বিজ্ঞাপন

সাভারের ট্যানারি বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে ধলেশ্বরী নদী

August 28, 2018 | 8:44 am

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

সাভার থেকে ফিরে: বুড়িগঙ্গা নদী ও এর আশপাশের এলাকার পরিবেশ দূষণ রোধে ২০১৭ সালে হাজারীরাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হয়। কথা ছিল, ধলেশ্বরী নদীর কূল ঘেঁষে গড়ে তোলা হবে পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্প নগরী। তবে বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই। বরং ট্যানারির রাসায়নিক বর্জ্যে বুড়িগঙ্গার মতো এবার ধলেশ্বরী নদীর পানিও বিষাক্ত হচ্ছে। বিশেষ করে নতুন চামড়া শিল্প নগরীতে এখনও ডাম্পিং ইয়ার্ড এবং অধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ধলেশ্বরী নদী ও তার আশপাশ এলাকা দূষণের শিকার হচ্ছে।

শনিবার (২৫ আগস্ট) দিনভর হেমায়েতপুর বিসিক চামড়া শিল্প নগরীর সরেজমিন ঘুরে এ চিত্রই দেখা গেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, সাভারের চামড়া শিল্প নগরী পরিবেশবান্ধব করতে এখনও অনেক কাজ বাকি। রাস্তাঘাটের পাশাপাশি ড্রেনেজ অবস্থা খুবই খারাপ। এছাড়াও কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারে (সিইটিপি) ঠিকমতো কেমিক্যাল দেওয়া নিয়েই সন্দেহ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ না করায় ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানিতে মিশে ধলেশ্বরী নদীর পানিকে দূষিত করছে।

বিটিএ সভাপতি বলেন, সাভারে পরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্প নগরী গড়ে না ওঠার পেছনে বিসিকের গাফিলতিও রয়েছে। তারা ভুল তথ্য দিয়ে হাজারিবাগের ট্যানারিকে হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করেছে। এছাড়া বার বার সময় বাড়ানোর পরেও শিল্প নগরীর কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। ফলে পরিবেশবান্ধব ট্যানারি এখনও আমরা গড়ে তুলতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ২০১৭ সালের এপ্রিলে হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় ধলেশ্বরী নদীর তীরে দুইশ একর জমিতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সেখানে ট্যানারির কঠিন বর্জ্য ফেলার কোনো ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। এছাড়া ট্যানারির ভেতরের এলাকার ড্রেনগুলো বন্ধ থাকায় ও ম্যানহোলের মুখ খোলা থাকায় কারখানার তরল বর্জ্য উপচে পড়ে রাস্তায় বের হয়ে আসছে। আবার বেশকিছু কারখানা থেকে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের পানি কারখানার গেট দিয়ে গড়িয়ে রাস্তায় চলে আসছে। পরে বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে এই পানি সরাসরি ধলেশ্বরী নদীতে গিয়ে পড়ছে এবং নদীর পানিকে বিষাক্ত করে তুলছে।

এ বিষয়ে ইসলামিয়া ট্যানারির মালিক রসুল আহমেদ ভুইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘ট্যানারির ময়লা-অবর্জনা ফেলার জন্য ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এলাকায় রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা অধুনিকায়ন না হওয়ায় ময়লা-আবর্জনা ধলেশ্বরী নদীতে পড়ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই।’

অন্যদিকে এপেক্স ট্যানারির নির্বাহী পরিচালক এম এ মাজেদ শনিবার দুপুরে তার কার্যালয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাভারে চামড়া শিল্প নগরীর পরিবেশ মানসম্মত না হওয়ায় বিদেশি ক্রেতারা আসতে চাচ্ছেন না। ফলে অর্ডার কমে গেছে।’ তিনি বলেন, সিইটিপি’র বর্জ্য পরিশোধনক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। অভিযোগ আছে, রাতে সিইটিপি‘র তরল বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এগুলো সত্যি হচ্ছে কিনা— তা তদন্ত করে দেখা উচিত।

বিজ্ঞাপন

বর্জ্য রাখার স্থানের বেহাল দশা

সাভারের  ট্যানারিগুলোর চামড়ার উচ্ছিষ্ট অংশ, ঝিল্লি, চামড়ার টুকরো, পশুর কান, শিং ইত্যাদি কঠিন বর্জ্য ফেলার জন্য ডাম্পিং ইয়ার্ড নিমার্ণ করার কথা থাকলেও তা এখনও নির্মাণ করা হয়নি। ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য রাখা পাঁচ একর আয়তনের একটি পুকুরে ট্যানারির উচ্ছিষ্ট ময়লাগুলো ফেলা হচ্ছে। প্রায়ই এইসব ময়লা উপচে পড়ে কিংবা বৃষ্টিতে পুকুরটি উপচে পড়ে বিষাক্ত ময়লাগুলো ধলেশ্বরী নদীতে পড়ছে।

এদিকে, পুকুরের পাড়ে বালু ও বস্তা দিয়ে বাঁধ দেওয়া হলেও তা কাজে আসছে না। আবার গত প্রায় দেড় বছর ধরে পুকুরে ময়লা স্তূপাকারে জমা হয়ে পুকুরটি ভরে গেলেও তা পরিষ্কার করার কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে এখানকার পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে পড়েছে।

বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায় সংযোগ সড়ক

সাভার চামড়া শিল্প নগরীরর সংযোগ সড়কের পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। আবার কোনো কারখানার পাশে কিছু ড্রেন থাকলেও সেগুলো দিয়ে পানি চলাচল করতে পারছে না। এতে করে প্রায়ই ট্যানারির ময়লা পানি ড্রেন থেকে উপচে পড়ে রাস্তায় চলে আসে। আবার রাস্তার ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা থাকায় ট্যানারির রাসায়নিক তরল পদার্থ ও কেমিকেল-মিশ্রিত রঙিন পানি  ম্যানহোল থেকে উপচে পড়ে রাস্তায় জমা হয়। পরে ড্রেন ও ম্যানহোলের বিষাক্ত পানি বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে নদীতে চলে যাচ্ছে।

সিইটিপি বর্জ্য ধলেশ্বরী নদীতে

সাভারের ট্যানারির বর্জ্য কেন্দ্রীয়ভাবে পরিশোধন করার জন্য কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণের কাজ ২০১৪ সালের মার্চে শুরু হয়। এরই মধ্যে এর চারটি মডিউল চালু করা হয়েছে। তবে এখনও অতিমাত্রায় ক্ষতিকর  রাসায়নিক ক্রোমিয়াম পুনরুদ্ধার বা রিকভারি ইউনিট চালু করা হয়নি। আবার এই সিইটিপি‘র তরল বর্জ্য পরিশোধনক্ষমতা ২৫ হাজার ঘনমিটার। বর্তমানে ট্যানারিগুলোতে ২৮ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। অতিরিক্ত ৩ হাজার ঘনমিটার তরল বর্জ্য পরিশোধন না করে রাতে নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করছেন বেশ কয়েকজন ট্যানারি মালিক।

গত শনিবার সরেজমিনে গিয়েও দেখা যায়, সিইটিপি থেকে মোটা পাইপের মাধ্যমে তরল বর্জ্য ধলেশ্বরী নদীতে ফেলা হচ্ছে।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন