বিজ্ঞাপন

‘হাওয়া ভবনের ষড়যন্ত্র ও বাবরের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি’

August 28, 2018 | 7:06 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়ে হাওয়া ভবনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সম্পৃক্ততা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি বলে দাবি করেছেন বাবরের আইনজীবী।

মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে যুক্তি উপস্থাপনকালে বাবরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম এ দাবি করেন।

বাবরের আইনজীবী বলেন, ‘হাওয়া ভবনে ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং তার সঙ্গে বাবর সাহেব সম্পৃক্ত ছিলেন এ মর্মে কোনো প্রমাণ তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে দাখিল করতে পারেননি। এমনকি হাওয়া ভবনের কোনো গার্ড, দারোয়ান, ড্রাইভার কাউকে সাক্ষী করা হয়নি। বরং তদন্তকারী তার জেরায় বলেছেন, মুফতি হান্নানের সঙ্গে তার কখনো সাক্ষাৎ হয়নি এবং তিনি কখনো তাকে রিমান্ডেও নেননি। তাহলে মুফতি হান্নানের এ বক্তব্য তিনি কীভাবে পেলেন?’

বিজ্ঞাপন

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) আবদুল কাহ্হার আখন্দের (পিডব্লিও-২২৫) সাক্ষ্য থেকে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন আসামি বাবরের আইনজীবী।

যুক্তিতে আইনজীবী নজরুল ইসলাম আদালতকে বলেন, ‘এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মুফতি হান্নানের বরাত দিয়ে বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্র তৎকালীন হাওয়া ভবন ও বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসায় বসে হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের সময় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরও উপস্থিত ছিলেন।’

‘তদন্তকারী কর্মকর্তার এ বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট’ বলেন বাবরের আইনজীবী নজরুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

‘মুফতি হান্নানকে আমার মক্কেল বাবর সাহেব বাঁচাতে চেয়েছিলেন বলেও যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তা ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, মুফতি হান্নানকে বাঁচানো দূরে থাক বাবর সাহেব তাকে চিনতেনই না। বরং সেই সময়ে বাবর সাহেবের নির্দেশেই মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুফতি হান্নানকে রিমান্ডে নিতে বাবর সাহেবই নির্দেশ দিয়েছেন। মুফতি হান্নানকে বাঁচানোর ইচ্ছা যদি বাবর সাহেবের থাকতো তাহলে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ তিনি দিতেন না।’

পরে তার যুক্তিতর্ক অসমাপ্ত অবস্থায় আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত তা মুলতবি করেন আদালত।

এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রধান কৌসুঁলি সৈয়দ রেজাউর রহমান, বিশেষ পিপি মো.আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া, আকরাম উদ্দিন শ্যামল, অ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা, অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান, আশরাফ হোসেন তিতাস প্রমুখ।

পরে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌসুঁলি সৈয়দ রেজাউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসামি বাবর ২১ আগস্টি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রাষ্ট্রপক্ষ তার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

২১ আগস্টের ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় একইসঙ্গে বিচার চলছে। মামলায় এ পর্যন্ত ৪৪ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। আজ পর্যন্ত এ মামলায় ১১১তম কার্যদিবস লেগেছে। তার মধ্যে আসামিপক্ষ ৮৬ দিন এবং রাষ্ট্রপক্ষ ২৫ দিন সময় নিয়েছে।

এ মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। এর মধ্যে তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিন আসামি হলেন জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল। বাকি ৪৯ আসামির বিচার চলছে। এর মধ্যে এখনো তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জন পলাতক। বাবর, সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন আসামি কারাগারে ও ৮ জন জামিনে রয়েছেন।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়। আসামিপক্ষ সাক্ষীদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

বিচারের মুখে থাকা ৪৯ আসামির মধ্যে জামিনে রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডি’র সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।

মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন।

বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত হয় ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন।

সারাবাংলা/এজেডকে/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন