বিজ্ঞাপন

ট্রেনের মাথায় বাড়তি বোঝা

August 19, 2018 | 4:47 pm

।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ঈদের বাকি আর মাত্র দু’দিন। সড়ক-মহাসড়কে তাই ঢল নেমেছে ঘরমুখী মানুষের। রাজধানী ঢাকা থেকে বেরিয়ে এখন মানুষ ছুটছে শেকড়ের দিকে। ছোটাছুটির সেই মহারণে মানুষের প্রধান বাহন এখন ট্রেন।

রোববার (১৯ আগস্ট) সকালে কমলাপুর থেকে যতগুলো ট্রেন ছেড়ে গেছে তার প্রতিটিতেই যাত্রী ছিল নির্ধারিত আসনের চেয়ে কয়েকগুন বেশি। প্রচণ্ড গরমে গাদাগাদি, ঠাসাঠাসি করা এসব যাত্রীর একটাই লক্ষ্য কোনো মতে বাড়ি ফেরা।

গেল ক’দিন ট্রেনের শিডিউল বিপর্যের বিষয়টি আলোচনায় না এলোও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিযোগের স্তূপ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাইনে অতিরিক্ত ট্রেন চলায় কিছুটা ধীর গতি এসেছে। তবে ঈদ মৌসুমে এটি অস্বাভাবিক না।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ঘরমুখো মানুষের ভিড় ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ফাঁকা যাচ্ছে না ট্রেনের ছাদও। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসংখ্য মানুষ রওয়ানা হচ্ছেন ট্রেনের ছাদে, ইঞ্জিনের সামনে বসে এমনকি দুই বগির মাঝখানে বসে। প্রশাসন ট্রেনের ছাদে ওঠা ঠেকানোর চেষ্টা করলেও তা কাজে আসছে না।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ঘরমুখী যাত্রীদের ছাদে ওঠা বন্ধ করতে টিকেট ছাড়া কোনো যাত্রীকে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যারা ছাদে চড়েন, এদের অধিকাংশই বিনা টিকেটের যাত্রী। এই পদক্ষেপ কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এরপর প্ল্যাটফর্মে হঠাৎ যাত্রীদের টিকেট চেক করা হচ্ছে। টিকেট না থাকলে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা টহল দিচ্ছে। প্ল্যাটফর্মের ছাদ, টিনের চাল, ওভারব্রিজসহ যেসব জায়গা দিয়ে যাত্রীরা ছাদে ওঠে সেখানে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। এছাড়া দুই লাইনের মধ্যেও ছয়জন পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।

রেল পুলিশ কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ঈদের সময় ছাদে যাত্রী পরিবহন ঠেকানো এটা একটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই অসম্ভবকে আমরা সম্ভব করব এবং আমার সহকর্মীরা সেটা করে দেখিয়েছে।

তিনি বলেন, সবাই প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উৎসবে অংশ নিতে যে কোনো মূল্যে বাড়ি যেতে চায়। কিন্তু সবার আগে প্রয়োজন নিরাপত্তামূলক নিশ্চয়তা। এর সঙ্গে কোনো আপোষ চলে না। আমরা তাই কাউকে ঝুঁকি নিতে দেব না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ট্রেনের শিডিউলে ধাক্কা লেগেছে রোববার। যাত্রীরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ে ট্রেন প্ল্যাটফর্মে আসছে না। ফলে ছেড়েও যাচ্ছে না টিকেটে নির্ধারিত সময়ে। সব মিলিয়ে প্রতিটি ট্রেনের ক্ষেত্রেই দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বিলম্ব হচ্ছে।

স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ঈদে অতিরিক্ত ট্রেন নামানোয় লাইনে লোড পড়েছে। ফলে সময়ের ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হচ্ছে। ট্রেন আসার পর নির্ধারিত সময় বিরতি দিয়ে আবার ঢাকা ছাড়ছে সেগুলো। এছাড়া যাত্রী বেশি হওয়ায় তাদের নামাতেও বিভিন্ন স্টেশনে অতিরিক্তি সময় ব্যয় হচ্ছে। যে কারণে সমন্বয় করা যাচ্ছে না।

রাজশাহী যাবেন বলে আজিজুর রহমান তার পরিবার নিয়ে সকাল ৯টায় এসেছেন প্ল্যাটফর্মে। কিন্তু পৌনে ১১টায় তার ট্রেন আসেনি। তিনি বলেন, ঈদের সময় ঝামেলা হয় বলেই আগে এসেছি। এখনতো দেখছি আরো দু’ঘণ্টা পরে আসলেই হতো।

স্টেশনে অপেক্ষা করা অধিকাংশ যাত্রীদের অবস্থা একই। যারা নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগে এসে নির্ধারিত সময়ের দু’ঘণ্টা পরে ট্রেনের দেখা পেয়েছেন, তাদেরও ট্রেনে উঠতে হয়েছে রীতিমত য্দ্ধু করে।

স্টেশন সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চল বাদে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। রেলের প্রস্তুতি স্বত্বেও সময় ঠিক রাখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে যাত্রীচাপ ক্রমেই বাড়ছে। বিকেলের দিকে সর্বোচ্চ চাপ পড়বে ট্রেনে। সোমবারও একই অবস্থা হবে এমন শঙ্কার কথা জানাচ্ছে সূত্র।

“দেশের অনেক সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা ভালো না এবং যানজটও রয়েছে। যে কারণে যাত্রীরা ট্রেনের দিকে ঝুঁকছে বেশি।”

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার ঈদের চার দিন আগে থেকে ঈদের সাত দিন পর্যন্ত বিভিন্ন গন্তব্যে ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলছে। ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে দু’টি করে, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকা-লালমনিরহাট ও ঢাকা-খুলনা রুটে এসব ট্রেন চলছে। এছাড়া ভৈরব-কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রুটে ঈদের দিন চলবে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’।

এদিকে ঈদের দু’দিন আগে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়বে জানিয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, রেলওয়ের সক্ষমতা ও জনবল যা রয়েছে তা দিয়ে যাত্রীসেবা দিতে আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই। তারপরও শিডিউল বিপর্যয় কিংবা অতিরিক্ত যাত্রী এটি বাস্তবতা।

সারাবাংলা/এমএস/এটি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন