বিজ্ঞাপন

ফেসবুক খোলা রেখেই গুজব প্রতিরোধ করতে হবে: তথ্যমন্ত্রী

August 19, 2018 | 2:36 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ‘মিথ্যাচার ও গুজব রটনাকারীদের শক্তভাবে দমন করব। কিন্তু সেটা ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব বন্ধ করে নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জানালাটা আমরা খোলা রাখার পক্ষে অবস্থান নেব। তবে সঠিক তথ্য সরবরাহের জন্য মূলধারার গণমাধ্যমকে সামাজিক মাধ্যমে আরও সক্রিয় হতে হবে।’

রোববার (১৯ আগস্ট) সকালে ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম সেন্টার বাংলাদেশ (আইজেসিবিডি) ও বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এসব কথা বলেন।

পিআইবির সেমিনার কক্ষে আয়োজিত ‘ফেসবুকে গুজব এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পিআইবির মহাপরিচালক শাহ আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহসভাপতি এবং সারাবাংলা ডটনেট, দৈনিক সারাবাংলার ও জিটিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মনজুরুল আহসান বুলবুল, সারাবাংলার নির্বাহী সম্পাদক মাহমুদ মেনন খান, বিএফইউজে‘র কোষাধ্যক্ষ ও নাগরিক টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক দীপ আজাদসহ আরও অনেকে।

সেমিনারে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি কোনো অবস্থাতেই তথ্য চাপা দেওয়ার পক্ষে নই। সুতরাং মূলধারার গণমাধ্যম নির্ভয়ে ঘটনার সঠিক বিবরণ তুলে ধরুন।’

বিজ্ঞাপন

‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুজব রটনা ও মিথ্যাচারের বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মিথ্যাচার ও গুজর রটানোর ক্ষেত্রে যতই ঝাপটা আসুক না কেন, যত রকম বিভ্রান্ত ছড়ানো হোক না কেন, মিথ্যাচার ও গুজব রটনাকারীদের শক্তভাবে দমন করার পাশাপাশি ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জানালাটা খোলা রাখার পক্ষে সরকার। এই অবস্থান নিয়েই আমরা বাকিটা আলোচনা করব।’— বলেন ইনু।

তথ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ফেসবুক, টুইটারের গুজব থেকে কিভাবে নিজেকে দেশবাসীকে রক্ষা করবেন— এই শিরোনামে ঈদের পর একটা প্রচার আন্দোলন হয়ে যাক। মূলধারার গণমাধ্যমের প্রতি আমার আহ্বান, আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে সঠিক তথ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করার জন্যই এই প্রচারে সামিল হবেন।’

তিনি আরও বলেন, তথ্যের উৎস যাচাই করে এই ব্যাপারে মূলধারার গণমাধ্যম এবং সরকারকে একমতে আসতে হবে। আমরা সম্প্রচার আইন, সম্প্রচার নীতিমালা, গণমাধ্যম নীতিমালা করার চেষ্টা করছি। আমরা যখন এগুলো নিয়ে কাজ করছি, তখন গণমাধ্যমে বিভাজন দেখা যাচ্ছে। আমরা চাই সবাই একটা কাতারে দাঁড়িয়ে এ বিষয়ে একমত হন, যেন গুজব রটনাকারীকরা গণমাধ্যমের পবিত্রতা নষ্ট করতে না পারে।

সারাবাংলা ও জিটিভি’র এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, বর্তমানে আমেরিকাসহ সারাবিশ্ব ফেক নিউজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনও এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। গুজবের সঙ্গে মূলধারার গণমাধ্যমের লড়াইটা চলছে এবং চলবেই। সম্প্রতি গুজবের বিরুদ্ধে তিনশ পত্রিকা একযোগে আমেরিকায় সম্পাদকীয় লিখেছে। তিনি বলেন, যারা গুজব ছড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে সবসময় চাপ তৈরি করতে হবে, ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সম্প্রচার জগতকে ব্যবহার করতে হবে। আর সেটি করতে হবে সত্যিকারের খবর দিয়ে। একইসঙ্গে গুজব নিউজ বর্জন করার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আরও বলেন, ফেসবুক নিউজের একটা ক্লু হতে পারে, কিন্তু উৎস নয়। সরকারকে সঠিক তথ্যটা ভালোভাবে সব জায়গায় প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, সত্যিকারের সংবাদই পারে সব ধরনের গুজব দূর করতে।

ইটিভি’র সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, গুজব মোকাবিলা করতে হলে আমাদের মূলধারার গণমাধ্যমকে আরও শক্তিশালী করতে হবে যেন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে কোনটা গুজব, আর কোনটা সংবাদ। প্রকৃত সংবাদ প্রকাশে বাধা দেওয়া হলে সুযোগসন্ধানীরা গুজব প্রচারের সুযোগ পায়। তিনি বলেন, সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সময় আমরা দেখতে পেলাম গুজব একটি সমাজকে কতটা ধাক্কা দিতে পারে। তাই আমাদের প্রকৃত সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে, সঠিক তথ্য দিয়ে গুজবকে মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সবসময় গুজবের পেছনে একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মূলধারার গণমাধ্যমকে আরও বেশি সক্রিয় করতে হবে।

পিআইবি’র মহাপরিচালক শাহ আলমগীর বলেন, গুজবের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। গুজব মোকাবিলা করতে গিয়ে সংবাদ প্রচার বন্ধ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়। বরং এতে গুজবের আরও বেশি ডালপালা গজাবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক গুজব খুবই ভয়াবহ। শাপলা চত্বরের ঘটনায় গুজব ছড়িয়ে ২০১৩ সালে চার সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হয়েছে। তখন বিভিন্নভাবে হুজুররা প্রচার করেছে, শাপলা চত্বরের ঘটনা আড়াই হাজার লোক মারা গেছে। এগুলো বড় ধরনের গুজব। এইসব গুজব মোকাবিলায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সারাবাংলার নির্বাহী সম্পাদক মাহমুদ মেনন বলেন, বর্তমানে ফেক নিউজ ফ্যাক্টরটা এমন এক জায়গায় পৌঁছে গেছে, যেটা সাংবাদিকতার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। একসময় হয়তো অজ্ঞতাপ্রসূত কিংবা তথ্যর কোনো ভুলের কারণে কখনও কখনও সাংবাদিকতায় ভুল হতো। ওটা ছিল এক ধরনের ভুল। আর বর্তমানে যেটা হচ্ছে, সেটা হচ্ছে ফেক নিউজ। এই নিউজটা কোনো একটা ফ্যাক্টরিতে তৈরি হচ্ছে। আর তৈরি হচ্ছে এমনভাবে যেন সেটা বিশ্বস্ততা অর্জন করে। পরে তা ফেসবুকের মাধ্যমে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটা নিয়ে প্রচারণা হচ্ছে।

তিনি বলেন, গুজব মোকাবিলা করতে অনলাইনে প্রচুর সত্যিকারের সংবাদ পরিবেশন করতে হবে, যেন মানুষ প্রচুর সংবাদের সরবরাহ থাকে। রিয়েল নিউজ যত বেশি প্রচারিত হবে, গুজব তত বেশি পেছনে পড়ে যাবে। ফলে আমাদের সঠিক ও তথ্যবহুল সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে গুজবের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে হবে।

এছাড়াও সেমিনারে বক্তরা বলেন, গুজব মোকাবিলা করতে হলে আমাদের অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগ দিতে হবে। গণমাধ্যমে অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগ দেওয়া না হলে সমাজ গুজবের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। তাই, সঠিক সংবাদ মূলধারার সংবাদপত্রে প্রচারের মাধ্যমেই গুজবকে মোকাবিলা করতে হবে।

সারাবাংলা/জিএস/জেএএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন