বিজ্ঞাপন

বিআরটিএতে কমছে তদবিরবাজি

August 13, 2018 | 9:09 am

।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বিশেষ পরিস্থিতিতে পাল্টে যাওয়া দৃশ্যপট এখনও বহাল রয়েছে রাজধানীর মিরপুরের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে লাইসেন্স কিংবা কাগজপত্র করতে আসা মানুষের ভিড় লেগেই আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সুযোগে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক সুবিধাভোগীরাও নিয়মের আওতায় আসছেন। সেক্ষেত্রে তদবির আর টু-পাইসেরও সুযোগ থাকছে না।

রোববার (১২ আগস্ট) প্রায় সারাদিন বিআরটিএ কার্যালয় ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুরো এলাকায় নতুন মুখের আনাগোনা। বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ কাজে ব্যস্ত। তাদের কেউ নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করছেন, কেউ করছেন লাইসেন্স নবায়নের আবেদন। আবার কেউ লাইসেন্স হারিয়ে এখন ডুপ্লিকেট লাইসেন্সের জন্য আবেদন করছেন। কেউ কেউ এসেছেন এসব লাইসেন্স নিয়ে যেতে।

বিজ্ঞাপন

লাইসেন্সের জন্য ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট জমা দেওয়া, মোটরযানের ফিটনেস পরীক্ষা করা, মালিকানা পরিবর্তন করা এবং ডিজিটাল নম্বরপ্লেট পাওয়াসহ বিভিন্ন কাজে আসা লোকজনকে শৃঙ্খলার সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে সরকারি এই দফতরে, যা সপ্তাহ দুয়েক আগেও ছিল কল্পনাতীত। সেবা নিতে আসা লোকজন এখন নিজের কাজ নিজে করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

বিআরটিএ কম্পাউন্ডে বরাবরই ‘দালাল দৌরাত্ম্য’ ওপেন সিক্রেট হলে গত ক’দিনে সে চিত্রও বদলেছে। তাতে ভূমিকা রয়েছে বিআরটিএ’রও। রোববারও বিআরটিএ এবং এর আশপাশের এলাকায় কয়েকদফা মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হতে দেখা গেছে। সড়কের পাশে কিংবা আশপাশের মার্কেটগুলোয় গিয়ে মোবাইল কোর্ট হানা দিয়েছেন দালালদের আস্তানায়।

বিজ্ঞাপন

মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনিবুর রহমান সারাবাংলা’কে বলেন, গত ক’দিন ধরে বিরামহীনভাবে কাজ করছেন তারা। কোথাও দালালদের বিষয়ে কোনো তথ্য পেলেই সেখানে হানা দেওয়া হচ্ছে। দালালদের কাছ থেকে যেন কোনো ধরনের সেবা নেওয়া না হয়, সেজন্য সেবাগ্রহীতাদেরও সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে বলেও জানান তিনি।

বিআরটিএ’র তথ্যকেন্দ্র থেকেও একটু পরপরই ঘোষণা করা হচ্ছে, যেন দালালদের খপ্পরে কেউ না পড়েন। লাইসেন্স কিংবা অন্য কোনো ব্যাপারে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ডেস্কে নিয়ে কাজ সারার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই সুযোগে বিআরটিএ’তে একরকম ‘শুদ্ধি অভিযান’ চলছে। কর্মকর্তারা কোনো ধরনের তদবিরের ঝামেলা ছাড়াই কাজ করতে পারছেন। এ অবস্থা আরও কিছুদিন চালু থাকলে দেশের পরিবহন ব্যবস্থা অনেকখানি নিয়মতান্ত্রিক হবে।

বিজ্ঞাপন

নাম গোপন রেখে বিআরটিএ’র একজন কর্মকর্তা সারাবাংলা’কে বলেন, ‘সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রায় ৮০ ভাগ গাড়িরই কাগজপত্র ঠিক নেই। অথচ গাড়ির কাগজপত্রের জন্য ঠিকই টাকা বরাদ্দ থাকে মন্ত্রণালয় থেকে।’ এই ধাক্কায় এ অনিয়মের বড় একটি সংশোধন হবে বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।

রোববারও বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনের সড়কে ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। এর বেশিরভাগই প্রাইভেটকার ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাড়ি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর যানবাহনও বাদ ছিল না। এ ছাড়া ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশাও অনেক। কিন্তু আনসার সদস্যদের তৎপরতার কারণে কোথাও তেমন কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। সিরিয়াল অনুযায়ী প্রতিটি যানবাহন ভেতরে ঢুকে ফিটনেস পরীক্ষা করছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইরে বেড়িয়ে যাচ্ছে।

নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আসা লোকজন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দেওয়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম সেরে নিচ্ছেন। ছবি তোলা ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেয়ার সময়ও সবাইকে শৃঙ্খলার সঙ্গে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তবে দীর্ঘ লাইন ও ভিড়ের কারণে একইদিনে সব প্রক্রিয়া অনেকেই শেষ করতে পারছেন না বলেও অভিযোগ মিলেছে। কিছু ভোগান্তির খবরও মিলেছে। বেশি ভোগান্তি দেখা গেছে ব্যাংকে বিভিন্ন ফি জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে। টাকা জমা দেওয়ার জন্য এনআরবি ও ব্র্যাক ব্যাংকের কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছতেই লোকজনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

৩/৪ ঘণ্টায়ও ট্যাক্সের টাকা জমা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সুলতান শেখ নামের এক গাড়ি মালিক। এই লাইনে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, পুলিশ, বিজিবি, সেনা সদস্যসহ প্রায় এক হাজার ব্যক্তিকে টাকা জমা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ব্যাংকের টাকা জমা না দিলে অন্য কোনো কাজই সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না।

ফিটনেসের জন্য একটি রফতানিমুখী গার্মেন্টস’র কাভার্ড ভ্যান নিয়ে বিআরটিএ অফিসে আসা চালক ইসরাফিল বলেন, ‘এবার আর সিরিয়াল ব্রেক করার সুযোগ নেই। আনসার সদস্যরাও ভালো হয়ে গেছে। আগে টাকা দিলে সিরিয়াল ব্রেক করে গাড়ি সামনে নেওয়া যেত। এবার তা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষার কারণে কষ্ট হয়েছে, কিন্তু কাজের শৃঙ্খলা ফিরেছে।’ এভাবে চললে দেরি হলেও কষ্ট নেই বলে মন্তব্য তার।

বিআরটিএ এর উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মাসুদ আলম সারাবাংলা’কে বলেন, ‘আন্দোলনের কারণে অফিস খোলার পর প্রচণ্ড ভিড় ছিল। তবে সে ভিড় কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তারপরও যা আছে, তা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। সবাই সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। জনবলের স্বল্পতার কারণে পর্যাপ্ত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ জনবল বাড়ানো হলে আরও বেশি মানুষকে সেবা দেওয়া সম্ভব হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সারাবাংলা/এমএস/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন