বিজ্ঞাপন

ঢাকা-ময়মনসিংহ বিভাগে উৎপাদন বাড়বে ৭৭ হাজার টন শস্য

December 30, 2017 | 3:08 pm

জোসনা জামান, স্টাফ করসপনডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে প্রতি বছর উৎপাদন হবে অতিরিক্ত ৭৭ হাজার ৪৯০ মেট্রিকটন খাদ্য শস্য। এ লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের করতে খাল পুনঃখনন, সেচ অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিক সেচ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে ১৫ হাজার ৪৯৮ হেক্টর জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে।

এ জন্য ১৩৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।

অনুমোদন পেলে জানুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরেরর মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এ. এন. সামসুদ্দীন আজাদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ ছাড়াও সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, যা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ধরে রাখাসহ দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটি ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৬টি জেলায় বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকার মধ্য দিয়ে অনেক নদী ও শাখা নদী প্রবাহিত হয়েছে, যেখানে ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস রয়েছে। তা ছাড়া, প্রকল্প এলাকায় বিশেষ করে নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ জেলায় হাওর খাল রয়েছে। অসংখ্য নদী, খাল ও হাওর সমৃদ্ধ এ জেলাগুলোকে ভূ-উপরিস্থ পানির প্রচুর উৎস থাকা সত্ত্বেও পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে শুস্ক মৌসুমে সেচ কাজে ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছেনি। তাই আবাদযোগ্য অনেক জমি অব্যবহৃত রয়েছে।

সূত্রটি থেকে আরও জানা যায়, নদীর সঙ্গে সংযোগ খালসহ অন্যান্য খালগুলো পুনঃখনন এবং সেচ অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে শুস্ক মৌসুমে সেচ কাজে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এতে, ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ সুবিধা সম্প্রসারণের পাশাপাশি সেচ কাজে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ওপর চাপ কমে যাবে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে— প্রকল্প এলাকায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ১২ লাখ ৩২ হাজার হেক্টর। তার মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। প্রায় ২ লাখ ২৭ হাজার হেক্টর জমি সেচ বহির্ভূত অবস্থায় আছে। খাল-নালা পুনঃখনন ও প্রয়োজনীয় সেচ অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে ১৫ হাজার ৪৯৮ হেক্টর জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এর আগে প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় ২৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৫ সালের জুলাই হতে ২০০৮ সালের জুনের মধ্যে বৃহত্তর ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়) এবং ২৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৯ সালের জুলাই হতে ২০১৪ সালের জুনে প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। এ দু পর্যায়ে প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এনে প্রতি বছর অতিরিক্ত প্রায় ২৩ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে— ২৫০ কিলোমিটার খাল নালা পুনঃখনন, ২০০টি পানি নির্গমণ ব্যবস্থা, ২৩০টি বিদ্যুৎ চালিত লো-লিফট পাম্প (এলএলপি) স্থাপন ও বিদ্যুৎ সংযোগ, ২০টি সৌরশক্তি চালিত এলএলপি স্থাপন, ৫০টি সৌরশক্তি চালিত পাতকূয়া খনন ও ড্রিপ ইরিগেশন স্থাপন, ২৫০টি বিদ্যুৎ সৌরশক্তি চালিত এলএলপির জন্য ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা ও পাম্প হাউজ নির্মাণ, ১৩০টি ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা সম্প্রসারণ এবং ৩০টি ভূ-উপরিস্থ সেচনালা ভূ-গর্ভস্থ সেচনালায় রূপান্তর করা হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে ৬ জেলার ৫৬টি উপজেলায়। উপজেলাগুলো হচ্ছে— টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলা, নাগপুর, কালিহাতী, মধুপুর, ঘাটাইল, বাসাইল, সখিপুর, মির্জাপুর, দেলদুয়ার, ভূয়াপুর, গোপালপুর ও ধরবাড়ী উপজেলায়। কিশোরগঞ্জের কিশোরগঞ্জ সদর, করিমগঞ্জ, কটিয়াদী, ইটনা, মিঠামইন, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, অষ্টগ্রাম, হোসেনপুর, তাড়াইল, পাকুন্দিয়া, ভৈরব ও নিকলী উপজেলা। ময়মনসিংহ জেলার ময়মনসিংহ সদর, গফরগাঁও, মুক্তাগাছা, হালুয়াঘাট, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল, ফুলবাড়ীয়া, ধোবাউরা ও গৌরীপুর উপজেলা। নেত্রকোণা জেলার সদর, দূর্গাপুর, মোহনগঞ্জ, কলমাকান্দা, কেন্দুয়া, আটপাড়া, পূর্বধলা, বারহাট্টা, খালিয়াজুরী এবং মদন উপজেলা। জামালপুর জেলার সদর, সরিষাবাড়ী, মেলান্দহ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ,মাদারগঞ্জ এবং বক্সীগঞ্জ উপজেলা। শেরপুর জেলার  সদর, শ্রীবর্দী, নালিতাবাড়ী, নকলা ও ঝিনাইগাতি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

সারাবাংলা/জেজে/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন