বিজ্ঞাপন

পশু জবাই: সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ জানেন না নগরবাসী!

August 22, 2018 | 4:36 pm

।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ঈদুল আজহাকে ঘিরে পশু কোরবানির জন্য রাজধানীতে স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া পশু কোরবানির পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহজ করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া ছিল সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। কোরবানির পশুর রক্ত ধুয়ে দিতে পর্যাপ্ত পানিসহ ব্লিচিং পাউডার ব্যবহারের কথা বলা হয়েছিল; কোরবানির সময় স্বাস্থ্যসম্মত পলিথিন ব্যবহারের নির্দেশনাও ছিল।

তবে ঈদুল আজহার নামাজের পর থেকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পশু জবাইয়ের নির্ধারিত স্থানগুলো প্রায় ফাঁকাই ছিল। মানা হয়নি অন্যান্য নির্দেশনাও। রাজধানীবাসীর অনেকেই বলছেন, সিটি করপোরেশনের এমন নির্দেশনার কথা তারা জানেনই না। আবার পশু কোরবানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ডিএসসিসি’র হটলাইন নম্বরের কথাও তারা জানেন না বলে দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বিভিন্ন এলাকায় পশু কোরবানির জন্য ৬০২টি স্থান নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সেসব স্থানে না গিয়ে বেশিরভাগ কোরবানিই হয়েছে বাসাবাড়ির সামনে, অলিগলিতে, বাড়ির সামনে মূল সড়কে কিংবা ড্রেনের পাশে। গত বছরের মতো এবারও অনেকেই পশু জবাই দিয়েছেন বাসাবাড়ির ভেতরেও। আবার এসব পশু জবাইয়ের পর ব্যবহার করা হয়নি পর্যাপ্ত পানি ও ব্লিচিং পাউডারসহ সংক্রামণ রোধক কোনো কীটনাশক।

বুধবার (২২ আগস্ট) দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ডিএসসিসি এলাকার খিলগাঁও, বনশ্রী ও মেরাদিয়া, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। এসব এলাকায় দেখা যায়, পশু জবাইয়ের জন্য রাখা হয়নি স্বাস্থ্যসম্মত কোনো পলিথিন, সংক্রামননাশক ওষুধ কিংবা বর্জ্য রাখার ব্যাগ।

বিজ্ঞাপন

যাত্রাবাড়ী এলাকায় ঈদের নামাজ শেষেই যে যার পশু নিয়ে সড়কের পাশে এবং ড্রেনের xপরে ও পাশে কোরবানির পশু জবাই দিয়েছেন। এসময় কেউ কেউ জবাই করা পশুর রক্ত পানি ঢেলে ধুয়ে দিলেও অনেকে তা করেননি। কাউকে পশুর বর্জ্য রাখার স্থানে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। এতে জমাট বাঁধা রক্ত ও বর্জ্যের গন্ধ বাতাসে ছড়াচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, তাদের অনেকেই জানেন না যে পশু জবাইয়ের জন্য ডিএসসিসির নির্ধারিত স্থান আছে। অথচ ডিএসসিসি’র পক্ষ থেকে গত কয়েকদিন ধরে প্রতিটি এলাকার ইমাম ও কসাইদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানানো হয়।

ডিএসসি জানায়, কর্মশালায় ইমামদের বলা হয়েছিল, তারা যেন নামাজের আগে ও পরে আলোচনার সময় এলাকাবাসীকে পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সচেতন করেন। সে সঙ্গে কেউ যদি অনির্ধারিত স্থানে পশু জবাই করতে চায়, তাহলে তারা যেন ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পশুর বর্জ্য সংগ্রহের জন্য পলিথিন, ব্লিচিং পাউডার ও সংক্রামণনাশক তরল সংগ্রহ করেন। কিন্তু বাসিন্দারা বলছেন, মসজিদ থেকে এ বিষয়ে তাদের তেমন কোনো কিছু অবহিত করা হয়নি। তাই তারা যেভাবে পারছেন পশু জবাই দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিক জামান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা তো জানিই না যে সিটি করপোরেশন থেকে নির্ধারিত জায়গা রেখেছে পশু জবাইয়ের জন্য। আপনার কাছ থেকেই মাত্র জানলাম। মসজিদেও তো এ বিষয় কিছু বলতে শুনিনি। এমনকি বর্জ্য সংগ্রহের জন্য ডিএসসিসির হটলাইনের ব্যাপারেও অবগত নন বলে জানান তিনি।

সেখানকার আরেক বাসিন্দা মাহফুজুল হক বলেন, ব্লিচিং পাউডার ও পলিথিন এবং বর্জ্য সংগ্রহের জন্য ব্যাগ দেওয়ার কথা শুনলে যেখান থেকেই দেওয়া হোক, আমরা আনতে যেতাম। তাতে তো আমাদের জন্যই সুবিধা হতো। কিন্তু আমরা তো এটা সম্পর্কে কিছুই শুনিনি।

খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা রাশেদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের এখানে ডিএসসিসির নির্ধারিত স্থান আছে। তবে সেটা বাসা থেকে দূরে হওয়ায় আমরা সেখানে যাইনি। বাসার সামনেই পশু জবাই দিয়েছি। তবে জবাইয়ের পর ব্লিচিং পাউডার না দিলেও পানি ঢেলেছেন বলে জানান তিনি।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় কথা হয় কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে। এখানে পশু কোরবানির নির্ধারিত একটি স্থান থাকলেও তারা সবাই যার যার বাসার সামনেই কোরবানি দিয়েছেন। অন্যদিকে নির্ধারিত স্থানটি ছিল ফাঁকা। সেখানে অবস্থানরত একজন জানালেন, সকাল থেকে একটি গরুও কোরবানির জন্য আসেনি তাদের নির্ধারিত স্থানে।

কামরুল ইসলাম নামে একজন জানালেন, তারা শুনেছেন এমন একটি স্থানের কথা। কিন্তু বাসা থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় মাংস আনা-নেওয়া নিয়ে ঝামেলা হবে ভেবে সেখানে যেতে আগ্রহী হননি তিনি। তাছাড়া প্রতিবেশী কেউ ওই নির্ধারিত স্থানে যাননি বলে তিনিও উৎসাহ পাননি।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির বর্জ্য কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা ফোন রিসিভ করেননি।

সারাবাংলা/এসএইচ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন