বিজ্ঞাপন

‘পলাতক খুনিদের আনতে পারিনি, বিষয়টা পীড়া দেয়’

August 15, 2018 | 9:18 am

।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ড পাওয়া ১২ জনের মধ্যে ছয় আসামি পলাতক রয়েছেন। পরপর দুই দফায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও এ বিষয়ে উল্লেখ করার মতো কোনো অগ্রগতি নেই। এমনকি পলাতক খুনিদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান চিহ্নিত করা যায়নি।

যদিও গত বছর পর্যন্ত মন্ত্রীরা বলেছেন, পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এই বছরে এসে আইনমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলছেন যে বিষয়টি অনেক জটিল, চেষ্টা চলছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সারাবাংলার সঙ্গে আলাপ করার সময় এই বিষয়ে সরকারের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে কাজ তার মধ্যে টপ ইস্যু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ড পাওয়া খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করা। কিন্তু আনফরচুনেটলি ফিরিয়ে আনার বিষয়টা এতটাই জটিল যে গত কয়েক বছরে কাউকেই বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে পারিনি। এ বিষয়টা আমাদেরকে পীড়া দেয়।’

বিজ্ঞাপন

একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দণ্ড পাওয়া পলাতক আসামীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগের অভাব রয়েছে। যেরকম গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়ে কাজ করার কথা সরকারের পক্ষ থেকে তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে সফলতার জন্য জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ সেল তৈরি করলে কাজ হতো।

সূত্রগুলো আরও বলছে, এ বিষয়ে সরকার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। কিন্তু মন্ত্রীরা যেখানে নিজেদের দফতর সামলাতেই ব্যস্ত সেখানে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপে নেওয়ার সময় কোথায়?

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ড পাওয়া পলাতক ৬ আসামির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রাশেদ চৌধুরী এবং কানাডায় নুর চৌধুরীর অবস্থান অনেক আগেই শনাক্ত হয়েছে, এ তথ্য জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সারাবাংলা’কে বলেন, ‘বাকি ৪ জনের মধ্যে থেকে একজন পাকিস্তানে আছেন। এমন তথ্য জানার পর একাধিকবার পাকিস্তান সরকারের কাছে তথ্য চাওয়া হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘অন্য আরেকজন ইউরোপের একটি দেশে আছেন বলে জেনেছি। সেদিকে আমরা জোরাল দৃষ্টি রাখছি কিন্তু এখনো উল্লেখযোগ্য কিছু পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বাকি দুইজনের ক্ষেত্রে আফ্রিকার একটি দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের কথা জানা গেছে, যেখানে বেশ সমস্যা চলছে, এমন দেশের কথাও শুনতে পাচ্ছি। আমরা মনে করি, অন্তত দুটি ক্ষেত্রে, রাশেদ চৌধুরী এবং নুর চৌধুরীর ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা এগিয়েছি। বাকিদের বিষয়ে আমাদের আরো কাজ করতে হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বছর চারেক আগে বলেছিলেন, আফ্রিকা থেকে পলাতক একজন খুনিকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দেশটির সঙ্গে একটি চুক্তি করা হচ্ছে। আফ্রিকা এ বিষয়ে চুক্তি করতে সম্মত হয়েছে।’

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে আফ্রিকার সঙ্গে এখনো এমন চুক্তি করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সারাবাংলা’কে বলেন, ‘আফ্রিকার সঙ্গে চুক্তি করতে একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা কাজ করছেন। অচিরেই ফল দেখবেন।’

এদিকে আইনমন্ত্রী আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকর্মীদের সোমবার (১৩ আগস্ট) বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয় আনার প্রক্রিয়া খুব কঠিন হয়ে গেছে। তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই বিস্তারিত বলতে পারব। এর আগেও হয়ত বলা হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা। তবে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। ফলে আমরা যখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারব তখনই বলতে পারব।’

বিজ্ঞাপন

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের নেওয়া উদ্যোগের ফলে নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন কানাডার উচ্চ আদালত খারিজ করেছে। এখন তাকে ফেরত পাঠানোর আগে ঝুঁকি মূল্যায়নের দর কষাকষি চলছে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনতে গত ২০১৫ সালে বেসরকারি আইন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্কাডেন এলএলপিকে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ। স্কাডেন এলএলপি জানিয়েছে, রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তন হওয়াতে সময় বেশি লাগছে।

কূটনৈতিক সূত্রে আরো জানা গেছে, বাকি ৪ জন পলাতক খুনির মধ্যে মোসলেম উদ্দিন জার্মানিতে, শরিফুল হক ডালিম স্পেনে, খন্দকার আবদুর রশিদ কখনো পাকিস্তানে কখনো লিবিয়ার বেনগাজিতে এবং আব্দুল মাজেদ সেনেগালে অবস্থান করছেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে সেনাবাহিনীর একটি দল ওই সময়ের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির বাসায় গিয়ে একটি অভ্যুত্থান সংঘটিত করে তাকে হত্যা করে। মূলত ওই অভ্যুত্থান ছিল জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার একটি কলঙ্কজনক ঘটনা এবং ১৯৭৫ সালে ওই ঘটনা ঘটানোর পর দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) আইন জারি করে দীর্ঘ ২১ বছর এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আইনি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রাখা হয়।

গত ১৯৯৬ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) আইন বাতিল করা হয়। গত ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আপিল বিভাগ থেকে গত ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর চূড়ান্ত রায়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার অভিযোগে ১২ জনকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়। গত ২০১০ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ১২ জনের মধ্যে ৫ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়। এরা হলেন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমদ (আর্টিলারি), বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (ল্যান্সার)।

আরেক দণ্ড পাওয়া আসামি আজিজ পাশা গত ২০০১ সালের মাঝামাঝি জিম্বাবুয়েতে মারা যান বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন। বাকি ছয়জন এখনো বিদেশে পলাতক।

সারাবাংলা/জেআইএল/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন