বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের ২০১৭: গ্লাসের অর্ধেকটা খালি না ভর্তি?

December 30, 2017 | 6:16 pm

মোসতাকিম হোসেন

বিজ্ঞাপন

বছর শেষের কোন ছবিটা মনে রাখবে বাংলাদেশ? কলম্বোর শেষ বিকেলে মিরাজ-মেহেদীর জয়ের আলিঙ্গন? কার্ডিফের খোলা বারান্দায় মাশরাফি বিন মুর্তজার মুষ্টিবদ্ধ দুই হাতে অলৌকিকের উদযাপন? মিরপুরে সাকিব আল হাসানের দুই হাত মেলে উড়তে চাওয়া ডানায় সওয়ার অসি বধের স্বপ্ন? নাকি পচেফস্ট্রুম-ব্লুমফন্টেইন-পার্লে মুশফিকদের মাথা নিচু করে ফেরার একের পর এক ছবি? ব্যাপারটা অনেকটা অর্ধেক পানিভর্তি সেই গ্লাসের মতো। আপনি চাইলে গ্লাসের অর্ধেকটা ফাঁকাও দেখতে পারেন, আবার দেখতে পারেন গ্লাসের অর্ধেকটাই ভর্তি। দক্ষিণ আফ্রিকার দুঃস্বপ্নটা এক পাশে সরিয়ে রাখলে পানিভর্তি গ্লাসের ছবিটাই আপনার চোখে ভেসে ওঠার কথা।

আপনি বলতেই পারেন, আরও অনেক ছবি তো আসতেই পারে। বছরের শুরুটাই তো হয়েছিল স্মরণীয় এক জুটিতে। ওয়েলিংটনে সাকিব ও মুশফিক যা করেছেন, বাংলাদেশের হয়ে কেউই তা কখনো করতে পারেনি। টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ জুটি গড়েছেন, সাকিব আবার বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডটাও নিজের করে নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত পরাজয়ের গ্লানিতে ওই গরিমা অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। তবে প্রভাত দেখে যদি বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে, তাহলে সাকিব-মুশফিকের ওই কীর্তি তো অনেক কিছুর আভাস দিয়েছে। সাদা পোশাকে এমন রঙিন বছর বাংলাদেশ আগে কাটিয়েছে কি না সন্দেহ।

নিউজিল্যান্ডে দুইটি টেস্টেই হারতে হয়েছে, হারতে হয়েছে ভারতের বিপক্ষে হায়দরাবাদেও, তবে প্রাপ্তি সেখানেও কম ছিল না। মুশফিকের বিরুদ্ধ কন্ডিশনে ভারতের বিপক্ষে ওই সেঞ্চুরিকে বাংলাদেশের হয়ে টেস্টের সেরা ইনিংসগুলোর তালিকায় রাখতে হবে ওপরের দিকে। এরপর গলে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে শুরুটা ভালো হয়নি, তবে সব আক্ষেপ ঘোঁচানোর জন্যই যেন অপেক্ষা করছিল কলম্বো।

বিজ্ঞাপন

পি সারা ওভালেই বাংলাদেশ পেয়ে যায় অনেক দিন পর দেশের বাইরে কোনো টেস্ট জয়ের সেই উপলক্ষ। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়ে অনেক কিছুর জবাব দেওয়া হয়েছিল, বাকিটা এলো শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাদের টেস্টে হারানোর পর। সেই জয়ও উজ্জ্বল বাংলাদেশের অনেক প্রাপ্তির কুশীলব সাকিব-তামিমে। শততম টেস্টটা এর চেয়ে ভালোভাবে মনে হয় বাংলাদেশ উদযাপন করতে পারত না!

কে জানত, সাকিব-তামিম আসল উপহারটা জমিয়ে রেখেছিলেন আরও মাস পাঁচেক পরের জন্য। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দুই টেস্টের সিরিজ নিয়েই কত জলঘোলা হলো। অনেক নাটকের পর অবশেষে ১১ বছর পর বাংলাদেশে এলো অস্ট্রেলিয়া। তবে স্টিভেন স্মিথরা আসার পর এমন ‘অভ্যর্থনা’ নিশ্চয় আশা করেননি। ইংল্যান্ডের সঙ্গে তৈরি রেসিপিতেই বাংলাদেশ আরও একবার সফল, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রথম জয়ের ক্ষেত্রটা প্রস্তুত করেছেন তো স্পিনাররাই। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে ম্যাচটা তো সাকিবময়ই। প্রথম ইনিংসে পরিস্থিতির বিচারে মহামূল্যবান ফিফটির সঙ্গে দুই ইনিংস মিলে পেয়েছেন দশ উইকেট। আর দুর্দান্ত দুই ফিফটিতে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন তামিম। সাদা পোশাকে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জয়ের ছবিটাই তো সবচেয়ে জ্বলজ্বল করার কথা এই বছরে।

তবে রঙিন পোশাকেও মনে রাখার মতো মুহূর্ত এসেছে তার আগে। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ যে ‘ড্রেস রিহার্স্যাল’ করে রেখেছিল, কার্ডিফে যেন সেটিরই চূড়ান্ত মহড়া। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ইংল্যান্ডের সঙ্গে হেরে শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি বাংলাদেশের, এরপর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বৃষ্টির আশীর্বাদে হার বাঁচিয়েছে কপালগুণে। কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের ২৬৬ তাড়া করে যখন ৩৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসেছিল, অনেকেই হয়তো টিভি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এরপর যা হলো, সেটি অংশ হয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট-পুরাণের। সাকিব আর মাহমুদউল্লাহর দুইশ ছাড়ানো জুটিতে ভীষণ অসম্ভবে আস্থা রেখেছে বাংলাদেশ, পেয়েছে অবিশ্বাস্য এক জয়। পরে তো ইংল্যান্ডের একটা আনুকূল্যে উঠে গেছে সেমিফাইনালেই। প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক কোনো আসরের শেষ চারে খেলার সুখস্মৃতিটা শেষ হয়ে গেছে ওখানেই, কিন্তু সেটাই বা কম কী! এই বছর দেশের মাটিতে কোনো ওয়ানডেই খেলেনি বাংলাদেশ, কার্ডিফের ওই দিনটাই হয়ে আছে রঙিন পোশাকে সেরা স্মৃতি হয়ে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কে জানত, সবকিছু এমন ম্লান হয়ে যাবে? টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি; কোথাও এতটুকু লড়াইও করতে পারেনি বাংলাদেশ। সাকিব টেস্টে ছিলেন না, রঙিন পোশাকে ফিরেও পারেননি দলকে উদ্দীপ্ত করতে। দক্ষিণ আফ্রিকা গড়েছে রেকর্ডের পর রেকর্ড, মুশফিকের সেঞ্চুরি বা এমন এক দুই মুহূর্ত বাদ দিলে বাংলাদেশ ভুলে যেতে চাইবে সবকিছুই। ওই সিরিজের পরেই বিদায় নিয়েছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, নতুন বছরে বাংলাদেশ অপেক্ষায় নতুন অভিভাবকের।

নতুন বছর কেমন যাবে, সেটা সামনের জন্যই তোলা থাক। বাংলাদেশ দল হিসেবে তো বটেই, প্রাপ্তি খুঁজতে পারে ব্যক্তিগত নিরিখেও। সাকিব-মুশফিক গার্ডিয়ানের বর্ষসেরা টেস্ট দলে আছেন, একটা সময় তো টেস্টে দুজন এ বছরের শীর্ষ পাঁচের মধ্যেই ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তা আর ধরে রাখা যায়নি, তবে এ বছর ওয়েলিংটনের সেই শুরু থেকে প্রাপ্তি খুঁজতে পারেন দুজন। সামনে ত্রিদেশীয় সিরিজের পর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দেশের মাটিতে চ্যালেঞ্জ, এরপর আরও অনেক পরীক্ষা। সামনের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ তাই গ্লাসটা অর্ধেক ভরা দেখতেই পারে!

সারাবাংলা/ এএম

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন