো হয়। এমনকি পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের বেছে হামলা চালায় কিছু দুর্বৃত্ত। এই হামলাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখে দাঁড় করাতে হবে সরকারকেই।

বিএফইউজের সহসভাপতি এবং জিটিভি ও সারাবাংলা ডটনেটের এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, প্রতি মুহূর্তে হাজারও চাপ এবং বিপদ উপেক্ষা করে সত্য সংবাদ সংগ্রহ ও তা প্রকাশের দায়িত্ব  সাংবাদিকদের। এ অবস্থায় সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়া এবং হামলা করার মাধ্যমে সত্য নয়, গুজবের পথ প্রশস্ত হচ্ছে। সব ধরনের রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনকারীদের সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের মাধ্যমে সত্য প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটি কাম্য নয়।

বিজ্ঞাপন

বিএফইউজের মহাসচিব ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিশেষ প্রতিনিধি শাবান মাহমুদ বলেন, হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পেশাজীবীদের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সাংবাদিকরা বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। ঐক্যের মাধ্যমে সব বাধা প্রতিরোধ করতে হবে।

বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ ও নাগরিক টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক দীপ আজাদ বলেন, প্রশাসন উসকানিদাতার পরিচয় প্রকাশ করতে পারছে, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের ফুটেজ তারা গণমাধ্যমের কাছে চাইছে। প্রশাসনের ইচ্ছা থাকলে তাদের কাছে যে ফুটেজ আছে, তাই দিয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকরা আহত হলে সমাজের অন্য সবাই আহত হয়। অন্যদের সংবাদ প্রকাশ বন্ধ থাকে। ফলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সাংবাদিকরা আহত হওয়ার পর তিন দিন পেরিয়ে গেলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা তথ্যমন্ত্রী- কেউই সাংবাদিকদের দেখতে হাসপাতালে গেলেন না।

ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, পোশাদার সাংবাদিকরা যদি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো বাধার মুখে পড়েন, তবে তার পাশে সর্বোতভাবে থাকবে সাংবাদিক সমাজ। তবে কেউ যদি সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে বা সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে গুজব ছড়ায়, অপসাংবাদিকতা করে, তাদেরও সাংবাদিক সমাজ রুখে দেবে।

মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংবাদ সংগ্রহের সময় গত তিন দিনে অন্তত ২৩ জন সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) এম এ আহাদ, দৈনিক বণিক বার্তার পলাশ শিকদার, নিউজ পোর্টাল বিডি মর্নিংয়ের আবু সুফিয়ান জুয়েল, দৈনিক জনকণ্ঠের জাওয়াদ, দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ ফটোগ্রাফার সাজিদ হোসেন ও প্রতিবেদক আহম্মেদ দীপ্ত। এ ছাড়া ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার রাহাত করীম, এনামুল হাসান, মারজুক হাসান, হাসান জুবায়ের ও এন কায়ের হাসিনের ওপরও হামলা হয়েছে।

সরকারকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে গত ২ আগস্ট উত্তরা জসিম উদ্দিন এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন সারাবাংলা ডটনেটের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট উজ্জল জিসান। একই দিন মিরপুর এলাকায় মোহনা টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান ও রিপোর্টার লাঞ্চিত হন। গত ৪ ও ৫ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডি, জিগাতলা, সায়েন্স ল্যাব, বাড্ডা, রামপুরাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহের সময় পুলিশের উপস্থিতিতে হেলমেট পরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।

এদিকে, প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের এই মানববন্ধনের আগে মঙ্গলবার সকালেও হামলাকারীদের গ্রেফতারে সরকারকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন সাংবাদিকরা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারা গোল কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দের ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীতে কর্মরত সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনকারী সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন