বিজ্ঞাপন

ইভিএম ব্যবহারে হঠাৎ তৎপর ইসি!

August 29, 2018 | 1:48 pm

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তুত নয়। বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের যে সময় রয়েছে এই সময়ের মধ্যে ইভিএম প্রস্তুত করা সম্ভব নয়,’— গত বছরের ১৫ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এমন কথা বলেছিলেন।

এরপরেও বিভিন্ন সভা সেমিনারে সিইসিসহ একাধিক কমিশনার বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা নেই। অথচ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আর মাত্র দুই মাস বাকি। এই অবস্থায় হঠাৎ করেই সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে তৎপর হয়ে উঠেছে ইসি। বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) ইসির কমিশন সভায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধন করে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি সংযোজন করতে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে দেড় লাখ ইভিএম কেনার জন্য একটি প্রস্তাবনা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইসি সচিব বলেন, ইভিএম ব্যবহারের আগে আরপিওতে পরিবর্তন আনতে হবে। সেজন্য ৩০ আগষ্ট ইসির কমিশন সভায় আরপিও সংশোধন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত হলে পরে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। তারপর মন্ত্রীসভায় অনুমোদনের পর তা সংসদে উত্থাপিত হবে। তবে নির্বাচনের আগে আইন পাস, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সব কিছু ঠিক থাকলে সংসদ নির্বাচনের এক তৃতীয়াংশ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব।

এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, “আমি আগে বলেছিলাম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন হবে না, হচ্ছেও না। আরপিওতে নতুন করে সংযোজন হচ্ছে। সংশোধন আর সংযোজন দুইটি ভিন্ন বিষয়।”। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধান রয়েছে। সংসদ নির্বাচনেও যাতে ইভিএম ব্যবহার করা যায় আরপিওতে তা নতুন ভাবে সংযোজন করা হচ্ছে।

ইসি সূত্র জানায়, আরপিও সংশোধনের আগেই দেড় লাখ ইভিএম কেনার জন্য ৩ হাজার ৮২৯ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় ইসি। তড়িঘড়ি করে নেয়া এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতাও যাচাই করা হয়নি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মতামতে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাছাড়া সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে ইভিএম ব্যবহার করতে ভোটারদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সে সঙ্গে ইভিএমে ভোট নেয়ার জন্যও প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল ইসির নেই। এই অবস্থায় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার এবং দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প নিয়ে সিইসিসহ পাচঁ কমিশনারের মধ্যে চরম মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। পাচঁ কমিশনারের মধ্যে দুইজন কমিশনার এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে সারাবাংলা নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেছেন, ‘সিইসি ও সচিব আমাদের অন্ধকারে রেখে অনেক কিছু করছেন। একজন কমিশনার বলেছেন, আরপিও সংশোধনের বিষয়ে তিনি “নোট অব ডিসেন্ট” দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

ইসি সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের জন্য ২ লাখ ৬৪ হাজার ইভিএম প্রয়োজন। আর ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট নিতে ১ লাখ ৩২ হাজার ইভিএম দরকার। অথচ এই মুর্হুতে বড় আসরে ইভিএম ব্যবহার করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং কারিগরি সামর্থ ইসির নেই। আর এই মুহূর্তে তিন হাজার ৮২৯ কোটি টাকার ইভিএম প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

ইসি সূত্র জানায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরপিও সংশোধন চুড়ান্ত করা হবে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে এমন ঘোষণা দিয়েছিল ইসি। সেজন্য ইসির কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বে ইসির আইন সংস্কার কমিটি গত ১২ এপ্রিল একটি প্রস্তাবনা তৈরি কমিশনে উথাপন করে। কমিশন প্রস্তাবনাটিতে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে ফেরত পাঠায়। তারপরে প্রস্তাবনাটি প্রায় আড়ালে চলে যায়।

ইসি সূত্র জানায়, গত ১৯ আগষ্ট হঠাৎ করে আরপিও সংশোধন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইসি কমিশনার কবিতা খানম। তিনি বলেন, সংসদের আগামী অধিবেশনে আরপিও সংশোধনের বিষয়টি উত্থাপিত হতে পারে। কবিতা খানমের বক্তব্যের পরদিন ২০ আগষ্ট নির্বাচন কমিশনের জরুরী বৈঠকের নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশে ২৬ আগষ্ট আরপিও সংশোধন করার বিষয়টি কমিশন সভার এক নম্বর এজেন্ডায় রাখা হয়। সিইসির বিদেশ যাওয়ার শিডিউল থাকায় এবং একজন কমিশনার ছুটিতে থাকায় ওইদিন কমিশন সভা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। আগামী ৩০ আগষ্ট কমিশন বৈঠকের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

জানা গেছে, ১৯৭২ সালে আরপিও প্রণয়নের পর এখন পর্যন্ত এটি ১১ বার সংশোধন করা হয়েছে। এসব সংশোধনীর মাধ্যমে ২০৯টি বিষয় সংযোজন বিয়োজন করা হয়। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধন আইন ২০১৩ সংসদে পাস হয়। সেখানে নির্বাচনে ব্যয়সীমা ২৫ লাখ টাকায় উন্নীত করা, যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে এবার সংশোধনীতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম), অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা, প্রার্থীর জামানত বাড়ানো, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ নেয়া সহজীকরণসহ ৩৫টি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে ইসির আইন সংস্কার কমিটি। এছাড়াও ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা নিয়েও সংশোধনী আনা হচ্ছে।

সারাবাংলা/জিএস/জেএএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন