বিজ্ঞাপন

সড়ক আইনে জনস্বার্থ নয়, মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছে

August 8, 2018 | 5:05 pm

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।। 

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নতুন ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ অনুমোদনে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

তাদের মতে, প্রস্তাবিত আইনটিতে পথচারী ও জনস্বার্থ প্রাধান্য পায়নি। এ কারণে এই আইনের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও আশা করা যায় না বলে মনে করেন তারা।

বুধবার (৮ আগস্ট) দুপুরে বিআইপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন ও সড়ক নিরাপত্তা শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকে একমাত্রিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং যানবাহনের চালকের ওপর সড়ক দুর্ঘটনার অধিকাংশ দায়ভার বর্তানোর প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে। এর মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়ক নিরাপত্তার বহুমাত্রিকতা স্থান পায়নি। সড়ক নিরাপত্তার সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত অন্যান্য অনুষঙ্গ-সড়কের পরিকল্পনা, ডিজাইন, তদারকি, গুণগত মান এবং যানবাহনের ফিটনেস তদারকি, যানবাহনের ড্রাইভার ও শ্রমিকের তদারকি, ব্যবস্থাপনা ও যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টি সংযুক্ত হয়নি। এতে সড়কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারিগরী ব্যক্তি, বাস মালিক এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা জনিত দায়মুক্তির সুযোগ রয়েছে বলে মনে করে সংগঠনটি। উপরোক্ত অনুষঙ্গগুলোকে বাদ দিয়ে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন করা আদৌ সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, আইনে সড়ক নিরাপত্তা ও সড়ক দুর্ঘটনা সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবিত শাস্তির যে বিধি-বিধান রাখা হয়েছে, তা নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা করতে পর্যাপ্ত নয় এবং বাংলাদেশে প্রচলিত অন্য অনেক আইনের ধারার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। প্রস্তাবিত আইনে বেপরোয়াভাবে বা অবহেলা করে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনায় কেউ গুরুতর আহত হলে চালককে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে যা পর্যাপ্ত নয়।

এরূপ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর কারাদণ্ড হওয়া উচিত বলে মনে করে সংগঠনটি। পাশাপাশি অর্থ দণ্ডের পরিমাণ আরও বাড়নো এবং কারাদণ্ডের পরিবর্তে অর্থদণ্ডের সুযোগ বাতিল করা উচিত। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের দাবি অনুযায়ী এই আইনের নাম ‘সড়ক পরিবহন ও সড়ক নিরাপত্তা আইন’ করার প্রস্তাব করার তিনি।

বিজ্ঞাপন

ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আইনে হত্যার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট গাড়ি দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটিতে কারা থাকবেন তার বিশেষ বর্ণনা অনুপস্থিত। এই তদন্ত কমিটিতে উপযুক্ত কারিগরি লোক নিশ্চিত না করা গেলে হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়বে। আইনের বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রণয়নের জন্য দ্রুত বিধিমালা প্রণয়ন করা দরকার। পাশাপাশি নারী নিরাপত্তাসহ বিশেষ ইস্যুতে আলাদা বিধিমালা দরকার। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত ট্রাফিক মনিটরিং সেল এবং বিশেষ ট্রাফিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।

গাড়ির গতিসীমা সম্পর্কিত কোনো আইন নেই ইল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন সড়কের জন্য গাড়ির সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ম সীমা নির্ধারণ করে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর আইনি কাঠামো ও পদক্ষেপ নেয়া দরকার। বাস চালক ও সহযোগীদের শ্রমঘণ্টা নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়ন ব্যতিরেখে নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা করা কখনই সম্ভব নয়। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে চালক ও সহযোগীদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য নিয়মিতভাবে চালক ও সহযোগীদের বাৎসরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করা আবশ্যক।

তিনি বলেন, দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত এবং যৌক্তিক দাবীকে সমর্থন করে। আমরা শিক্ষার্থীদের এই দাবীকে নাগরিক হিসেবে মৌলিক অধিকার মনে করি এবং সারাদেশে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিআইপির সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম আবুল কালাম। সহসভাপতি অধ্যাপক আকতার মাহমুদ, যুগ্ম সম্পাদক ও পরিকল্পনাবিদ মাজহারুল ইসলামসহ অনেকে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসএইচ/এমআই

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন