বিজ্ঞাপন

শিল্প খাতের সুবিধা পেতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবো: সেতুমন্ত্রী

August 27, 2018 | 6:08 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, পরিবহন খাত শিল্প খাতের সুবিধা পাবে। এই জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধপত্র দেওয়া হবে। তিনি বলেন, পরিবহন খাতকে শিল্প করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে প্রাপ্য সুবিধাদি নিশ্চিত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধপত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক চলে। এতে সভাপতিত্ব করেন ওবায়দুল কাদের।

সেতুমন্ত্রী বলেন, সড়ক মহাসড়কে ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত রিকশা, লেগুনা (হিউম্যান হলার), নসিমন-করিমন অর্থাৎ এই ধরনের ছোট ছোট যান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব জেলায় আঞ্চলিক রোড ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি) নেই, সেসব জেলায় দ্রুত আরটিসি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আরটিসি সভা যেন নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয় তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাস, ট্রাক কার্ভাড ভ্যানের অবৈধ অ্যাঙ্গেল হুক ও বাম্পার অপসারণের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৯০ ভাগ বাম্পার, অ্যাঙ্গেল হুক অপসারণের কাজ আমরা সম্পন্ন করেছি। মহাসড়ক থেকে অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ কঠোরভাবে মানা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, জাতীয় মহাসড়কে ইজিবাইকের বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নে সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মালেককে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। এছাড়া বাস, ট্রাকসহ সব গণপরিবহনের ইকনোমিক লাইফ নির্ধারনের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যে কাজ চলছে, তা দ্রুত শেষ করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শুক্রবার বাদে সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিআরটিএ’র চলমান ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেকদিন ধরে বিআরটিএ ম্যাজিস্ট্রেট সংকটের কারণে কাজ করতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নতুন করে ৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন ১১ জন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে। এখন বিআরটিএ মোবাইল কোর্ট বা এ সংক্রান্ত কাজ সহজে পরিচালনা করতে পারবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ট্রাফিক বিভাগের অভিযান চলবে। জাতীয় মহাসড়কে লেগুনা টাইপের ধীর গতির গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না। ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত যানের খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধপত্র পাঠানো হবে।

অবৈধ যানবাহন ডাম্পিংয়ের জন্য স্থান নির্ধারণ বা ডাম্পিং গ্রাউন্ড পর্যায়ক্রমে বরাদ্দ দেওয়া হবে। বর্তমানে চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে, জগদীশপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ সড়কে বিশ্রামাগার স্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং কাজ চলমান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এই সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে, বলেন মন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

গাড়িতে অনুমোদনহীন স্টিকার, মনোগ্রাম, ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড লাগানো যাবে না উল্লেখ করে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, এটা সারাদেশের জন্য। অনেকেই দেখা যায়, ভুয়া স্টিকার লাগাচ্ছে। ফ্ল্যাগ স্ট্র্যান্ড যততত্র লাগানো হয়। এমনকি গাড়িতে জাতীয় সংসদের স্টিকারও ব্যবহার করা হয়। এগুলো করা যাবে না। এগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাইওয়েতে যানবাহনের গতিসীমা সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে পালন করা হবে।

তিনি বলেন, মহানগরীতে বাসের প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে কন্ট্রাক্ট সার্ভিস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত পরিবহন মালিকরা দিয়েছেন। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঢাকা মহানগরীর বাস সার্ভিসগুলোর গরিব গরিব চেহারা ঠিক করতে হবে। সৌন্দর্যবর্ধন করতে হবে। এটা আপাতত ঢাকা মহানগরীর জন্য। আমার কাছে মনে হয়, ঢাকা মহানগরীতে যেসব গাড়ি চলছে, তার অধিকাংশই দেখতে ভালো না। এর চেয়ে গ্রামের গাড়িগুলোর চেহারা অনেক ভালো, অনেক সুন্দর। এই কথাটা বারবার বলি, তারপরেও আমরা লজ্জা পাই না। এবার গাড়ি মালিকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে কন্ট্রাক্ট সার্ভিস বন্ধ করার। এতে আমি খুব খুশি। এর ফলে রাস্তায় প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে। এছাড়া আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য মরহুম মেয়র আনিসুল হক যে উদ্যোগটি নিয়েছিলেন, তার সেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে দেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নসিমন-করিমন চলাচল ৯০ শতাংশ কমেছে। আমরা যে সিদ্ধান্তগুলো নিলাম, এতে করে সড়ক-মহাসড়কের পরিস্থিতি আস্তে আস্তে উন্নতি হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিআরটিএ’র এখন লোকবল রয়েছে। যাদের ভাড়ার তালিকা নেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমাদের বৈঠক আছে। বৈঠকে সিটিং সার্ভিস নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি মহাসড়কে দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বড় তিনটা দুর্ঘটনাই ঘটেছে লেগুনা ও অটোরিকশার জন্য। আমরা একটি তদন্ত কমিটি করেছি। ১০ দিনের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেবে।

বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব।

এছাড়াও বৈঠকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, পুলিশের মহাপরিদর্শক, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী, সব বিভাগীয় কমিশনার ও সব মহানগর পুলিশ কমিশনাররা অংশ নেন।

সারাবাংলা/এইচএ/এটি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন