বিজ্ঞাপন

‘সড়কে বাস থাকবে কিনা সেটা পুলিশের বিষয় নয়’

August 11, 2018 | 5:15 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: অতীতে ছাড় দিতে গিয়ে সড়কে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। অনিয়ম করলে কাউকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। রুট পারমিট ছাড়া কোন গাড়ি সড়কে চলবে না। এজন্য চেক পোস্ট বসিয়ে সড়কের জায়গায় জায়গায় তল্লাশি করা হবে, এর ফলে সড়কে গাড়ি থাকবে কি, থাকবে না তা পুলিশের দেখার বিষয় নয়। পুলিশের কাজ হচ্ছে আইন অমান্য করলেই ব্যবস্থা নেবে।

শনিবার (১১ আগষ্ট) দুপুর দেড়টায় ডিএমপি সেন্টারে এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এসব কথা বলেন।

কমিশনার বলেন, সড়কে আমরা নতুনভাবে তল্লাশি শুরু করেছি, যেসব বাস কোম্পানি রুট পারমিটের বেশি বাস রাস্তায় নামিয়েছেন। কোন কোম্পানি ৫০ টি রুট পারমিট পেয়ে থাকলে জানা গেছে, ওই কোম্পানি ২০০ টি বাস চালাচ্ছেন। ফিটনেস নেই তারপরেও গাড়ি চালাচ্ছেন। আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি থাক বা না থাক সে দায়িত্ব পুলিশের নয়। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে পুলিশ আইন প্রয়োগ করবে। রাস্তায় গাড়ি থাকবে কিনা সেটা দেখবে বিআরটিএ সহ অন্যান্য সংস্থা। কোনো অনিয়ম করে কাউকে সুবিধা দেওয়া হবে না। অতীতে এটা করতে গিয়েই সড়কে আজ বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, গণপরিবহনের মালিকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কেন তারা লাইসেন্সবিহীন গাড়ি সড়কে নামাবে, কেন তারা ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালাবে, কেন রুট পারমিটের বেশি গাড়ি চালাবে। আজ নামাবে না কাল তো নামাবে। তখনই ধরবে পুলিশ। তবুও কোন অবস্থাতেই সড়কে বিশৃঙ্খলা হতে দেওয়া হবে না।

মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে কমিশনার বলেন, আপনারা ড্রাইভারের লাইসেন্স আছে কিনা তা চেক করুন। সে মাদকাসক্ত কিনা সেটাও দেখুন। সে গাড়ি চালাতে সক্ষম কিনা সেটাও চেক করুন। চুক্তিতে গাড়ি চালাতে দেবেন না। চুক্তিতে গাড়ি চালাতে দিলে অধিক লাভের আশায় তারা পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালায়। যার ফলে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে।

চালকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আপনারা পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালাবেন না। চালকের ওপর অনেকগুলো মানুষের জীবন নির্ভর করে। সামান্য ভুলের কারণে মানুষের জীবন নিভে যায়। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাবেন না। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামাবেন না। রুট পারমিট ছাড়া ঢাকা শহরে গাড়ি চালাবেন না।

বিজ্ঞাপন

নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে কমিশনার বলেন, রাস্তায় অবস্থিত ফুটওভার ব্রীজ ও আন্ডারপাস ব্যবহার করুন। যারা রাস্তায় চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন, মোবাইলে কথা বলতে বলতে যারা রাস্তা পার হচ্ছেন, সড়কে দুর্ঘটনার জন্য শুধু চালককেই দায়ী করা যাবে না। যারা এরকম করছেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইন প্রয়োগ করা হবে।

কমিশনার বলেন, বিদেশের মানুষ প্রায় ট্রাফিক আইন মানে। অথচ এদেশে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ ট্রাফিক আইন মানতে চায় না। কিন্তু পুলিশ দিনরাত ধরে ট্রাফিকের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা শহরে রাস্তা অপ্রশস্ত, রাস্তার তুলনায় গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি, অনিয়ন্ত্রিত যাত্রী পারাপার, বিভিন্ন ইন্টারসেকশনে নিয়মানুযায়ী সিগনাল না থাকা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করার প্রবণতা, উন্নয়নমুলক কাজে যত্রতত্র রাস্তা খোড়াখুড়ি, অনেক বেশি মোটরসাইকেলের চলাচল, রাস্তার পাশে কমিউনিটি সেন্টার, দোকানপাট, মার্কেট এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে জনগণের আইন না মানার প্রবণতা ঢাকা শহরে দুর্ভোগের মুল কারণ।

আমাদের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ট্রাফিক সিগনাল না থাকায় পুলিশ হাতের ইশারায় গাড়ি চলাচল করাতে থাকে। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ধরণের খেলাসহ ইভেন্টগুলোকে গুরুত্ব দিতে গিয়েও রাজধানীতে যানজট লেগে থাকে। এতো সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য পুলিশ কাজ করছে।

বিজ্ঞাপন

ট্রাফিকের সাথে চারটি বিষয় জড়িত। ট্রাফিক ল যেটা পুলিশ করে থাকে। ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং যা সিটি করপোরেশন করে থাকে, ট্রাফিক এডুকেশন যা এনজিও বা সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিআরটিএ করে থাকে। ট্রাফিক ইনভায়রনমেন্ট যা সড়ক বিভাগ করে থাকে। দিন শেষে সাধারণ মানুষ পুলিশ কি করলো সেটাই বিবেচনায় নেয়।

কোমলমতি শিশু সন্তানরা আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে তাদের আন্দোলনকে আমরা যৌক্তিকভাবে সমর্থন দিয়েছি।

গত ৬ দিনে মামলা হয়েছে ৫২ হাজার ৪১৭টি। ১১ হাজার ৪০৫ জন চালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ৫ হাজার ৫৭২টি গাড়িকে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ৩ কোটিরও বেশি টাকা। আর গত দুই বছরে হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার করার কারণে ৪৪ হাজার ৫৮৫ টি মামলা, বীকন লাইট ব্যবহারের কারণে ৫ হাজার মামলা, উল্টো পথে চালানোর জন্য ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৬১টি, ৪ লাখেরও বেশি মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা ও এক হাজার মোটরসাইকেল ডাম্পিংয়ের করা হয়েছে।

বিদেশী সিস্টেমে আমরা নতুনভাবে ভিডিও মামলা করা শুরু করেছি। প্রায় বছর খানেক হলো এই মামলার সফলতা এসেছে। এখন পর্যন্ত ৯৯ হাজার ভিডিও মামলা করা হয়েছে। ব্যক্তি, তার পেশা, অবস্থান, শ্রেনী সব কিছুর উর্ধে থেকে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ করা হবে।

কোমলমতি শিশু সন্তান যারা আমাদের মানষিক শক্তিকে বৃদ্ধি করে দিয়েছে। সেই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আইন ভঙ্গকারী যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছি।

সারাবাংলা/ইউজে/জেএএম

আরও পড়ুন

ট্রাফিক সপ্তাহ বাড়ল তিনদিন, কঠোর থাকবে ডিএমপি
‘অভিযোগ পেলে সাংবাদিক নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা’

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন