বিজ্ঞাপন

বাস-ট্রেনে ঢাকামুখী মানুষের ঢল

August 27, 2018 | 12:18 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ঈদের পর ঢাকামুখী মানুষের স্রোত বেড়েছে। বাস বা ট্রেন যাই হোক না কেন ঢাকায় যা’ই প্রবেশ করছে সেটাতেই ঠাসাঠাসি করে আসছে মানুষ। রেল স্টেশন বা বাস স্ট্যান্ড সবখানেই মানুষের ঢল। ব্যাগ, বস্তা, শিশু, বৃদ্ধ পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ শেষে কর্মস্থল ঢাকায় এভাবেই ফিরছে মানুষ।

সোমবার (২৭ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

সকাল ৮টায় রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাতের বেলা ছেড়ে আসা বাসগুলো সায়েদাবাদ টার্মিনালে এসে থেমেছে। অনেক যাত্রী পথে নেমে গেলেও বেশির ভাগই নামছেন টার্মিনালে। সিলেট, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বান্দরবান, কুমিল্লা, চাঁদপুর, খুলনা, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ ও উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলার বাস এই টার্মিনালে এসে থেমেছে। পথে আসতে তেমন কোনো সমস্যা না হলেও যাত্রীদের অভিযোগ দ্বিগুনেরও বেশি দামে টিকেট কেটে ঢাকায় আসতে হয়েছে তাদের।

বিজ্ঞাপন

সুপ্রিয়া হালদার এসেছেন সিলেট থেকে। তিনি বলেন, সিলেট থেকে ঢাকা নন এসি গাড়ির (সাগরিকা) ভাড়া ৫০০ টাকা। অথচ তিনি এক সপ্তাহ আগে টিকেট কেটেছেন ১১ টাকায়। টিকেট ছাড়ার আগে সব টিকেট কালোবাজারে চলে যায়। শুধু সুপ্রিয়া নন সকল যাত্রীকেই কালোবাজার থেকে বেশি দামে টিকেট কিনতে হয়েছে।

নোয়াখালী থেকে এসেছেন আবির হোসেন নামে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ৪০০ টাকার টিকেট (ইকোনো পরিবহন) ৯০০ টাকায় কিনেছি। রাস্তায় তেমন ভোগান্তি হয়নি। একটু বেশি সময় লাগলেও ভালোভাবে এসেছেন ঢাকায়, এটা তার কাছে স্বস্তি।

টিকেট বেশি নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ইকোনো পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার এনামুল হক সারাবাংলাকে বলেন, এখন শুধু যাত্রী আসছে। বাস যখন ফিরে যাচ্ছে তখন ফাঁকা যেতে হচ্ছে তাই দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। এটাই সবাই নেন বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

সকাল ৯টায় রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল। সিলেট, ময়মনসিংহ থেকে শুরু করে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ বাস এই টার্মিনালে এসে থামে। এখানেও ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ সকল যাত্রীর। তবুও নিরাপদে রাজধানীতে এসেছেন এতেই খুশি। এখানকার যাত্রীরা আরেকটা অভিযোগ করে বলেন, বাস থেকে নামার পর বাসায় যাওয়ার জন্য কোনো গাড়ি পাচ্ছেন না। সিএনজি দুই চারটা থাকলেও ভাড়া আকাশচুম্বী। গণপরিবহন তো একেবারই কম। গাড়ি না পেয়ে অনেকেই দুর্ভোগে পড়েন।

বেলা ১১টা রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় বেশিরভাগ ট্রেনেই দুই ঘণ্টা থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে স্টেশনে প্রবেশ করছে। গাদাগাদি আর ঠাসাঠাসি করে যাত্রীরা কমলাপুরে নামলে যেন জন স্রোতে পরিণত হয়।

ঢাকা থেকে রাজশাহী গামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ১ ঘণ্টা দেরিতে আসায় তা ছেড়ে যায় সকাল সোয়া ৭টায়। নোয়াখালী এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৭টায় যাওয়ার কথা থাকলেও ছেড়ে যায় পৌনে ৯টায়। সুন্দরবন এক্সপ্রেস খুলনার উদ্দেশ্যে সকাল ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সকাল ১০টায় ছেড়ে যায়।

চট্টলা এক্সপ্রেস ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ১০টায় ছেড়ে যায়। লালমনি ঈদ স্পেশাল সকাল সোয়া ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি প্রবেশ করে বেলা ১১ টায়।

বিজ্ঞাপন

নীলসাগর এক্সপ্রেস (ঢাকা- নীলফামারী-চীলাহাটি) ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছে দুপুর ১টায়। একতা এক্সপ্রেস (ঢাকা-দিনাজপুর) সকাল ১০টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছে দুপুর ১টা ২০ মিনিট।

অন্যদিকে, জয়দেবপুর কমিউটার ১০.১৫ মিনিটে, ইশাখান এক্সপ্রেস (সিলেটগামী) সাড়ে ১১টা, রাজশাহী এক্সপ্রেস (চাঁপাই নবাবগঞ্জগামী) ১২টা ২০ মিনিটে ও চট্টলা এক্সপ্রেস (চট্টগ্রামগামী) দুপুর ১টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনগুলি কখন কমলাপুরে আসবে তা জানাতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

লালমনি ঈদ স্পেশাল ট্রেনের যাত্রী আনিকা তাবাসসুম সারাবাংলাকে বলেন, ৫০৫ টাকার টিকেট রেলওয়ে পুলিশের কাছ থেকে ১০০০ টাকায় কেটেছি। শোভন চেয়ার বগিতে বসেও আরামে আসতে পারিনি। গলিতেও শতশত লোক দাঁড়ানো। রাত ১১টায় ছেড়েছে ট্রেনটি। হকার, ফকির, হিজরা আর মানুষের চিৎকারে পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা যাত্রীদের। রেল কর্তৃপক্ষের এসব বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার বলে মনে করেন আনিকা।

ঢাকায় ইস্টার্ণ ব্যাংকে চাকরি করেন রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, যেভাবেই আসি না কেন। আসতে পেরেছি এটাই বড় কথা। বাসের চেয়ে ট্রেনে অতি নিরাপদে আসতে পেরে শুকরিয়াও আদায় করেন তিনি।

এদিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও ঢাকামূখী মানুষের ঢল দেখা গেছে। বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, খুলনা ও চাঁদপুর থেকে যাত্রী বোঝাই লঞ্চগুলো এসে ভোর থেকেই ঢাকায় আসতে শুরু করে।

সারাবাংলা/ইউজে/জেএএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন