বিজ্ঞাপন

এক বছরেও থামেনি রোহিঙ্গাদের স্রোত

August 25, 2018 | 12:34 pm

।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

৩৩ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারী আনোয়ারা ছয় সন্তানের জননী। মিয়ানমারের রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে বসবাস তাদের। তার স্বামী স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক। একবছর আগের এক রাতে সেনাসদস্যরা যখন তাদের গ্রামে হাজির হলো, তখন আনোয়ারার একটাই চিন্তা ছিল— সন্তানদের কিভাবে রক্ষা করবেন। এর মধ্যেই তার স্বামীর লাশ এনে হাজির করে গ্রামবাসী। দ্বিতীয় আর কোনো চিন্তার সুযোগ পাননি আনোয়ারা, সন্তানদের নিয়ে বেরিয়ে পড়েন প্রাণে বাঁচতে। আরও হাজারও গ্রামবাসীর সঙ্গে পায়ে হেঁটে পৌঁছান সীমান্তে, পরে নৌকায় চড়ে চলে আসেন বাংলাদেশে।

ঝুঁকি আর শঙ্কায় রোহিঙ্গাদের এক বছরের যাত্রা

সেই সময়ের আতঙ্ক এখনও ভুলতে পারেননি আনোয়ারা। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন পালিয়ে আসছিলাম, আমাদের সামনেই মাত্র ৯ বছর বয়সী এক মেয়েকে গুলি করে মেরে ফেলে ওরা। আমরা যত দ্রুতসম্ভব নৌকায় করে পার হওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কারণ আমাদের পেছনে পেছনে অস্ত্র হাতে ওরা ছুটে আসছিল। এই তাড়াহুড়ায় আমাদের সঙ্গে থাকা অনেকেই পানিতে ডুবে মারাও গেছে।’

বিজ্ঞাপন

সেই ভয়াবহতাকে পেছনে ফেলে মাসখানেকের মধ্যেই প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া বাঁশের ঘরে ‘নিরাপদ’ ঠাঁই মেলে আনোয়ারা ও তার সন্তানদের। বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরে এখন জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানির সরবরাহও মিলছে নিয়মিত। সন্তানদের নিয়ে এমন আশ্রয় পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন আনোয়ারা। কিন্তু এখন নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে আসা আনোয়ারার মনে প্রশ্ন— এরপর কী হবে?

কেবল আনোয়ারা নয়, রাখাইনে ভয়াবহতা আর নৃশংসতার চূড়ান্ত রূপ দেখে প্রাণে বাঁচতে সবকিছু ছেড়ে বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয় নেওয়া সব রোহিঙ্গা পরিবারের প্রশ্নই এখন এই একটিই। বাংলাদেশে হয়তো আশ্রয় মিলেছে। কিন্তু এরপর কী হবে? তাদের কি আজীবনই আশ্রিত থাকতে হবে পরদেশে? তারা কি আর কখনও ফিরতে পারবেন নিজ জন্মভূমিতে?

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হলেও তার কোনো প্রতিফলন এখনও দেখা যায়নি। বরং এখনও রাখাইনে চলছে নির্যাতন। তারই ফলে সীমান্তে রোহিঙ্গাদের স্রোত এখনও বন্ধ হয়নি। এ পরিস্থিতিতেই রোহিঙ্গা সংকটের একবছরের মাথায় এসে এই প্রশ্নগুলোই ঘুরেফিরে আসছে।

বিজ্ঞাপন

ঠিক একবছর আগের এই দিনে (২৫ আগস্ট) সীমান্ত চৌকিতে হামলার অজুহাতে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর শুরু হয় দেশটির সেনাসদস্যদের হত্যাযজ্ঞ আর নির্যাতন। স্থানীয় মগদের নিয়ে সেনাসদস্যরা নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয় আগুন দিয়ে। নারীদের ধর্ষণ করা হয়, পুরুষদের হত্যা করা হয়। বাদ পড়েনি শিশুরাও। মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে সন্তানকে আগুনে ছুঁড়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। মিয়ানমারের ভয়াবহ সেই হত্যাযজ্ঞকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও অভিহিত করা হয়েছে ‘জাতিগত নিধনের প্রামাণ্য উদাহরণ’ হিসেবে।

অনন্যোপায় রোহিঙ্গাদের রাতের আঁধারে বেরিয়ে পড়তে হয় ভিটেমাটি ছেড়ে। কেউ হয়তো দুয়েকটি জামা-কাপড় নিতে পেরেছিলেন, কেউ হয়তো ঘরে থাকা টাকা-পয়সা কিংবা স্বর্ণালংকার নিতে পেরেছিলেন সঙ্গে। কিন্তু বেশিরভাগ রোহিঙ্গাকেই শূন্য হাতে বেরিয়ে পড়তে হয় অনিশ্চিত যাত্রায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পায়ে হেঁটে তাদের আশ্রয় হয় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে। জিরো পয়েন্ট পেরিয়ে নাফ নদীতে বিপদসঙ্কুল এক যাত্রা শেষে তাদের ঠাঁই হয় বাংলাদেশের কক্সবাজার আর বান্দরবান সীমান্তে। পরবর্তী মাসখানেকের মধ্যেই একে একে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দুই জেলায়। এরপরও রাখাইনে চলতে থাকে নির্যাতন, আর দলে দলে বাংলাদেশে এসে ভিড়তে থাকেন রোহিঙ্গারা।

সেই যে শুরু, তারপর থেকে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এখানেই রোহিঙ্গা শিবিরে চলছে তাদের জীবনযাপন। তবু থামেনি রাখাইনে অত্যাচার আর নির্যাতন। তাই গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের যে ঢল নেমেছে বাংলাদেশের পথে, সেই ঢল চলছে আজও। মাঝে কিছুদিন থেমে থাকলেও এখনও প্রতিদিনই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসছেন রোহিঙ্গারা।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে একবছরের এই রোহিঙ্গা সংকটের নানা চিত্র। প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে রোহিঙ্গা নারী আনোয়ারার কথা। সেইসঙ্গে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে এই একবছর সময়ে সামান্য অগ্রগতি অর্জনও সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার পর থেকে দক্ষিণের জেলা কক্সবাজার পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয় শিবিরে। এখানকার পাঁচটি আশ্রয় শিবিরে স্থান হয়েছে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গার। এর মধ্যে এক কুতুপালং ক্যাম্পেই রয়েছেন প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা এসব ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করতে বিভিন্ন সহায়তা করে আসছে।

কক্সবাজারে কর্মরত সহায়তা সংস্থাগুলোর সমন্বয় করছে ইন্টারসেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি)। এই সংস্থার প্রধান সুমবুল রিজভি বলেন, একবছর আগেও এখানে (কক্সবাজার) কিছুই ছিল না। অথচ এই কক্সবাজার এখন জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম জেলা।

কিন্তু রোহিঙ্গা নারী আনোয়ারা যে প্রশ্ন করেছেন— ‘এরপর কী হবে’, সেই প্রশ্নের উত্তর কী? একবছর পরও এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের প্রধান মোহাম্মাদ আব্দুল কালাম আজাদ এ প্রশ্নের উত্তরে বলছেন, অনেকগুলো ইস্যু এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। এ কারণে এ প্রশ্নের উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়।

প্রত্যাবাসনে আতঙ্ক

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে এরই মধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গারাও চান নিজভূমে ফেরত যেতে। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মহিব উল্লাহ যেমন বলছেন, ‘মিয়ামনার আমাদের দেশ, আমাদের জন্মভূমি। আমরা সেখানেই যত দ্রুতসম্ভব ফিরে যেতে চাই।’ কিন্তু একইসঙ্গে ১৯৯১ সালের অভিজ্ঞতার কথাও স্মরণ করছেন তিনি। ওই সময় প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। তাদেরও মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী যারাই রাখাইনে ফেরত গিয়েছিলেন, তাদের সবাইকেই ফের মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের হাতে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।

ঢাকার পক্ষ থেকে এবার বলা হচ্ছে, কোনো রোহিঙ্গাকে রাখাইনে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হবে না। মহিব উল্লাহও বলছেন, ওই ইতিহাসের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে বিষয়ে তারা সতর্ক। তিনি বলেন, নব্বইয়ের দশকের ওই ঘটনা আমাদের জন্য ছিল শিক্ষা। ওই সময়ে আমরা বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার সঙ্গে সম্মত হয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী আইন মেনেই আমরা ফেরত গিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা ফের গণহত্যার শিকার হয়েছিলাম। আমাদের সবার অবস্থা আরও বেশি খারাপ হয়েছিল। আমাদের নিজ নিজ ভূমিতে যেন ফেরত যেতে পারি এবং আমাদের নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়, সেটাই আমাদের চাওয়া।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে গত সপ্তাহেই বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি সই করলেও রাখাইনে এখনও প্রবেশাধিকার পায়নি জাতিসংঘ। তবে সম্প্রতি রাখাইন সফর করে এসেছেন আব্দুল কালাম আজাদ। তিনি বলছেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ৪২টি গ্রামকে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য পুনর্গঠন করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন; যদিও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি অত্যন্ত ধীরগতির। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার কতটা আন্তরিক— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা কোটি টাকার প্রশ্ন। তবে আমরা এখনও বিশ্বাস করতে চাই যে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের কথা রাখবে।’

মা-বাবা হারানো সন্তানেরা

রাখাইনে সেনাবাহিনীর নৃশংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশের পথে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের বড় একটি অংশই মা-বাবাকে হারিয়েছে। গত আগস্টে রোহিঙ্গা ঢল নামার পরের কয়েকদিনের মধ্যেই প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গা শিশু বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, যাদের সঙ্গে পরিবারের কোনো সদস্য ছিল না। গত জুলাইয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অনাথ শিশুদের নিয়ে কাজ শুরু করে সেভ দ্য চিলড্রেন। তাদের একজন মুখপাত্র ডাফনি কুক বলছেন, শিশুদের বড় একটি অংশই মা-বাবা হারিয়েছে। ১৩৯ জন শিশুটির ওপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেকেরও বেশি শিশুর মা-বাবা হয় রাখাইনেই প্রাণ হারিয়েছেন, না হয় বাংলাদেশে আসার পথে প্রাণ হারিয়েছেন।

সহায়তায় টান পড়ছে

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সহায়তারও টান পড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে এখানকার সর্বশেষ মানবিক তৎপরতার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের মাত্র ৩৪ শতাংশ সংগৃহীত হয়েছে। ক্যাম্পগুলো পরিচালনার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

সুমবুল রিজভি বলেন, ‘এখানে অর্থ সহায়তা কমে যাওয়ার প্রভাব কি আমরা অনুধাবন করতে পারছি? সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখানকার প্রয়োজনীয় খাবারের সংস্থান রয়েছে। কিন্তু এরপর থেকে এখানে আশ্রয় নেওয়া জনগোষ্ঠীর খাবারের সংস্থান করার মতো কোনো অর্থ আমাদের হাতে নেই। এ পরিস্থিতি আমাকে দুঃখিত নয়, ক্ষুব্ধ করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের নির্যাতনকে ভয়াবহ বলে আখ্যা দিয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তার জন্য তাদের আরও দায়িত্বশীলতা দেখাতে হবে।’

প্রজন্ম সংকট

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অস্থায়ী হিসেবে গড়ে তোলা হলেও কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছে, এসব ক্যাম্পে কয়েকবছর পর্যন্ত রাখতে হতে পারে রোহিঙ্গাদের। আব্দুল কালাম আজাদ বলছেন, ‘আমরা এসব ক্যাম্পকে মধ্যমেয়াদি আশ্রয় হিসেবে বিবেচনা করছি। আরও একবছর বা দুই বছর এসব ক্যাম্প হয়তো থাকবে। আমরা রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখছি। তবে আমরা এ বিষয়ে জোর দিচ্ছি যেন তারা রাখাইনে ফেরার পর সেখানকার মূলধারার সমাজের সঙ্গে মিশে যাওয়ার মতো দক্ষতা ও সামর্থ্য পেতে পারে।

যদিও কক্সবাজারের ক্যাম্পে আরও কয়েকবছর থাকতে হতে পারে— এমন ধারণা থেকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে, এসব ক্যাম্পে প্রয়োজনীয় শিক্ষা বা কর্মসংস্থানের অভাবে রোহিঙ্গাদের একটি প্রজন্ম হয়তো হারিয়ে যেতে পারে।

মিয়ানমার থেকে এখনও রোহিঙ্গা আসছে, প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত

হাকিমপাড়ার একটি ক্যাম্পে থাকছেন প্রায় ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা। সেখানে আশ্রয় নেওয়া মোহাম্মদ ইলিয়াস তার সন্তানদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এই ক্যাম্পে তাদের জন্য শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা করতে পারব না, কোনো কাজের ব্যবস্থা করতে পারব না। তারা কিছুই করতে শিখবে না। দিনে দিনে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।

তবে এর কোনো বিকল্পও নেই রোহিঙ্গাদের কাছে। তিনি বলেন, আমরা তো ফিরেও যেতে পারছি না। কারণ সেখানে গেলেই তো ভয় তাড়া করে ফিরবে, সেনা সদস্যরা কি আবার আমাদের ধরে নিয়ে যাবে? তারা কি আবার আমাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেবে? এই ভয় সবসময় আমাদের তাড়া করে বেড়াবে।

ছয় সন্তানের জননী আনোয়ারা বলছেন, ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক ভেবেছি, সবসময় ভাবি। কিন্তু ভেবে ভেবে তো কিছু আর করতে পারব না।’ আল্লাহ আর রোহিঙ্গা মাঝি (রোহিঙ্গাদের নেতা) ছাড়া আর কারও ওপর ভরসা করার সুযোগ নেই— বলেন তিনি।

কিন্তু তাই বলে সন্তানদের প্রশ্নগুলো তো এড়াতে পারছেন না আনোয়ারা। কোলে থাকা তিন বছর বয়সী সন্তানকে দেখিয়ে আনোয়ারা বলেন, ‘ও সবসময় ওর বাবার কথা জিজ্ঞাসা করে। বলে, বাবা কোথায়। আমি ওকে বলি, তোমার বাবা বাজারে আছে। তোমার বোন (যে খেলতে গিয়েছে) এখন আছে বাবার সঙ্গে। ওরা একসঙ্গে গরুর মাংস কিনে নিয়ে আসবে। এটা শুনে চুপ করে যায় ছেলে।’

আনোয়ারার মতো আরও হাজারও রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ তাদের সন্তানদের যেভাবে স্বজনদের কথা ভুলিয়ে রাখছেন, তা আর কতদিন পারবেন?

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন