বিজ্ঞাপন

শুরু হচ্ছে ভর্তি যুদ্ধ, প্রস্তুতি আছে তো?

August 28, 2018 | 9:58 am

।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: উচ্চ মাধ্যমিকের ফল হাতে নিয়ে এখন শিক্ষার্থীদের সময় কাটছে পড়ার টেবিলে। দিনরাত কঠোর অধ্যাবসয়ের মাধ্যমে প্রস্তুতি চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির। দু’চোখে রঙিন স্বপ্ন আর ভবিষ্যতের কঠিন সময়টাকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনার শেষ নেই। সব মিলিয়ে নভেম্বর নাগাদ সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ভর্তিযুদ্ধ শুরু হচ্ছে, সে যুদ্ধে হাজারও শিক্ষার্থী যে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে লড়াই করবে— তাতে সন্দেহ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন জানিয়েছে, চলতি বছরও গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি কার্যকর হচ্ছে না। তাই ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের যেতে হবে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিতে। এতে একদিকে শিক্ষা ব্যয় যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে হয়রানিও। তারপরও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ে সুযোগ পেতে এসব শিক্ষার্থী কোচিং থেকে শুরু করে সব চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তারিখ কিছুটা পরিবর্তনও হতে পারে। এছাড়া কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কত আসন রয়েছে, তাও প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয় গত ১৯ জুলাই। গত এক দশকের মধ্যে এ বছরই খারাপ হয় ফলাফল। এ বছর আটটি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীনে মোট ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাস করে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ জন। পাসের হার ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন। তবে ফলাফলের অনুপাত হিসেবে জিপিএ-৩ থেকে ৪ এর ঘরে একটি বিশাল অংশ, যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার যোগ্যতা রাখে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কিংবা ফরম পূরণের আগে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কত আসন, তা জেনে নেওয়াটা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৪১টি। এর মধ্যে ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আসন সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা ৬ লাখ ৩৬ হাজার ৩৪৩টি। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ৪৮ হাজার ৩৪৩টি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ লাখ ৮৯ হাজার। সবচেয়ে বেশি আসন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধীনে কলেজগুলোর আসন প্রায় ৪ লাখ।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের প্রাচীনতম, সর্ববৃহৎ এবং উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৯২০ সালে ভারতীয় বিধানসভায় গৃহীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অধীনে ১৯২১ সালের ১ জুলাই আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। প্রথম বর্ষে আসন সংখ্যা ৬ হাজার ৬৮৮টি।ওয়েবসাইট www.du.ac.bd।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

বুয়েট ক্যাম্পাস ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। আয়তনে ক্যাম্পাসটি ছোট হলেও শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকে এ ক্যাম্পাসটি। বর্তমানে ক্যাম্পাসের আয়তন হল ৭৬ দশমিক ৮৫ একর। প্রথম বর্ষে আসন সংখ্যা ১ হাজার ৩০টি। ওয়েবসাইট www.buet.ac.bd।

বিজ্ঞাপন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে এই বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম বর্ষে আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৭২২। ওয়েবসাইট www.ru.ac.bd।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান। স্থলজ ও জলজ উৎদনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত কৃষিবিজ্ঞানের সকল শাখাই এর কার্যক্রমভুক্ত। ‘পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৬১’ অনুযায়ী ১৯৫৯ সালে জাতীয় শিক্ষা কমিশন এবং খাদ্য ও কৃষি কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৬১ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম বর্ষে আসন সংখ্যা ১২শ। ওয়েবসাইট www.bau.edu.bd।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে হাটহাজারী থানার ফতেপুর ইউনিয়নের জঙ্গল পশ্চিম-পট্টি মৌজার ১৭৫৩ দশমিক ৮৮ একর পাহাড়ি ভূমিতে অবস্থিত দেশের তৃতীয় বৃহৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এটি। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। আসন ৪ হাজার ৬৭৪। ওয়েবসাইট www.cu.ac.bd।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানী ঢাকা থেকে ৩২ কিমি দূরে সাভারে এশিয়ান হাইওয়ের (ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক) পশ্চিম পার্শ্বে ৬৯৭ দশমিক ৫৬ একর ভূমির ওপর এটি প্রতিষ্ঠিত। ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানে একই ধরনের দু’টি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৪ সালের জুন মাসে পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষা বিভাগ ঢাকার কাছে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রকল্প গ্রহণ করে। আসন ২ হাজার ২৫২। ওয়েবসাইট www.juniv.edu।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার পূর্বে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে। ৩২০ একর জায়গার এ ক্যাম্পাসটি শিক্ষার্থীদের পছন্দের প্রথম সারিতে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এতে সাধারণ বিষয়গুলোও রয়েছে। প্রথম বর্ষে এখানে আসন রয়েছে মোট ১ হাজার ৬৫৫টি। ওয়েবসাইট www.sust.edu।

এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ৮৫০টি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ১০২টি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ২৩০টি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১৩৫টি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৬৯৫টি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮২৫টি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৩৪০টি, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ১৯৬টি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে ৯২৭টি এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ৭৭৭টি।

প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬২২টি, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০০টি, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৭০টি এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৭০টি আসন রয়েছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৯৫০টি, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৮৫টি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৬৭টি, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৪০টি, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৭৯টি, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০০টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ২২টি ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৫০টি আসন রয়েছে।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১০টি, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০০টি ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৪২০টি আসন।

এর বাইরেও বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৭০টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০টি এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ২৩০টি।

সারাবাংলা/এমএস/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন