বিজ্ঞাপন

মিয়ানমার থেকে এখনও রোহিঙ্গা আসছে, প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত

August 24, 2018 | 3:30 pm

।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বিগত প্রায় ৩০ বছরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী জীবন বাঁচাতে রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের একাধিক শিবিরে ঠাঁই নিয়েছে। অতীতের যে কোনো রেকর্ডকে হার মানিয়ে, সর্বশেষ গত বছরের ২৫ আগস্টের নির্যাতনের পর থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এখনো রোহিঙ্গাদের প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত।

হামলার এক বছর : বাংলাদেশ সীমান্তে সতর্ক মিয়ানমার

চলতি আগস্টের প্রথমার্ধে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মিয়ানমার সফর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ওই সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়নে গত নভেম্বরে করা চুক্তির আওতায় নতুন করে আটটি বিষয়ে সম্মত হয়ে দুই দেশের মধ্যে আরো একটি সমাঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। অথচ ওই সফরের সপ্তাহ দুই পরই মিয়ানমারের তরফ থেকে প্রত্যাবাসন নিয়ে উসকানিমূলক নেতিবাচক বার্তা দিয়েছেন দেশটির নেতা অং সান সুচি।

বিজ্ঞাপন

গত ২১ আগস্ট মিয়ানমারের নেতা অং সান সুচি সিঙ্গাপুরে বলেন, প্রত্যাবাসন আটকে থাকার জন্য বাংলাদেশই দায়ী। বাংলাদেশের কারণেই প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না।

সুচির এমন মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে ঢাকা। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এটা মিয়ানমারের নতুন একটি কূট-কৌশল। রোহিঙ্গাদের মূলত তাদের নিজ গ্রামে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা মিয়ানমারের কিন্তু চলতি আগস্টে সরেজমিন সফরে দেখা গেছে, পুড়িয়ে দেওয়া রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো বসবাসের জন্য উপযুক্ত নয়। তাদের এ মুহূর্তে গ্রামে ফিরিয়ে না নিলেও গ্রামের কাছাকাছি বসবাসের উপযুক্ত স্থানে রাখার কথা মিয়ানমারের। অথচ মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের জন্য দুইটি অভ্যর্থনা শিবির এবং একটি ট্রানজিট শিবির ছাড়া কিছুই প্রস্তুত করেনি।

বিজ্ঞাপন

কর্মকর্তারা আরো বলছেন, মিয়ানমারের নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা এখনো সীমান্ত দিয়ে কক্সবাজার আসছে। বাংলাদেশ প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারকে গত ফেব্রুয়ারিতে ৮০৩২ জনের একটি তালিকা দিয়েছে। মিয়ানমার সেই তালিকার মাত্র ৩০০০ রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই শেষ করেছে। যাচাই করা প্রায় ৩ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে রাজি আছে এবং প্রত্যাবাসন এখনই শুরু করতে চায় বলে ঢাকাকে চিঠিতে জানিয়েছে নেপিডো।

ঢাকার মতে, প্রত্যাবাসন নিয়ে নেপিডোর এই চাপ নতুন কোনো কূট-কৌশল কিনা তা সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা। এ ক্ষেত্রে ঢাকার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এর আগে অতীতে নেপিডো একাধিকবার প্রত্যাবাসন শুরু করেও নানা অজুহাতে বন্ধ করে দিয়েছে। তাই এইবার এই প্রক্রিয়া আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়েই বাস্তবায়ন করতে চায় ঢাকা। যাতে অতীতের মতো প্রত্যাবাসন শুরু হয়েই বন্ধ হয়ে না যায়।

এদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে এখনো নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার এখন অনূকুল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি। এখনো স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, আইনগত এবং নাগরিক অধিকার নিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি মিয়ানমার।

বিজ্ঞাপন

গত ২৩ আগস্ট রয়টার্স একটি প্রতিবেদনে জানায়, ৩ মাসের শিশু, ১ বছরের ছেলে সন্তান এবং স্বামীকে নিয়ে ১৮ বছর বয়সের হামিদা বেগম তার পরিবারকে নিয়ে গত দুই মাস আগে জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। রয়টার্সকে হামিদা বেগম জানান, বাংলাদেশে আসার আগ পর্যন্ত তার স্বামী সেনাবাহিনীর গ্রেফতার আতঙ্কে এক রাতও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেননি।

পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক সারাবাংলাকে জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ এখনও আশাবাদী।

সারাবাংলা/জেআইএল/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন